নির্দোষ, তবুও মায়ের সাথে কারাবাসে ২ শিশু

প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৩, ০৯:২৭ এএম

দুই বছরের শিশু ইয়াসিন (ছদ্মনাম)। ফৌজদারি বা দেওয়ানি কোনো অপরাধ করেনি সে। এটুকু বয়সে সে অপরাধ করতেও পারে না। তার বিরুদ্ধে থানা আদালতে কোনো মামলা মোকাদ্দমাও দায়ের হয়নি। এরপরও তার ঠিকানা কারাগারের চার দেয়ালের অন্ধকার কুঠুরিতে। নির্দোষ হওয়া স্বত্ত্বেও মঙ্গলবাল (২১ মার্চ) দুপুরে সে কক্সবাজার জেলা কারাগারে মায়ের সাথে কারাবাস করছে।

শুধু ইয়াসিন নয়, অপরাধী না হয়েও বর্তমানে মায়ের সাথে কারাগারে তার ৭ মাসের দুগ্ধপোষ্য আরেক ভাইও বন্দি জীবন যাপন করছে।

ঘটনাটি ঘটেছে, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের পূর্ব ফরাজি পাড়ায়। স্বামীর অপরাধে দুগ্ধপোষ্য শিশুসহ এক প্রসূতিকে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে ঈদগাঁও থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, কারান্তরীণ নারী নাম ফরিদা ইয়াসমিন (২৫)। তিনি ওই এলাকার শাহজাহানের স্ত্রী। সোমবার (২০ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে আটকের পরদিন (মঙ্গলবার) দুপুরে গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এনিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ জানান, গত সোমবার পূর্ব ফরাজী পাড়া এলাকায় প্রতিবেশী মৃত নজীর আহমেদের ছেলে শাহজাহান ও মৃত আবু শামার ছেলে হারুন অর রশীদের মধ্যে নলকূপের পানি চলাচল নিয়ে বাকবিতন্ডা হয়। তারা উভয়ে চাচা-ভাতিজা হয়। এ সময় শাহাজাহান নামের এক যুবক হারুন অর রশীদকে (নীলকার্ড) নখ কাঁটার যন্ত্র দিয়ে আঘাত করে। হারুন অর রশীদকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা হাসপাতালে প্রেরণ করেন৷ পরে খবর পেয়ে ঈদগাঁও থানার এসআই গিয়াস উদ্দিন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে দুপুরে শাহাজাহানের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় শাহাজাহানকে না পেয়ে তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনসহ দুগ্ধজাত এক শিশু এবং ২ বছরের আরো এক শিশুকে থানায় নিয়ে আসে। পরে ভিকটিম হারুন অর রশীদের স্বজনদের থানায় ডেকে নিয়ে রহস্যজনক কারণে মামলা রেকর্ড করে আদালতে পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, স্থানীয় মেম্বারসহ আমি বসে ঘটনাটি সমাধান করার জন্য ওসিকে বার বার ফোন করি। ওসি রহস্যজনক কারণে আমার কোন অনুরোধ কর্ণপাত করেন নি। ওই মহিলা ঘটনাটির সাথে জড়িত নয় জানিয়ে তদন্ত করে মামলাটি রুজু করার অনুরোধ করা হলে সেটিও তিনি শোনেন নি।

কারান্তরীণ নারী এই ঘটনার সাথে জড়িত নয় দাবি করে স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আলম বলেন, ঘটনাটি মিমাংষা যোগ্য, পুলিশ অতিরঞ্জিত করে নিরহ স্ত্রী এবং নিষ্পাপ দুই শিশুকে ধরে এনে আদালতে সোপর্দ করেছে। এটি অমানবিক নিষ্ঠুরতা। স্বামী-পিতার দোষে নিরীহ বাচ্চাদের ধরে এনে মামলা দায়ের করাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মায়েদের সঙ্গে শিশুদের কারাগারে রাখা শিশু আইনের পরিপন্থি বলে জানিয়েছেন এ্যাডভোকেট সৈয়দ মো: রেজাউর রহমান রেজা।

তিনি বলেন, যেখানে সাজাপ্রাপ্ত শিশুকেও কারাগারের বাইরে রাখার বিধান রয়েছে সেখানে যেকোনোভাবে শিশুকে কারাগারে পাঠানো বিধিসম্মত নয়, এটি শিশু আইনের পরিপন্থি। প্রয়োজনে এমন মায়েদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জামিন দেওয়া যেতে পারে। দ্য অফেন্ডার্স প্রবেশন অর্ডিন্যান্স-১৯৬০ অনুযায়ী যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত নারীকেও কারাগারে না পাঠিয়ে প্রবেশনে মুক্তির বিধান রয়েছে। সেখানে বিচারাধীন মামলায় দুগ্ধপোষ্য শিশুসন্তানের মাকে জামিন দেওয়া অধিকতর সমীচীন।

তিনি বলেন, আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুদের কারাগারে রাখার বিধান নেই। তবে আসামি মায়ের সঙ্গে শিশুসন্তান কারাগারে থাকলে সেসব শিশুর জন্য বিশেষ সুবিধা রাখা উচিত। যাতে শিশুরা বুঝতে না পারে যে তারা বন্দি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পারে।

ঈদাগাঁও থানার এসআই গিয়াস উদ্দিন দাবী, মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শাহজাহানের স্ত্রীকে আটক করে আনা হয়েছে। পরে ভিকটিম হারুন অর রশীদের পরিবার মামলা দায়ের করলে সে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ গোলাম কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভিকটিমের পরিবার এজাহার জমা দিয়েছে। একারণে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তারা যদি নির্দোষ হয় সেই ক্ষেত্রে তদন্ত করে মামলার চার্জশিট থেকে তাদের বাদ দেওয়া হবে।

এদিকে বাচ্চাদের বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় রাখা হয়েছে। স্ত্রীসহ বাচ্চাদের ধরে এনে আদালতে সোপর্দ করার ঘটনায় ফুঁসে ওঠেছে মানবাধিকার কর্মীরা।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: