গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাই: উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখর

প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০২৩, ০৭:১৯ পিএম

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেছেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানীরা যে গণহত্যা করেছিল সে কাজটি ইতিহাসের জঘন্যতম কাজ। জঘন্যতম এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এখনো আমরা পাই নি। আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই-এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে হবে। একই সঙ্গে এই গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। এটা সময়ের দাবি।

শনিবার (২৫ মার্চ) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫২ তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কর্মসূিচতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ কি সুন্দর একটা নাম। অথচ এই সুন্দর নামের আড়ালে ইতিহাসের জঘন্যতম কাজ পাকিস্তানিরা করেছিল। তারা অপারেশন সার্চ লাইট নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালিদের গুলি করে হত্যা করেছিল হাজার হাজার মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হলে, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ঘুমন্ত মানুষের উপর তারা নির্বিচারে গুলি করে শত শত বাঙালিকে হত্যা করা শুরু করে দেয়। একাত্তরের ২৫ মার্চের রাত ইতিহাসে কাল রাত হিসেবে চিহ্নিত। ’

তিনি বলেন, ‘গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ব্যাপারে বাঙালিদের সমন্বিতভাবে দাবি উত্থাপনের সময় এসেছে। এ দাবি উত্থাপনের মধ্যদিয়ে মূলত ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগকে আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি। একাত্তর সালে যে সব মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশের জন্য জীবন দিয়েছেন এখনো যারা জীবিত আছেন তাঁদেরকে শ্রদ্ধা জানাতে হবে। এছাড়া স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী যে শক্তি, তারা যে নামেই থাকুক না কেন তাদের প্রতি আমাদের ঘৃণা জানাতে হবে। এক্ষেত্রে পিছপা হওয়ার কোন সুযোগ নাই।’

এর আগে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় কর্মসূচির সাথে সংগতি রেখে প্রথম দিন শনিবার (২৫ মার্চ) রাত ১০ টা ৩১ মিনিটে গোটা ক্যাম্পাসে ১ মিনিটের ব্লাক আউট করা হয়। এরপর ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ও চির উন্নত মম শির প্রাঙ্গণে প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়।
পরদিন রোববার (২৬ মার্চ) সকালে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতীয় সঙ্গীত সহযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও একটি বর্ণাঢ্য শোভা যাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যে গিয়ে জমায়েত হয়। পরে শহিদদের স্মরণে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য এবং চির উন্নত মম শির প্রাঙ্গণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখরের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং পায়রা অবমুক্ত করা হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, দপ্তর প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

পরে দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান এবং একটি আলোচনা সভা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কোন হঠাৎ বৃষ্টির মতো ঘটনা নয়। যুগ যুগ ধরে পরাধীন বাঙালি জাতিকে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শৈশব থেকেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি জীবনভর নিরাপোসভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে গেছেন। তাই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শে রে বাংলা একে ফজলুল হক, মাওলানা ভাষানীর নেতৃত্বকেও ছাপিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু এবং বাঙালি বঙ্গবন্ধুকে তাদের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে মান্য করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও রক্তের উত্তরাধিকার জননেত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা করে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এই অভিযাত্রায় যার যার স্থান থেকে আমাদের সবার অংশগ্রহণ করা উচিত। বাহাত্তর সালে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার যে চারটি মূলনীতি সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন সেটি প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের এখনো কাজ করতে হবে। ব্যক্তি জীবনে আদর্শের চর্চা না করে শুধু বক্তৃতা, বিবৃতি, বাগাড়ম্বর করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। জননেত্রী শেখ হাসিনার জীবন আমাদের সামনে আদর্শ হিসেবে আছে। তাঁর আত্মনিবেদন, কর্মনিষ্ঠতা অনুসরণ করে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মর্মে ধারণ করতে পারি। এটিই হোক প্রত্যয়।’

আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও বঙ্গবন্ধু নীল দলের সভাপতি অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রিয়াদ হাসান, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুসহ অন্যরা। স্বাগত বক্তব্য দেন রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব মাসুম হাওলাদার।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: