প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে বাবা-মায়ের পা ধোয়া কার্যক্রম

প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী লিজা খাতুন তার মা সুমি খাতুনের পাঁ (চরণ) ধুয়ে খুবই খুশি। এখন থেকে সুযোগ পেলেই বাড়িতেও এই কাজটি করবে। আর মা সুমি খাতুন খুশি হয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই আয়োজনে। তাদের এই আয়োজন ছোট থেকেই বাচ্চাদের নৈতিক শিক্ষায় বড় করবে। বাবা-মাকে ভক্তি করা শেখানো হচ্ছে। এগুলোই একজন সন্তানের নিকট বাবা-মায়ের প্রত্যাশা করেন।
আরেক শিক্ষার্থী অর্ণব মালীর মা কামনা মালীর প্রত্যাশা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই আয়োজন যেন দীর্ঘস্থায়ী হয়। প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু হলেও ছড়িয়ে যায় সব শ্রেণীতে। যা তাদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে সহায়তা করবে। তারাও বাড়িতে বাচ্চাদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার দুধরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ১৯ মার্চ থেকে এই কার্যক্রম শুরু করেছেন। তারা অভিভাবকদের পাঁ ধুয়ার পাশাপাশি তাদের ভক্তি-শ্রদ্ধা করা, শিশুদের মিথ্যা কথা না বলা ও দূর্নীতিকে না বলতে শেখাচ্ছেন। আশা করছেন আরো নানা নৈতিক শিক্ষা দেবেন বাচ্চাদের। প্রতি বৃহস্পতিবার চলছে তাদের এই কর্যক্রম।
দুধরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থানীয় শিক্ষানুরাগী মরহুম ভোলানাথ বিশ^াস এর দান করা ৩৩ শতক জমির উপর ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে বিদ্যালয়টি একটি দ্বিতল ভবন রয়েছে। ২০১৩ সারে এটি জাতীয়করণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে ২০৮ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে, আর ৬ জন শিক্ষক রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে কথা বললে প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন বিশ্বাস জানান, তাদের এলাকার শিক্ষানুরাগী সহিদুল ইসলাম নানা ভাবেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বাড়াতে সহযোগিতা করে থাকেন। মার্চ মাসের প্রথম দিকে তিনি পরামর্শ করেন মানুষের মাঝ থেকে নৈতিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। এই নৈতিকতা ফেরাতে হলে বাচ্চাদের নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। তিনি বিদ্যালয়ের বাচ্চাদের কিভাবে নৈতিক শিক্ষা দেওয়া যায় তা নিয়ে পরামর্শ করেন। পরে তারা সিদ্ধান্ত নেন বিদ্যালয়ের বাচ্চাদের কিছু নৈতিক কর্মকান্ডে অংশ গ্রহন করাতে হবে। এ জন্য সহিদুল ইসলাম কিছু উপহারের ব্যবস্থা করেন। তার সেই পরিকল্পনা থেকে গত মাসের ১৯ তারিখ থেকে তারা বাচ্চাদের নৈতিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছেন।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ ওয়ালিয়ার রহমান জানান, প্রথম দিনে তারা প্রথম শ্রেণীর শিশুদের এই কাজে অংশ গ্রহন করান। ওই দিন বিদ্যালয়ে জমিদাতার স্মরনে একটি অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানের পাশাপাশি অভিভাবকদের খবর দেওয়া হয়েছিল তাদের নিয়ে পৃথক আয়োজন রয়েছে। তিনি জানান, প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আছে ৩৫ জন, ওই দিন অভিভাবক হাজির ছিলেন ১৭ জন। এই ১৭ জন এর বাচ্চারা তাদের বাবা-মায়ের পাঁ ধুয়ে দেন। এ সময় তাদের শেখানো হয় কিভাবে বাবা-মা ভক্তি শ্রদ্ধা করতে হয়। কখনও মিথ্যা কথা বলা যাবে না, মিথ্যা বললে কি হয়। কখনও দূর্নীতি করা যাবে না, দূর্নীতি করলে তা সমাজকে কতটা ক্ষতি করে। এভাবে তারা গত তিনটি বৃহস্পতিবার এই কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
ওয়ালিয়ার রহমান আরো জানান, প্রথম পর্যায়ে প্রথম শ্রেণীর শিশুদের দিয়ে এই কাজটি তারা শুরু করেছেন। পর্যায়ক্রমে সব শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা এটা করবে তারা প্রত্যাশা করেন। ইতিমধ্যে বাচ্চারা তাদের জানিয়েছেন তারাও এই কাজ করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দিয়ে এই কার্যক্রম পরিচালনার কারনে বাচ্চারা যেমন নৈতিক শিক্ষা লাভ করবে পাশাপাশি অভিভাবকরাও সপ্তাহে একদিন বিদ্যালয়ে আসছেন। এতে তারা বুঝতে পারছেন তাদের বাচ্চাদের পড়ালেখার সর্বশেষ অবস্থা। বিদ্যালয়ে টিফিন সময়ে তারা এই কাজটি করছেন।
দুধরাজপুর গ্রামের বাসিন্দা আলী হোসেন জানান, শিক্ষকদের এই উদ্যোগ খুবই প্রসংশনীয়। এতে আগামীর মানুষগুলো নৈতিক শিক্ষা নিয়ে বেড়ে উঠবে। স্থানীয় ইউপি মেম্বার সাইফুল ইসলাম জানান, এই কার্যক্রম খুবই ভালো। দেশের অন্য এলাকাতেও ছড়িয়ে এখন ছড়িয়ে পড়তে এটা প্রত্যাশা করেন।
এই কার্যক্রমের স্বপ্নধ্রষ্টা সহিদুল ইসলাম জানান, তারা এই কার্যক্রম অব্যহত রাখবেন। এটার জন্য যা প্রয়োজন তাই করা হবে বলে জানান। তিনি বলেন, সমাজ তথা দেশকে এগিয়ে নিতে হলে মানুষের মাঝে নৈতিকতা ফিরিয়ে নিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, এটা খুবই ভালো দিক। এই কার্যক্রমের ফলে নীতি-নৈতিকতার বিকাশ হবে। যা সমাজ উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: