ফেনী নদীতে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৬:৪৫ পিএম

মিরসরাই করেরহাট এলাকায় বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় ইজারাদার ও অবৈধ দখলদারদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিগত প্রায় দেড় বছর যাবৎ এলাকাটিতে বালু উত্তোলন নিয়ে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে হামলা মামলার ঘটনা ঘটেছে।হামলায় ইজাদারদের ও দখলদারদের উভয় পক্ষের সমর্থিত লোকজন আহত হয়। এ ঘটনায় প্রশাসনের নিকট হতে তেমন কোন জোরাল ভূমিকা গ্রহন করা হয় নি বলে বার বার অভিযোগ করে আসছেন স্থানীয়দের।স্থায়ী ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে কেউই জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।এতে নদীর পাশ্ববর্তী সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের জীবন অতিবাহিত হচ্চে ভয় ও আতঙ্কে।

২০২২ সালের প্রথমেই অবৈধ বালু উত্তোলন শুরু হয়।বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে প্রথম সংঘাত সৃষ্টি হয় ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল চৌধুরী এবং করেরহাটের আওয়ামী লীগ নেতা কামরুলের মধ্যে।

এ বিষয়ে সোহেল চৌধুরী জানান'স্থানীয় মেম্বার আনোয়ার হোসেন পলাশ সহ এলাকাবাসী অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে আমার নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দেয়। তখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী সহযোগীতায় থানা প্রশাসন একটি কাটার ও একটি বোট জব্দ করে।পরবর্তীতে কামরুলের লোকজন আমাদের উপর হামলা চালায়।

এ বিষয়ে ছাগলনাইয়া থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শহিদুল ইসলাম বোট ও কাটার জব্দের ঘটনা স্বীকার করেন এবং পরবর্তীতে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহনে আশ্বস্ত করেন।

২০২২ সালের অক্টোবরে ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপনের লোকজনের সাথে বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র ও করেরহাটের আওয়ামী লীগের নেতা কামরুলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায়।তখন রিপন চেয়ারম্যান ঢাকায় অবস্থান করেন। এ ঘটনায় বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকন, অশোক সেন, কামরুল সহ ২২ জনের নামে মামলা করা হয়।মামলার বাদী হন মুজিবুল হক রিপনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রত্যয় ট্রেডাসের ম্যানেজার নুরুল আলম। তারা মামলার এজহারে উল্লেখ করেন করেরহাটের আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলাম ও মেয়র রেজাউল করিমের নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জন সন্ত্রাসী এসে তাদের ইজারাকৃত জায়গার বোট,তেল ও যাবতীয় যন্ত্রপাতিতে হামলা চালান। এতে তাদের প্রায় সাত লক্ষ টাকার মালামালের ক্ষতিসাধন হয়। তবে পরবর্তীতে স্থানীয় ফেনী দুই আসনের সংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের তত্ত্বাবধানে মামলাটি নিষ্পত্তি হয় এবং উভয় গ্রুপের সংঘাত দূর হয়।

২০২৩ সালের শুরুতে কোন ধরনের সংঘাত না হলেও রমজানের এক সপ্তাহ আগ থেকে পুনরায় নিয়মিত গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সোমবার(২৭ মার্চ)১৫ থেকে ২০জন অজ্ঞাত অস্ত্রধারী বালু উত্তলোনের স্থলে ফাঁকা গুলি ছুড়েন। এতে হতাহতের ঘটনা না হলেও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।পরবর্তীতে পাশেই বিজিবি ক্যাম্প হওয়ায় তাদের ধাওয়ায় পালিয়ে যায়।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীপাড়স্থ বসবাসরত সাধারণ মানুষ জড়ো হয়ে কয়েকদফা মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন উল্লেখযোগ্য জোসনা বেগম (৬০), অহিদের নবী (৬২), ছায়েরা খাতুন (৫০), জসিম উদ্দিন (৪২) ও নুর উদ্দিন (৪৬) সহ একাধিক ভুক্তভোগী তাদের বক্তব্যে জানান প্রায় দেড় বছর যাবত ফেনী নদীর শুভপুর অংশে বালি উত্তোলন চলছে। লিজকৃত জায়গা ছাড়াও অবৈধ স্থান হতে বালু উত্তোলন হচ্চে। এতে করে নদীর পাড় ভেঙ্গে কৃষি জমির মাটি ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে।

একসময় তারা একজন উৎপাদন করত দশজনে সেখান থেকে ক্রয় করে খেত, বর্তমানে তাদের সেই জায়গা ভাঙ্গতে শুরু করেছে এ ঘটনা তারা একাধিকবার প্রশাসনকে অবহিত করলেও গরীর এবং ছিন্নমূল হওয়ার কারণে তাদের প্রতি কোন ভুক্ষেপ করেনি প্রশাসন এমনটাই দাবি জানান স্থানীয় ভুক্তভোগীরা।

বালু উত্তোলনে ফেনী নদীর চট্টগ্রাম অংশ বেশ অনেক আগে দুই ভাগে ইজারা দেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। মিরসরাই উপজেলার অলিনগরের মোল্লাঘাট ইজারা নেয় আবুল হোসেন এন্টারপ্রাইজ। অন্যদিকে করেরহাটের জালিয়াঘাট ইজারা নেন করেরহাট আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান গিয়াস উদ্দিন। ইজারা নিয়ে তারা নদী ছাড়াও ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন ফসলি ও সরকারি জমি থেকে বালু তুলে নেয় বলে অভিযোগ ওঠে, যা নিয়ে ইজারাদারদের সঙ্গে ছাগলনাইয়ার একটি পক্ষের বিরোধ চলছিল।

এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলাম কে মুঠোফোনে কল করলে তিনি জানান' তার কোন অস্ত্রধারী ক্যাডার নেই।তবে যে বা যারা তার নামে এ সকল কথা বলচে তারা ভুল বলচে এবং মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। দলীয় গ্রুপি হতে এই অপপ্রচার কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কামরুল বলেন' দলীয় ভাবে আমি চেয়ারম্যান ইলেকশন করতে চাওয়ার পর হতে আমার পিছনে লেগেছে কিছু দলে অনুপ্রবেশকারী।তবে প্রকাশ বিরোধিতায় কেউ নেই।'

চলতি বছরের সোমবার( ২৭ মার্চ) অস্ত্রধারীদের ধাওয়ার বিষয়ে অলিনগর বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার সহিদুল ইসলাম জানান, তাদের ধাওয়া খেয়ে অস্ত্রধারীরা পালিয়ে যায়। তবে তিনি কোনো সন্ত্রাসীকে শনাক্ত করতে পারেননি বলে জানান।

তবে বারবার ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরেও বালু উত্তোলন বন্ধ না হওয়ার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ছাগলনাইয়া ইউএনও মৌমিতা দাস। তিনি জানান' একাধিকবার অভিযান পরিচালনা পরেও বালু উত্তোলনকারীদের ধমন করতে পারেননি। অভিযান চলাকালীন সময়ে তারা বোট,কাটার নিয়ে পালিয়ে যায়। অভিযান থেকে ফিরে আসার প্রায় এক থেকে দেড় ঘন্টা পরে তারা আবার এসে বালু উত্তোলন করেন কখনো কখনো অধিক মানুষ দেখলে ফাঁকা গুলি ছুড়েন।

ছাগলনাইয়া থানার ওসি সুদীপ রায় পলাশ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। তবে ঘটনাটি মিরসরাইয়ের করেরহাট অংশে হওয়ায় ছাগলনাইয়া থানা পুলিশের এখতিয়ারে ছিল না। তাই তারা কোনো অ্যাকশনে যেতে পারেননি। তবে অস্ত্রধারীরা বিজিবির ধাওয়া খেয়ে ছাগলনাইয়ার শুভপুরে পালিয়ে যায় বলে যে অভিযোগ এসেছে, এর সত্যতা পেলে সন্ত্রাসীদের আটকে অভিযান চালানো হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: