আমানতের ১০৫ কোটি টাকা ফেরত পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

প্রকাশিত: ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৪৯ পিএম

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অবৈধ ও অনিবন্ধিত ভুয়া এনজিও মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থায় থাকা ৩৫ হাজার গ্রাহকের আমানতের ১০৫ কোটি টাকা ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এসময় টাকা ফেরত পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন, এনজিও'র বিভিন্ন শাখার কর্মচারী ও ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। রবিবার (২ এপ্রিল) বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এই মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধনে মধুমতি এনজিও'র শিবগঞ্জ উপজেলার ছত্রাজিতপুর শাখার কর্মচারী পলি বেগম বলেন, আমি মধুমতির অফিসে রান্নার কাজ করতাম। সেখান থেকে পাওয়া বেতনের টাকাগুলো উঠাতাম না। পরিবারের ছেলেমেয়েকে লেখাপড়ার খরচ জোগাতে ও সংসারে কাজে লাগাতে টাকাগুলো জমা রেখেছিলাম। জমা হয়ে মোট ৬৫ হাজার টাকা হয়েছিল। শত কষ্টের মধ্যেও টাকা উত্তোলন করিনি। কিন্তু সেই টাকাও এখন পাচ্ছি না।

সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়নপুর গ্রামের স্নাতক পড়ুয়া লতিফা খাতুন বলেন, আমার কোন ভাই নাই। বাবার উপার্জনের ৬ লাখ টাকা মধুমতি এনজিও-তে জমা রেখেছিলাম। কিন্তু বাবা অসুস্থ হওয়ার পরেও এখন চিকিৎসা করার জন্য টাকা উত্তোলন করতে পারছি না। বারবার এনজিও অফিসে ঘুরেও দিব দিচ্ছি বলে না দেয়ার পায়তারা করছে। টাকার জন্য এখন অসহায় দিন যাপন করছি।

সদর উপজেলার কালিনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নাইমুল হক বলেন, মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা জেলাজুড়ে ৪৬টি শাখায় অবৈধ ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সাধারণ জনগণকে এক লাখ টাকা জমা রাখলে মাসে ১২০০ টাকা লাভ দেয়া হবে এবং জমাকৃত টাকা চাওয়া মাত্র ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে মধুমতি৷ এভাবে জেলার পাঁচ উপজেলায় ৩৫ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ১০৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। আজকাল করে টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে সময় পার করে এবং টাকা না দিতে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ রানা স্বেচ্ছায় অস্ত্রসহ আটকের নাটক করে৷

এমডি মাসুদ রানা স্বেচ্ছায় জেলে থাকলেও জামিনে মুক্তি চান না দাবি করে ভুক্তভোগী শামীম আলী বলেন, আটকের পর থেকে জেল থেকে প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তার আটকের পর থেকেই প্রতিষ্ঠানের পুরো লেনদেন এবং দৈনিক হিসাব-নিকাশের অনলাইন সার্ভার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গত ৫ মাস থেকে লাভ প্রদানসহ আমানতের টাকা ফেরত দেয়া বন্ধ রয়েছে। অথচ জনগণের টাকা নিয়ে মাসুদ রানা ও তার পরিবারের স্বজনরা টাকার পাহাড় গড়েছে। তার আটকের পর থেকেই পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছে। জেলার বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্ল্যাট-বাড়িসহ সম্পদ গড়েছেন।

টাকা হারিয়ে ৭ জন গ্রাহকের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, মাসুদ রানা আটকের পর মধুমতি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মাসুদ রানার স্ত্রী মোসা. মাহমুদা খাতুন পলাতক রয়েছেন। সেই সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে মধুমতির অর্থ, গাড়ী ও কলকারখানার মেশিন। এমডি আটকের পর সকল দায়-দায়িত্ব চেয়ারম্যান মাহমুদা খাতুন এবং মাসুদ রানার ভাই ও মধুমতির ফ্যাক্টরি পরিচালক ফারুক হোসেনের নেয়ার কথা থাকলেও তারা গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতে লিপ্ত হয়েছে৷ এনিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ, আদালতে গ্রাহকরা কয়েকটি মামলা দায়ের করলেও কোন সুরাহা হয়নি। এছাড়াও গত ০৯ মার্চ শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে একটি মানববন্ধন করে ইউএনও মহোদয়কে অভিযোগ দিলেও কোন সমাধান পায়নি। এনিয়ে ভুক্তভোগী ৩৫ হাজার পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট তার হস্তক্ষেপ কামনা করি এবং আমাদের টাকা ফেরতের দাবি জানায়।

মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। এসময় আরও উপস্থিত গ্রাহক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দেলশাদ আলী, নইমুদ্দিন, সলেহা বেগম, আকলিমা বেগমসহ প্রায় হাজারের অধিক গ্রাহক।

এবিষয়ে জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি-এমআরএ'র অনুমোদন ছাড়া কোন ধরনের ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম পরিচালনা অবৈধ। মধুমতির বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালতে মামলা চলমান আছে। আমরা তার সকল সম্পদ পর্যালোচনা করে গ্রাহকদের জামানতের অর্থ ফেরত দেয়ার চেষ্টা করছি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: