যেসব কারণে রোজা ভাঙলে কাফফারা দিতে হয় না

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৯:৪৯ পিএম

রমজানের রোজা ফরজ এবং ইসলামের অন্যতম রুকন। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা খোদাভীতি অর্জন করতে পার।’ (সুরা বাকারা: ১৮৩)

রোজা ভঙ্গের এমন কিছু কারণ রয়েছে, যার ফলে কাজা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হয়। আর কিছু কারণে রোজা ভঙ্গ হলে শুধুমাত্র কাজা আবশ্যক হবে। নিচে কাফফারার প্রয়োজন নেই—এমন কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো—

১) ভুলে পানাহার ও স্ত্রী সহবাসের পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃতভাবে আবারও খেলে বা পান করলে রোজা ভেঙে যায়। কাঁচা চাল, আটার খামির বা একত্রে অনেক লবণ খেলে রোজা ভেঙে যায়। (ফতোয়ায়ে শামি, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৭৫)

২) এমন কোনো বস্তু খেলেও রোজা ভেঙে যায়, যা সাধারণত খাওয়া হয় না; যেমন—কাঠ, লোহা, কাগজ, পাথর, মাটি, কয়লা ইত্যাদি। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি, পৃষ্ঠা-২০২/১)

৩) কানে বা নাকের ছিদ্রে তরল ওষুধ দিলে রোজা ভেঙে যায়। (এমদাদুল ফতোয়া, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১২৭)

৪) দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে যদি তা থুতুর চেয়ে পরিমাণে বেশি হয় এবং কণ্ঠনালিতে চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে যায়। (শামি, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৬৭)

৫) মুখে পান দিয়ে ঘুমিয়ে গেলে এবং এ অবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে গেলে রোজা ভেঙে যাবে। (এমদাদুল ফতোয়া, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৭২)

৬) হস্তমৈথুন করলে রোজা ভেঙে যায়। (দারুল উলুম, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৪১৭)

৭) রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় কুলি কিংবা নাকে পানি দেওয়ার সময় কণ্ঠনালিতে পানি চলে গেলে রোজা ভেঙে যাবে। (আহসানুল ফতোয়া, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠ-৪৩৩)

৮) নাকের রক্ত পেটে চলে গেলে রোজা ভেঙে যাবে। (আহসানুল ফতোয়া, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৪২৯)

৯) ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা বা বমি আসার পর তা গিলে ফেলা। (ফাতহুল কাদির, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩৩৭)

উল্লেখিত কারণে রোজা ভেঙে গেলে শুধুমাত্র কাজা আদায় করা ওয়াজিব, কাফফারা দিতে হবে না।

যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হলে কাজা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব, সেগুলো হলো—

১) ইচ্ছাকৃত স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা: রমজানে রোজা রেখে দিনে স্ত্রী সহবাস করলে বীর্যপাত না হলেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর কাজা ও কাফফারা ওয়াজিব হবে। এস সম্পর্কে হাদিসে আছে, এক ব্যক্তি রাসুল (স.)-এর নিকট এসে বলল, আমি রোজা অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করেছি। রাসুল (স.) তাকে কাফফারা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি: ৬৭০৯; তিরমিজি: ৭২৪)

২) ইচ্ছাকৃত পানাহার করা: রোজা রেখে স্বাভাবিক অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে কাজা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি। হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি রমজানে রোজা রেখে (ইচ্ছাকৃতভাবে) পানাহার করল। তখন রাসুলুল্লাহ (স.) তাকে একটি দাস মুক্ত করা বা দুই মাস রোজা রাখা বা ৬০ জন মিসকিনকে খাবার দেওয়ার আদেশ করলেন। (সুনানে দারাকুতনি: ২/১৯১)

ইমাম জুহরি (রহ.) বলেন, ‘রমজানে রোজা রেখে ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে এর বিধান ইচ্ছাকৃতভাবে দিনে সহবাসকারীর বিধানের মতো হবে।’ অর্থাৎ তাকে কাজা ও কাফফারা উভয়টি আদায় করতে হবে। (মাবসুত, পৃষ্ঠা-৩/৭৩; আলবাহরুর রায়েক: ২/২৭৬)

৩) ধূমপান করা: বিড়ি-সিগারেট, হুক্কা পান করলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাজা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি হবে। (রদ্দুল মুহতার, পৃষ্ঠা-৩/৩৮৫)

৪) সুবহে সাদিক শেষ হওয়ার পরে আহার: সুবহে সাদিক হয়ে গেছে জানার পরও আজান শোনা যায়নি বা এখনো ভালোভাবে আলো ছড়ায়নি—এ ধরনের ভিত্তিহীন অজুহাতে খানাপিনা করলে বা স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত থাকলে কাজা-কাফফারা উভয়ই জরুরি হবে। (সুরা বাকারা: ১৮৭; মারেফুল কোরআন, পৃষ্ঠা-১/৪৫৪-৪৫৫)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রোজার সকল মাসায়েল জানার, বুঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: