সৌদিতে ওমরাহ করতে গিয়ে নিহত আসিফ-শেফায়েত, বাড়িতে শোকের মাতম

প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২৩, ১১:৪৩ পিএম

পরিবারের সুখের আসায় মাত্র ছয় মাস আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন। কাজ করতেন একটি হোটেলে। ১২ দিনের ছুটি পেয়ে অন্যদের সঙ্গে ওমরাহ করতে যান কক্সবাজারের মহেশখালীর নতুন বাজার গ্রামের মোহাম্মদ আসিফ (২২)। কিন্তু পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনিসহ ২৪ জন নিহত হন।

নিহত ২২ জনের মধ্যে ১৩ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে কক্সবাজারের রয়েছেন তিনজন। তার মধ্যে দুজনের বাড়ি মহেশখালীর বড় মহেশখালী ইউনিয়নে। অপরজনের বাড়ি রামু উপজেলায়।

এদিকে মৃত্যুর খবর পেয়ে একই ইউনিয়নের বড় ডেইল গ্রামের নুরুল ইসলামের পুত্র মোহাম্মদ শেফায়েত উল্লাহ (২৪) এর বাড়িতে চলছে মাতম। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ। কেউ কেউ তাঁদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে শেফায়েতের বাড়িতে গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে।

জানা গেছে, এখন নিহতদের বাড়ি সহ গ্রাম জুড়ে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের স্বজনরা চান, দ্রুত তাদের মরদেহ যেন দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

সৌদি আরবের মক্কা নগরীর দক্ষিণ-পশ্চিমে মাহাইল এলাকায় বাস দুর্ঘটনা ঘটে। এতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৩ বাংলাদেশি সহ ২৪ জন নিহত হয়েছে। নিহত বাংলাদেশির মধ্যে ৩ জন কক্সবাজারের বাসিন্দা।

বৃহস্পতিবার সকালে বড় মহেশখালীর নতুন বাজার গ্রামের গিয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি মোহাম্মদ আসিফের পিতা আহমদ উল্লাহর সাথে। তিনি কাঁন্নায় নির্বাক হয়ে রয়েছেন।

তবে কথা হয়, মোহাম্মদ আসিফের চাচাত ভাই সরওয়ার আলমের সাথে। তিনি জানান, পরিবারিক টানাপোড়নের কারণে ২ বছর ৪ মাস আগে সৌদি আবর যান। ২ ভাই ২ বোনের মধ্যে আয় করার ক্ষমতা ছিল কেবল আসিফের। ঋণ নিয়ে সৌদি আবর যাওয়ার পর ঋণ পরিশোধ করে সংসারে কিছুটা স্বচ্ছতা আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যে বাস উল্টে আগুন লেগে মোহাম্মদ আসিফ মারা যাওয়ার খবর পিতা-মাতা সহ সকলেই শোকাহত।

আসিফের মামা হাফেজ মতিউর রহমান জানান, আসিফের নিহতের খবর জানার পর তার বাবা-মাকে জানানো হয়নি। অনেক পরে জানানো হলেও একই কেউ কথা বলতে পারছেন না। বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে মরদেহ দেশে আনতে সরকারের সহযোগি চেয়েছেন তিনি।

পাশা-পাশি গ্রামের মোহাম্মদ শেফায়েত উল্লাহও নিহতের একজন। শেফায়েতের পিতা নুরুল ইসলাম জানান, আসিফ আর শেফায়েত ওই বাসে ওমরাহ করতে যাচ্ছিলেন এ খবর তাদের জানা ছিল। ওখানে শেফায়েতের মৃত্যু বিষয়টি পরিবারেরর কাছে জানিয়েছেন সৌদি আরবে থাকা অপর দুই ছেলে।

শেফায়েতের বড় ভাই জাহেদুল ইসলাম জানান, তার অপর ২ ভাই সাইফুল ইসলাম, শাহজাহান ইসলাম শেফায়েতের মৃত্যু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে শেফায়েতের নাম শেফায়েত উল্লাহ না শেফায়েত ইসলাম বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, যা হবার হয়েছে মরদেহ যেন দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াছিন জানিয়েছেন, সৌদি আরবে সড়ক দূর্ঘটনায় মহেশখালীর দুই জন নিহত হবার বিষয়টি স্থানীয়ভাবে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর থেকে এখনো জানানো হয়নি।

এদিকে, এ দূর্ঘটনায় কক্সবাজারের মোহাম্মদ হোসেন নামের আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি রামু উপজেলার রাজারকূল ইউনিয়নের ফরেস্ট অফিস এলাকার বাসিন্দা বলে স্থানীয়ভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় বা অন্য কোন দপ্তর থেকে এখনও কোন কাগজ পত্র পাননি। মহেশখালী ২ জন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিহতের বাড়িতে গিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছেন। অপরজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। বিস্তারিত তথ্য নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: