জেলেদের চাল নিয়ে ইউপি মেম্বারদের চালবাজি

প্রত্যেক জেলেদের জন্য ৮০ কেজি করে চাল বরাদ্দ থাকলেও সেখানে দেয়া হচ্ছে তার অর্ধেক আবার কাউকে দেয়া হচ্ছে অর্ধেকেরও কম। জেনো ‘জোর যার মুল্লুক তার’। সম্প্রতি এমন দৃশ্য মিলেছে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নে। গতকাল মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ইউনিয়ন পরিষদে দুপুর ১২ টায় ১৪৫০ জন কার্ড ধারী জেলেদের নামে বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করা হয়।
ইলিশের ঝাটকা আহরন বন্ধ ও ইলিশের উদপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল দুই মাস সমুদ্র ও নদীর বিভিন্ন স্থানে জাল ফেলে মাছ ধরা সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। সরকারি এই নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক জেলেদের প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে দুই মাসে মোট ৮০ কেজি চাল প্রদান করে মৎস অধিদপ্তর। এ ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা মোট ১৭৪৮ জন। এর মধ্যে ১৪৫০ জনের খাদ্যসহায়তার ১১৬ টন চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। তবে জেলেদের জন্য বরাদ্ধকৃত চাল দেয়া নিয়ে নানান অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে। জেলেদের সেই চাল নিয়েও নয় ছয় করছে ইউপি সদস্যরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ধুলাসার ইউনিয়নে জেলেদের জন্য ৮০ কেজি করে চাল বরাদ্ধ থাকলেও সেখানে দেয়া হচ্ছে তার অর্ধেক আবার কাউকে দেয়া হচ্ছে অর্ধেকেরও কম। যার ভিডিও চিত্র রয়েছে বিডি২৪ লাইভ'র কাছে।
বিডি২৪লাইভের প্রতিনিধির উপস্থিতি টের পেয়ে ইউপি মেম্বাররা দিশেহারা হয়ে পরেন। সঙ্গে সঙ্গে স্বিদ্বান্ত পরিবর্তন করে সবাইকে ঠিকমতো চাল দেয়া শুরু করেন। এ ঘটনার ভিডিও চিত্র সংরক্ষিত রয়েছে।
জেলে মোঃ হেলাল বিশ্বাস জানান, সে এক বস্তা চাল পেয়েছে ওজন ৫০ কেজির মতো। পাওয়ার কথা ৮০ কেজি থাকলেও কিসের জন্য সেটি পায়নি বা পরে পাবে কিনা সেটা তিনি জানেন না।
জেলে মোঃ জামাল ভূঁইয়া জানান, তাদের ছয়জনকে ৫০ কেজির ৫ বস্তা চাল দিয়ে ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুর উদ্দিন দালাল ভাগ করে নিতে বলেছে।
এবিষয়ে ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুর উদ্দিন দালাল বলেন, আমার ওয়ার্ডে কোন চাল কম দেয়া হয়নি। তিনি এ বিষয়ে আর কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি।
এদিকে ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম ও ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্যানেল চেয়ারম্যান বাহাদুর ভূইয়ার কাছে জেলেদের চাল বিতরন নিয়ে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা ক্যামেরার সামনে কোন কথা বলতে রাজি হননি। এসময় তারা সংবাদকর্মীদের বিভিন্ন ভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালায়।
চাল বিতরনের বিষয় ধুলাসার ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বলেন, আমি অসুস্থ থাকা সত্যেও সকালে পরিষদে গিয়ে ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে প্যানেল চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে চাল বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি। এরপর তারা কি করেছে আমি সে বিষয়ে কিছু জানিনা। যদি চাল নিয়ে কোন অনিয়ম হয়ে থাকে তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
চাল বিতরনের সময় মৎস অফিসের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে কলাপাড়া উপজেলা মৎস কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, চাল বিতরনের সময় ট্যাগ অফিসার ও আমাদের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকে সাধারনত। তবে আমার সংসদ সদস্য মহাদয়ের সাথে একটা প্রোগ্রাম থাকায় প্রথম অর্ধেকে আমাদের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে পারেনি। কিন্তু পরের অর্ধেকে আমাদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলো। তিনি আরো বলেন চাল বন্টন নিয়ে ট্যাগ অফিসারের সাথে আমার কথা হয়েছে তিনি আমাকে বলেছেন সব জেলেকে ৮০ কেজি করেই চাল দেয়া হয়েছে।
কাউকে চাল কম দেয়া হয়নি। তবে একজনকেও যদি চাল কম দেয়া হয় এরকম কেউ আমাদের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেবো।
সরকারি প্রতিনিধির উপস্থিতেও জেলেদের নামের ভিজিএফের চাল নিয়ে কিভাবে এতবড় অনিয়ম হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ধুলাসার ইউপিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার কলাপাড়া উপজেলা এলজিইডির ইউডিবিও আব্দুল আউয়াল আকন জানান, চাল বিতরন কোন অনিয়ম হয়নি। তবে আমি সব কিছু গুছিয়ে আপনাকে পরে বক্তব্য দেবো।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, কলাপাড়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন নিয়েই সমস্যা। চাল বিতরন নিয়ে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: