নবীগঞ্জে হঠাৎ শিলাবৃষ্টি ও কাল বৈশাখী ঝড়ে আক্রান্ত শতাধিক গ্রাম

নবীগঞ্জ উপজেলার পূর্বাঞ্চলে ৬টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে গতকাল হঠাৎ করে (২৬মার্চ) গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় তা-ব চালিয়েছে কালবৈশাখী ঝড় হয়েছে। একইসঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাত ও শিলাবৃষ্টি। ঝড়ের আঘাতে ল-ভ- হয়ে গেছে শতাধিক গ্রামের দুই শতাধিক কাঁচাপাকা ঘর-বাড়ি, শুয়ে পড়েছে বোরো ধান গাছ,শাক সবজি বাগান, ভুট্রা জমি ও সূর্য্যমুখী ফুলের বাগান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো,শাকসবজি ১০০ হেক্টর,ভুট্টা ১২৮ হেক্টর, সূর্যমুখী ৪০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ ধানের মধ্যে বিআর-২৯ ও বিআর-৫৮ জাতের ধানই বেশি।” এর মধ্যে বোরো ৫শ হেক্টর,শাকসবজি ২.৫ হেক্টর, ভুট্টা ১.২, হেক্টর ও সূর্যমুখী ০.৩ হেক্টর জমি শিলা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে। এছাড়া আক্রান্ত জমি পরিমান বোরো: ১৫-২০% শাকসবজি ১০%, ভুট্টা: ১০%, সূর্যমুখী: ৬০% হবে বলে জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রবিবার রাত ৯ টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় কাল বৈশাখীর তা-ব ও শিলাবৃষ্টিতে নবীগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের দুই শতাধিক কাঁচাপাকা ঘর-বাড়ি লন্ডভন্ড হয়েছে।
এরমধ্যে আউশকান্দি ইউনিয়নের, দেওতৈল, মিঠাপুর, রায়পুর, মিনাজপুর,উমরপুর,আজলপুর,ইসলামপুর বনগ্রাম, পাহাড়পুর, পারকুল, দক্ষিন দৌলতপুর, উলুকান্দি,উত্তর দৌলতপুর, আমুকোনা, বেতাপুর, সৈয়দপুর, আলমপুর ও মুকিমপুর দীঘলবাক ইউনিয়নের, দাউদপুর, দরবেশপুর, কারখানা, বরহমপুর, কসবা, কামারগাও, রায়ঘর, ফাদিল্লা, জামারগাওসহ ১০টি গ্রাম, ভাকৈর ইউনিয়নের, বাগাউড়া, কাজির বাজার, আগনা, কাজিরগাও, হরিনগর, ১৫টি গ্রাম, ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের, পেঙ্গের বন, বক্তারপুর, লালাপুর, মল্লিকপুর, নাদামপুর, করিমপুর, পিরিজপুর, ঘোলডুবা, বোরহানপুর, ভুমিহীন পাড়া, কৈইখাই, ১৫টি গ্রাম, কুর্শি ইউনিয়নের, ফুটারমাটি, রাইয়াপুর, কাদমা, কুর্শি, সাজলাপুর, ভুবিরবাক, ১০টি গ্রাম দেবপাড়া ইউনিয়নের ফরিদপুর, সিট ফরিদপুর, নোয়াহাটি, রুস্তমপুর, বৈঠাখাল, ধর্মনগর,বেশ কয়েকটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বেশি।
ওইসব এলাকায় অনেকের ঘরের ছাউনি গেছে উড়ে। পানিতে শুয়ে পড়েছে বোরো ধান। বেশকিছু মৌসুমী ফল আম, লিচু, কলা বাগান, সবজি বাগান গুলো দুমড়ে মুচড়ে গেছে। গাছপালা ও বিদ্যূতের খুঁটি উপড়ে পড়ে অনেক জায়গায় যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের আহাজারি করতেও দেখা গেছে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির আঙ্গিনার খোলা আকাশের নিচে।
সাদুল্লাাপুরের গ্রামের কৃষক আমির আলী জানান, ঝড়ো হাওয়ায় জমিতে জমা পানিতে ধান শুয়ে পড়েছে। তাই পেটের ভাত জোগাতে ঈদের দিন ধান কেটে মাড়াই করেছি। তা না হলে প্রতিদিন রাতে যেভাবে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হচ্ছে। শেষে এই ধানও ঘরে তুলতে পারব না।
একই উপজেলার ভাকৈর শেরপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল খালিক (৫০) জানান, ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে তার ৩ বিঘা জমির ধান গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার জোয়লভাঙ্গা হাওরের রায়পুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত দিলশাদ মিয়া মেম্বার বলেন, রবিবার রাতের তার ওয়ার্ডে কালবৈশাখীর ঝড়ের অনেক বাড়ির ঘরে ভেঙ্গে চুরামার হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে হচ্ছে।
একই উপজেলার দাউদপুর গ্রামের কৃষক তোফায়েল মিয়া (৫০) বলেন, ধান কাটার আগেই অগ্রিম কালবৈশাখী সব শেষ করে দিলো। এরই মধ্যে শিলাবৃষ্টিতে আমার তিনবিঘা জমির বেশিরভাগ ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
কৃষক কাজল মিয়া (৫৫) বলেন, শিলাবৃষ্টিতে গাছ থেকে ধান ভেঙ্গে গেছে। আমার সবজি বাগান ধুমড়ে মুছড়ে গেছে সবকিছু এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া আর সম্ভব হবে না।
কুর্শি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক জান্নাত আলী জানান, কালবৈশাখী ঝড়ের তা-বে তার লিচু ও কলা বাগান দুমড়ে মুচড়ে যাওয়ায় এ বছর উৎপাদন খরচ আর উঠবে না।
উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নোমান আহমদ জানান, ঝড়ে তার ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের অনেক পরিবারের ঘরবাড়ি ল-ভ-হয়েছে। এসব পরিবারের মানুষেরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। এবং শিলা বৃষ্টিতে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বোর ধান ও সবজি বাগানের ক্ষতি পুষিয়ে উঠা অসম্ভব।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরিয়ার বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে ও শিলা বৃষ্টিতে শতাধিক কাঁচাপাকা ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও গাছপালা উপড়ে গেছে ও বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একেএম মাকসুল আলম বলেন, “ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে জেলায় দেড় হাজার বিঘা জমির পাকা বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ ধানের মধ্যে বিআর-২৯ ও বিআর-৫৮ জাতের ধানই বেশি।” এর মধ্যে বোরো ৫শ হেক্টর,শাকসবজি ২.৫ হেক্টর, ভুট্টা ১.২ হেক্টর ও সূর্যমুখী ০.৩ হেক্টর জমি শিলা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে। এছাড়া আক্রান্ত জমি পরিমান বোরো: ১৫-২০% শাকসবজি:১০% ভুট্টা: ১০% সূর্যমুখী: ৬০% হবে বলে জানান।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: