চিকিৎসকের ভুল অপারেশনে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বৃদ্ধ

প্রকাশিত: ৩১ মার্চ ২০২৩, ১০:৩০ পিএম

চিকিৎসকের ভুল অপারেশনে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বাওট গ্রামের বৃদ্ধ কুদ্দুস আলী (৭০)। ভুল অপারেশনের পর কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দু’দফা অপারেশন করানোর পর কিছুটা সুস্থ্য হলেও চিকিৎসার অর্থ জোগাতে পারছে না বৃদ্ধের দরিদ্র ছেলেরা। ফলে বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন এই বৃদ্ধ।

কুদ্দুস আলীর বড় ছেলে জামাল উদ্দীন জানান, বাবার পেটে যন্ত্রণা দেখা দিলে স্থানীয় বামন্দী বাজারের একটি ক্লিনিকে দেখানো হয়। পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে অ্যাপেন্ডেসাইটিস রোগে আক্রান্ত এবং অপারেশনের পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ি ২ মার্চ মেহেরপুর শহরের মল্লিকপাড়া মসজিদের পাশে অবস্থিত ‘মেহেরপুর ক্লিনিকে’ ভর্তি করা হয়। ওই দিন সার্জন মিজানুর রহমান অপারেশন করেন। যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ বৃদ্ধ কুদ্দুস অপারেশনের পর স্বস্থিবোধের বিপরীতে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার প্রস্রাব পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়। অ্যাপেন্ডেসাইটিস অপারেশনস্থল দিয়ে মল বের হতে থাকে। উন্নত চিকিৎসার কথা বলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে ৫ মার্চ বৃদ্ধকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এমরান আহমেদ ভুল অপারেশনের বিষয়টি বুঝতে পারেন এবং জানানো হয় যে অ্যাপেনডিসাইটিস অপারেশন করতে গিয়ে ভুলে তার মলদ্বারের পথ কেটে ফেলা হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে ৭ মার্চ কুষ্টিয়া মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে দুই দফা অপারেশন করা হয় বৃদ্ধ কুদ্দুস আলীর। অপারেশনের পর তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও টাকার অভাবে হাসপাতালে রাখা সম্ভব হয়নি। আরও কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসার কথা বলা হলেও অসহায় পরিবার তাকে নিয়ে বাড়িতে চলে যায়। এখন বিনা চিকিৎসায় বাড়ির বারান্দায় শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন তিনি।

কুদ্দুস আলীর মেয়ে শিউলী খাতুন জানান, বাবার টাকা ছিল না অপারেশনের। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে অপারেশন করা হয়। এমন কোন সম্পদ নেই যা বিক্রি করে তার চিকিৎসা করাবেন। মেহেরপুর ক্লিনিকের ডাক্তার মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কোন জবাব মেলেনি। এখন বাবা কুদ্দুস আলী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন কিকিৎসার অভাবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আনজিরা খাতুন জানান, এখন জেলাতে প্রায়ই শোনা যায় যে, ডাক্তারের ভুল অপারেশনে রোগির মৃত্যু হয়। কুদ্দুস আলীর এমন কোন সম্পদ নেই যে, উন্নতমানের হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন। সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক ও ডাক্তারের উচিৎ ওই বৃদ্ধের পাশে দাড়ানো। সেই সাথে অদক্ষ ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করানো থেকে বিরত থাকার পরামর্শও দেন এই জনপ্রতিনিধি।

এদিকে ভুল চিকিৎসায় মরতে বসা কুদ্দুস আলীর পক্ষে তার পরিবার ঘটনার বিচার চেয়ে মেহেরপুর সিভিল সার্জনের বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে ঘটনার তদন্ত করে ডিজি অফিসে প্রতিবেদন দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই বলে জানালেন সিভিল সার্জন জওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী।

এদিকে অপারেশনের জটিলতায় ইনফেকশন হয়েছে স্বীকার করে ক্ষতিগ্রস্থ রোগীর চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতির কথা জানালেন অ্যাপেনডিক্স অপারেশনকারী চিকিৎসক মিজানুর রহমান।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: