ঢাবিতে ৪ ছাত্রকে মারধর করে হলছাড়া করার অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টারদা সূর্যসেন হলে এক অছাত্রকে হলে রাখতে চার বৈধ শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে হলটির সদ্য সাবেক শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। এছাড়াও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টটা থাকায় হল শাখা ছাত্রলীগের পাঁচ নেতার বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সাড়ে তিনটা থেকে রাত আট’টা পর্যন্ত হলটির ৪৫০ নং কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে হলটির ৫৩২ নং কক্ষ থেকে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীদের ডেকে ফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করেন। এরপর জোরপূর্বক মুচলেকা নিয়ে হল ছাড়া করা হয়, বলে অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে বুধবার (২৪ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। এর আগে তাঁরা হলটির প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তাঁরা।
ভুক্তভোগীরা হলেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী আলম বাদশা, একই বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী লুৎফুর রহমান, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের আল আমীন ও একই সেশনের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান। তাঁরা সকলেই হলটির ৫৩২ নং কক্ষে থাকতেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হলটির ৫৩২ নম্বর কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ সেশনের দর্শন বিভাগের সুমন আহমেদ নামে এক অছাত্রকে ওই কক্ষে থাকতেন। বিভিন্ন সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রুমের সকলকে মানসিক টর্চারের মধ্যে রাখত। সাম্প্রতিককালে কক্ষের অন্যান্য সদস্যের সাথে ঝামেলা বাঁধলে দেখে নেয়ার হুমকি দেন সুমন এবং ১২ ঘণ্টার পর হল ছাড়ার হুমকি দেন। এবং তখন বিষয়টি হলের হাউস টিউটরকে জানাই, পরে তাঁকে জানানো হয় আপনি যে সমস্যা করছেন একারণে আপনাকে হল ছেড়ে চলে যেতে হবে। আর এ বিষয়টি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানকে জানাই সুমন। এর ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল আহাদের মাধ্যমে ওই রুমে অবস্থানরত সকল শিক্ষার্থীকে নিজ কক্ষে ডাকেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান। তারপর ৪৫০ নম্বর গেলে আমাদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে ফেসবুক ঘাটাঘাটি করে তাঁরা। এর এক পর্যায়ে সবাইকে আলাদা আলাদা ভাবে মারধর করে।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী আলম বাদশা বলেন, দফায় দফায় আমাদের সবাইকে মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে কিল-ঘুষি দেয়া শুরু করে। এবং সবাইকে আলাদা আলাদাভাবে নিয়ে ওই রুমে সিয়াম রহমান তিনি আমাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। এখন পর্যন্ত আমার পিঠে ব্যথা রয়েছে। এভাবে সবাইকে এক এক করে মারধর করেছেন। চড়-থাপ্পর লাথি এবং তার কথা কেন শুনিনি, সিনিয়র কে কেন বের করে দিতে চাই এগুলো কথা বারবার নিয়ে এনে তিনি আমাদের টর্চার করেছেন। সেখানে আমরা প্রায় তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ছিলাম। শেষ পর্যায়ে এসে আমাদেরকে জোরপূর্বক মুচলেখা নিতে বাধ্য করে।
এসময় আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, প্রথমে সিয়াম ভাই আলম বাদশা ভাইকে দিয়ে মারধর শুরু করেন এবং আমাদের বলেন তোদের তো অবস্থা খারাপ; তোরা তো শিবির করিস। মোবাইলগুলো জমা নিয়ে ফেসবুকে ঘাটাঘাটি করে কিছুই পাই নি। শুধু পদ্মা সেতু নিয়ে লুৎফরের ভাইয়ের একটি লজিক্যাল ফেসবুক পোস্ট পেয়েছেন। লুৎফর ভাই যতবার ফেসবুক পোস্টটি যতবার লজিং দিতে গেছেন, তিনি নিজের মত ব্যাখা দিয়ে ততবার মারধর করেছেন। মারের ধরন এমন ছিল কাছে টেনে নিয়ে মাথার চুল ধরে, থাপ্পড়াচ্ছিলেন এবং সেখানে হাত দিয়ে যাচ্ছিল না। এর পরবর্তীতে বুকে লাথি দিয়ে অনেক দূরে চলে গেলে, আবার সেই জায়গায় এনে ফেলা হচ্ছিল।
তিনি আরো বলেন, পরে জোরপূর্বক আমাদের মুচলেকা নেয়া হয়। হামিদ কারজাই নামে এক ভাই কাঠের বেত দিয়ে আমাকে আঘাত করেন। এছাড়া যখন আমি মুচলেকা লিখতে চাচ্ছিলাম না, তখন সিয়াম ভাই এসে একটি মুচলেকার খসড়া দেয় এবং পালাক্রমে সবাই তা লিখে।
এদিকে ভুক্তভোগীরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন তাঁরা সকলেই হলটির ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অভিযুক্তরা হলেন— হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হামিদ কারজাই, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ জামান অভি,আব্দুল আহাদ, আপ্যায়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম নীরব ও উপ আইন সম্পাদক মুহাম্মদ তালহা।
এ ব্যাপারে হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হামিদ কারজাই বলেন, এমন কিছুই ঘটে নি। যেহেতু আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি করি, সামনে হলের ক্যান্ডিডেট। তাই আমার ক্লিন ইমেজ নষ্ট করার জন্য আমার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিয়াম রহমান বলেন, ছাত্রলীগের নাম করে জোরপূর্বক একজনকে বের করে দিতে চাইলে আমি তাদের রুমে ডেকে কথা বলি। কেন ছাত্রলীগের নাম করে বের করে দিচ্ছে এবং বিভিন্ন সময় হলে মেহমান নিয়ে আসার বিষয়ে জানতে চাই। পরে তাদের ফেসবুকে পদ্মা সেতু নিয়ে ব্যঙ্গ করে পোস্ট দেখা যায়। আমি শুধুমাত্র একটা থাপ্পড় দিয়েছি শাসন করে। এর বাইরে কেউ হাত তুলেনি।
জোরপূর্বক মুচলেকার বিষয়ে তিনি বলেন, তাদেরকে আমি নিজেই হলে তুলেছি। তাদের মধ্যে তিন জন পদ্মা সেতু নিয়ে ব্যঙ্গ করার কারণে নিজ থেকেই হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা বলে। যাতে পুলিশি ঝামেলা বা কোনো ধরনের মারধরের শিকার না হয়। পরে স্বেচ্ছায় তারা লিখিত দেয় যে তাদেরকে আমরা বের করে দিই নাই। কিন্তু এখন তারা আমাদের নামে প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আজ দুপুরে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তার ভিত্তিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে হলের সিনিয়র হাউস টিউটর শহীদ কাজী এবং দুই ফ্লোরের দুই হাউস টিউটর মাহমুদুল হাসান ও আরিফুল ইসলামকে নিয়ে ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: