রোজাদারদের বিনামূল্যে ইফতার খাওয়াচ্ছে ঈশ্বরদীর দুই প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৪১ পিএম

পবিত্র রমজান মাসব্যাপী রোজাদারদের বিনামূল্যে ইফতার খাইয়ে চলেছেন ঈশ্বরদী বাজারের দুই প্রতিষ্ঠান। আল্লাহর কৃপা লাভের আশায় রোজাদারদের ইফতার খাওয়ানোর মাধ্যমে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছেন বলে জানান ঈশ্বরদীর দুই হোটেল মালিক। ফ্রী তে ইফতার করানো ওই দুই প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ঈশ্বরদী বাজারে বৈকালী সুইটমিট এবং আল-আমিন সুইটস ও রেষ্টুরেন্ট। রমজানের শুরুতে দুই প্রতিষ্ঠান মিলে দুইশত জনের ও বেশি মানুষ এসে ইফতার করেন বলে জানা যায়।

পরবর্তী সময়ে এ সংখ্যা তিনশ গিয়ে পৌঁছে।কয়েক বছর ধরে বিনামূল্যে ইফতার খাওয়ানোর জন্য বৈকালী সুইটমিট পাবনা জেলায় বেশ পরিচিতি লাভ করেছে; প্রায় কয়েক বছর থেকে এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষই বৈকালী সুইটমিটের স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব খাইরুল ইসলাম ফকিরের উদ্যোগের প্রশংসা করছেন। জানা যায়, রোজাদারদের আপ্যায়নে তারা ঈশ্বরদীতে প্রথম এই পদ্ধতি চালু করে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দোকানের প্রবেশ মুখে অসহায় ও নিম্ন শ্রেনীর মানুষদের ফ্রী তে ইফতার সামগ্রী পার্সেল করে দিচ্ছেন, ইফতারের আগে ৩০-৩৫ জন মানুষ চেয়ারে বসে রয়েছেন। এর মধ্যে এলাকার হতদরিদ্র মানুষ, ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী, যানবাহনকর্মী, ট্রাফিক পুলিশ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অনেক শ্রেনীর মানুষ।

ইফতারের সময় যত কমতে থাকে, মানুষের আগমনও বাড়তে থাকে। এদিনের ইফতারে পানি, খেজুর, আপেল, পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ, মুড়ি, মিষ্টি, জিলাপিসহ কয়েকটি আইটেম দিতে দেখা যায়। ইফতারের আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আনোয়ার হোসেন জানান, আমি ঈশ্বরদীতে কর্মরত শুরু থেকে দেখছি বৈকালী সুইটমিট এ সকল শ্রেনীর মানুষের জন্য ইফতার খাওয়ানো হয়। দীর্ঘ তিন বছর ধরে আমি এখানে কর্মরত আছি,চাকরির শুরু পূর্বে থেকেই আমি এখানে ইফতার করি, এখানে ইফতার করতে পেরে আমি আনন্দ অনুভব করি।

এখানে সবাই সমান, সকল শ্রেনীর মানুষ একই জায়গায় বসে ইফতার করি।নানান জায়গার মানুষ এখানে আসেন, সকলে একত্রিত হয়ে এর থেকে আনন্দের কিছু হতে পারেনা।তারা মেহমানদের খুব যত্নসহকারে আপ্যায়ন করেন। একজন গাড়ি চালক জানান, বাজারে থাকলে এই বৈকালীতেই ফ্রিতে ইফতার করি। আমার মতো আরও অনেকে এখানে ইফতার সারেন। একজন বয়স্ক মানুষ বলেন, ‘জানি, এখানে এলে ইফতার পাবো। তাই প্রতিদিন বিকালে এখানে আসি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, এখান থেকে ইফতার পাওয়ার পর সেটা বাড়িতে নিয়ে পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করি। এখানে অনেক সামর্থ্যহীন মানুষ এসে ইফতার নিয়ে যায়। তাই রমজান এলেই এই হোটেলে আসি, এখানে আসলে ফ্রী ইফতার পাওয়া যায়। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি। এদিকে আল-আমিন সুইটস এ ইফতার নিতে আসা এক ব্যক্তি জানান, এ বছর থেকে শুরু হয়েছে এখানে ফ্রী ইফতার করানো। তাদের সাধ্যমত বিরানী থেকে শুরু করে নানান বাহারী রকমের ইফতার খাওয়ান। সকল শ্রেনীর মানুষ এখানে আসলেই ইফতার পান। আলহামদুলিল্লাহ তারা মানুষের জন্য কিছু করতে পারছেন বলে এ মহতি উদ্যোগ কে আমরা স্বাগত জানায়।

এ ব্যাপারে বৈকালী সুইটমিট এর স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব খাইরুল ইসলাম ফকির বলেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগ থেকে রোজাদার মেহমানদের জন্য ইফতার খাওয়ানো হয়। ‘বছরে ১১ মাস ব্যবসা করে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোই থাকি। আমার বাবা দাদারা ব্যক্তিগত উদ্যোগ থেকে আগে মানুষকে ইফতার করাতেন। বাবার মুখে ছোট বেলায় গল্প শুনতাম, তাদের থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েই আত্মতৃপ্তির জন্য রমজানে বিনামূল্যে ইফতার খাওয়ানোর আয়োজন করেছি। গত ৬ বছর ধরে রোজাদারদের সেবা করে যাচ্ছি। এটুকু সেবা করতে পেরে আমি ভাগ্যবান মনে করি।

আল-আমিন সুইটস এর স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, আমি এ বছর থেকে রোজাদার মেহমানদের জন্য ফ্রী তে ইফতার খাওয়ানো শুরু করেছি।সৌদিতে গিয়ে আমি দেখেছি, তারা কিভাবে রোজাদারদের সেবা করে থাকেন, সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়ে আমার সামর্থ্য অনুযায়ী ইসলামের সেবা করে যাচ্ছি।আল্লাহ যতদিন আমাকে সামর্থ্য দিবেন আমি সেবা করে যাবো।মেহমানদের সেবা করতে পেরে আমি খুব খুশি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: