সড়কে ‘চাঁদাবাজি’, প্রতিবাদ করায় স্কুলশিক্ষার্থীকে পেটাল পুলিশ

প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৩, ০৯:৩৫ পিএম

কক্সবাজারের ঈদগাঁওতে রাতের আঁধারে সাদা পোশাকে সড়কে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় জাবের আহমদ জিসান নামের এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে ঈদগাঁও থানার ৭ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বুধবার (২২ মার্চ) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ঈদগাঁও অংশ অবরোধ করে জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবি জানায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল রাত ১০টার দিকে ঈদগাঁহ থানায় কর্মরত ৭ পুলিশ সদস্য সাদা পোশাকে স্থানীয় বাজারের ডিসি সড়কে পণ্যবাহী ট্রাক থামিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছিলেন। সে সময় ব্যস্ততম সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত এসএসসি পরীক্ষার্থী জিসান পুলিশের প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ জানায় এবং যানজটে জনভোগান্তির কথা বলে।

এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা ওই শিক্ষার্থীকে চড়-থাপ্পড় মারেন। সে নিজেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে পুলিশ সদস্যরা একজোট হয়ে তার ওপর হামলা চালায়। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন জড়ো হয়ে জিসানকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আহত জিসানের বন্ধু তৌহিদুল ইসলাম, 'স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন ঘটনাস্থল থেকে ১ পুলিশ সদস্যকে আটক করে ঈদগাঁও থানায় সোপর্দ করেছে।'

গতকালের এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ সকাল ৯টায় কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদগাঁও স্টেশন এলাকা একদল শিক্ষার্থী অবরোধ করে রাখে। সে সময় মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম কবির ঘটনাস্থলে গিয়ে জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।

ঈদগাহ আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, 'কোনো কারণ ছাড়া সাদা পোশাকে শিক্ষার্থী ও নিরীহ পথচারীদের ওপর পুলিশের হামলা জঘন্য অপরাধ। এমনটি ক্ষমতার চরম অপব্যবহারও বটে। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করেছে, তাদের শাস্তি হওয়া দরকার।'

অন্যদিকে, উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নে তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে না পেয়ে তার স্ত্রী ও দুই শিশুকে থানায় আটকিয়ে রেখে ২৫ ঘন্টা পর মালায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠে ঈদগাঁও থানার ওসির বিরুদ্ধে।

থানার হাজতে মা ও দুই শিশুকে আটকিয়ে রাখার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেলে তোলপাড় শুরু হয়। একপর্যায়ে ওসি আইনগতভাবে বাঁচার জন্য ভিকটিম হারুন অর রশীদের স্বজনদের থানায় ডেকে নিয়ে নাটকীয় কায়দায় মামলা রেকর্ড করে আদালতে প্রেরণ করেন বলেও দাবি করেন স্থানীয় চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ।

এদিকে স্ত্রীসহ বাচ্চাদের ধরে এনে আদালতে সোপর্দ করার ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে মানবাধিকারকর্মীরা। তারা বলেন, অভিযুক্তকে না পেয়ে স্ত্রী ও দুই শিশুকে থানায় ২৫ ঘণ্টার বেশি সময় আটকিয়ে রাখা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ ছাড়া মামলার পর আসামিকে গ্রেফতার করার নিয়ম থাকলেও কীভাবে আটকিয়ে রেখে মামলা করা হয় প্রশ্ন মানবাধিকারকর্মীদের।

ঈদগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ জানান, ঘটনাটি মীমাংসাযোগ্য। পুলিশ কোনো অভিযোগ ছাড়াই অতিরঞ্জিত করে নিরীহ স্ত্রী ও নিষ্পাপ দুই শিশুকে বেআইনিভাবে থানায় নিয়ে যায়। এটি অমানবিক নিষ্ঠুরতা। স্বামী বা পিতার দোষে নিরীহ বাচ্চাদের ধরে এনে মামলা করাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা বলে উল্লেখ করেন তিনি।

চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ বলেন, 'চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীর ওপর পুলিশের হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং গর্হিত অপরাধ। তারা বড় ২টি অপরাধ করেছে। প্রথমত চাঁদাবাজি, দ্বিতীয়ত শিক্ষার্থীর ওপর হামলা। জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।'

এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর, রামু ও ঈদগাঁও সার্কেল) মিজানুর রহমান বলেন, 'ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: