বাগেরহাটে চুরির অপবাদে যুবককে অমানুষিক নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২৩, ০৮:৩০ পিএম

বাগেরহাটের রামপালে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চুরির অপবাদ দিয়ে শেখ আব্দুল্লাহ (২৫) নামের এক যুবককে প্রায় ২২ ঘন্টা আটকে রেখে অমানুসিক নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি স্থানীয় বাইনতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর সামনে ওই যুবকের চোখ তুলে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ফাকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে নির্যাতনের বিষয়টি কাউকে না জানানোর শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয় আব্দুল্লাকে। ঘটনাটি ঘটেছে রামপাল উপজেলার ব্রী-চাকশ্রি এলাকায়।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে ইজিবাইকযোগে বাগেরহাট আসার পথে রামপাল উপজেলার চাকশ্রি নামক স্থান থেকে জোরপূর্বক শেখ আব্দুল্লাহকে তুলে নিয়ে যায় ব্রি চাকশ্রী এলাকার শেখ হাসান আলী ও ইউপি চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর ভাগ্নে আবু সালেহসহ কয়েকজন। চুরির অপবাদ দিয়ে প্রায় ২২ ঘন্টা নির্যাতনের পরে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয় শেখ আব্দুল্লাহকে। এদিকে চারদিন পার হলেও এ ঘটনায় কোন মামলা হয়নি। তবে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় নরেচড়ে বসেছে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক।

নির্যাতনের শিকার আব্দুল্লাহ বাগেরহাট সদর উপজেলার মুনিগঞ্জ এলাকার শেখ গফুরের ছেলে। সে বর্তমানে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

নির্যাতনের শিকার আব্দুল্লাহ বলেন, পূর্ব পরিচিত হওয়ায় ব্রি চাকশ্রী এলাকার শেখ হাসান আলীকে আমি ১ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা ধার প্রদান করি। কিন্তু সে আমাকে টাকা না দিয়ে ঘোরাতে থাকে। পরবর্তীতে টাকা বাবদ শেখ হাসান আলী তার মালিকানাধীন ইজিবাইকটি আমার কাছে বিক্রি করে দেয়। প্রতিদিন দুইশ টাকা ভাড়ায় সে ইজিবাইকটি চালাতে থাকে। কিন্তু কয়েকদিন টাকা দেওয়ার পরে আর টাকা দেয় না। যার কারণে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমি ইজিবাইক নিয়ে বিক্রি করে দেই। পরবর্তীতে এই বিষয় নিয়ে আর কথা হয়নি। কিন্তু হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে ইজিবাইকযোগে রামপাল থেকে বাগেরহাট আসার পথে চাকশ্রী নামক স্থান থেকে শেখ হাসান আলী ও চেয়ারম্যানের ভাগ্নে আবু সালেহসহ কয়েকজন মিলে জোরপূর্বক আমাকে ধরে নিয়ে যায়। ব্রি চাকশ্রী এলাকায় শেখ হাসান আলী বাড়িতে নিয়ে আমাকে নির্যাতন করে। সন্ধ্যার দিকে আমার বন্ধু প্রাইভেট কার চালক আল আমিনকে চাকশ্রী আসার জন্য আমাকে দিয়ে ফোন করায়। পরে আল আমিন গেলে তাকেও বেধে রাখে হাসান ও আবু সালেহ‘রা। সারারাত আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করেছে আবুল সালেহ ও হাসানসহ কয়েকজন। বেধরকের মারপিটের সাথে শরীরে সিগারের সেকা ও আঙ্গুলের মধ্যে খেজুরের কাটা ঢুকিয়েছে। চোখ উঠিয়ে ফেলার কথা বলেছে।

আব্দুল্লাহ আরও বলেন, সারারাত এভাবে অত্যাচারের পরে দুপুরে বাইনতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর কাছে নিয়ে যায় আমাকে ও আমার বন্ধু আল আমিনকে। তিনি কোন কথা না শুনে আমাদের চোখ তুলে ফেলতে বলেন। পরে ফাকা স্ট্যাম্পে আমার এবং আমার মায়ের স্বাক্ষর রেখে এবং ৩ লক্ষ টাকার দেওয়ার স্বীকারোক্তি রেখে ছেড়ে দেয়। আমার উপর হামলাকারীদের কঠিন বিচার চাই।

শেখ আব্দুল্লাহ‘র মা খালেদা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে যেভাবে নির্যাতন করেছে তা মানুষে করে না। চেয়ারম্যানের কাছে যেয়েও কোন প্রতিকার পাইনি। আমি আমার ছেলেকে নির্যাতনের বিচার চাই।

প্রত্যক্ষদর্শী শেখ আব্দুল্লাহ‘র বন্ধু প্রাইভেটকার চালক আল আমিন বলেন, আল আমিনের ফোন পেয়ে চাকশ্রী বাজারে গেলে, হাসান ও আবু সালেহ আমাকে বেধে রাখে। সারারাত আব্দুল্লাহকে নির্যাতন করে। শুক্রবার দুপুরে আমাদের ছেড়ে দেয়।

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহ বলেছেন, তার সামনে কোন নির্যাতন হয়নি। আবু সালেহ তার ভাগ্নে নয়।

বাগেরহাট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: অসীম কুমার সমাদ্ধার বলেন, যুবক আব্দুল্লাহ‘র শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা-জখম রয়েছে। মারাক্তক ইনজুরি রয়েছে কিনা সে বিষয়ে পরিক্ষা নিরিক্ষার পর জানা যাবে।

পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক বলেন, ভিডিওটি আমরা দেখেছি। বিষয়টি তদন্ত চলছে। অপরাধীদের সনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: