‘অস্ত্রসহ’ আটকদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ রামু থানার ওসির বিরুদ্ধে

কক্সবাজারের রামু উপজেলার ঈদগড় থেকে ডাকাত সন্দেহে ‘অস্ত্রসহ’ দুই যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয় জনতা। দিনভর নানা নাটকীতার পর মুচলেকা দিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রামু থানার ওসির বিরুদ্ধে।
গত সোমবার (২২ মে) রাতে রামু থানায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ঈদগড়ে অস্ত্রধারীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠার আংশকা করছেন স্থানীয়রা।
আটকের পর ছেড়ে দেওয়া যুবকরা হলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি গর্জনিয়া ইউনিয়নে ১ নং ওয়ার্ডের বড় বিল জালালের ঝিরি হাজী পাড়া এলাকার মোঃ হাসানের ছেলে আব্দুর শুক্কুর ও একই ইউনিয়ন ৬নং ওয়ার্ডের মাঝির কাটা এলাকার মনির আহমদের ছেলে মোঃ রুবেল।
অস্ত্রসহ ধরিয়ে দেওয়ার পরও তাদের ছেড়ে দেয়ায় খোদ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ঈদগড়ের ইউপি সদ্যস্য মোঃ রুস্তম আলী।
অভিযোগ আছে, ২৩ মে ভোর রাতে অস্ত্রের মূল মালিক ইউপি সদস্য রুস্তম আলি ওরফে ডাকাত রুস্তমকেও ছেড়ে দেন রামু থানার ওসি মোঃ আনোয়ার হোসেন। ওসির দাবি অস্ত্রটি খেলনার তাই সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
রুস্তম মেম্বারকে ছেড়ে দেয়ায় ব্যাপক সমালোনার মুখে পড়েছে পুলিশ। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে দাবি করেছেন যে ১২ লাখ টাকার বিনিময় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
যদিওবা পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়া শুক্কুর ও রুবেলের দাবী, স্থানীয় ইউপি সদস্য রুস্তম ওরফে ডাকাত রুস্তমে চোরাই গরু পাচারের কাজ না করে অন্য আরেক গ্রুপের হয়ে কাজ করায় তাদেরকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছিলেন রুস্তম। পরে পুলিশ তথ্য পেয়ে অস্ত্রের মূল মালিক ইউপি সদস্য রুস্তমকে থানায় ডেকে আটক করে এবং ওই দুই ব্যক্তিকে মুচলেকায় ছেড়ে দেয়।
পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়া আব্দুর শুক্কুর বলেন, ‘এক সময় রুস্তম মেম্বারের অবৈধ গরু পাচারের কাজ করতাম আমি। কিছুদিন থেকে মেম্বারের সাথে কাজ না করে রাশেদ ও ইমরানের হয়ে গরু পাচারের কাজ শুরু করি। গরু পাচার শেষ করে বাসায় যাওয়ার সময় রুস্তম মেম্বারের লোকজন রাতে আমাকে ধরে মারধর করে একটি লম্বা বন্দুক দিয়ে ফাঁসিয়ে পুলিশকে ধরিয়ে দেয়। সাথে রুবেল নামের এক মোটর সাইকেল চালককেও ডাকাত বলে ফাঁসিয়ে দেয়। পরে পুলিশ অস্ত্রটি রুস্তম মেম্বারের জেনে আমাকে ও রুবেলকে মুচলেকায় ছেড়ে দেয়। পরে অস্ত্রটি রুস্তম মেম্বারের জানার পরেও কিভাবে রুস্তম মেম্বারকে ছেড়ে দেন আমার জানা নেই।’
জানতে চাইলে ঈদগড় ইউনিয়ন ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য ও অভিযুক্ত রুস্তম আলী বলেন, ‘রাতে জবাই করা গরুর মাংস পাচার করার সময় বাইশারির কিছু লোকজন আব্দুর শুক্কুরকে একটি ভাঙ্গা নলা বন্দুকসহ আমাকে বুঝি দেন। আমি তাৎক্ষণিক ফোন দিয়ে পুলিশকে ডেকে তাকে সোপর্দ করি। ভাঙ্গা হোক ভালো হোক অস্ত্রসহ বুঝিয়ে দেওয়ার পরেও ওসি সাহেব কিভাবে তাকে ছেড়ে দিলো আমি বুঝতে পারছি না। আমাকেও ছাড়ছিলো না। আমি এমপিকে ফোন দেওয়ার সাথে সাথে আমাকে ছেড়ে দেয়।’ অস্ত্রসহ দুই ব্যক্তিকে ফাঁসিয়ে দেয়া বিষয়টি অভিযোগ করেন এ জনপ্রতিনিধি।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, আটকরা মুলত মায়ানমার থেকে অবৈধ পথে আসা গরু প্রচার চক্রের সক্রিয় সদস্য। ইউপি সদস্য রুস্তম স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির অনুসারী। আটকের পর চক্রের অন্যান্য সদস্যরা থানায় গিয়ে রাতেই ‘টাকার বিনিময়ে’ তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। পরে পুলিশ অস্ত্রটি ‘খেলনা’ বলে প্রচার করে। তবে টাকার লেনদেন থানার দালালদের মাধ্যমে হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, গত সোমবার রাত আড়াইটার দিকে রামু ঈদগড় ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ রুস্তম আলী তার গরু পাচার সিন্ডিকেটের লোকজন নিয়ে শুক্কুর ও রুবেল নামের দুই ব্যাক্তিকে ডাকাত বলে আটক করেন। পরে ইউপি সদস্য রুস্তম আলী ঈদগড় পুলিশ ক্যাম্পে খবর দিলে পুলিশ ফোর্স নিয়ে হাজির হয়। পুলিশ ফোন করে ঈদগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ ভূট্টোকে ডেকে নিয়ে আসে। পরে ইউপি সদস্য রুস্তম একটি লম্বা বন্দুক দিয়ে ডাকাত দাবী করে তাদেরকে রামু থানায় পাঠিয়ে দেন। পরে অস্ত্রটি ইউপি সদস্য রুস্তমের জানতে পেরে তাকেও আটকে রাখে পুলিশ। এরপর ঈদগড় ইউপির চেয়ারম্যান, স্থানীয় যুবলীগ নেতা ও গরুপাচার সিন্ডিকেটের সদস্যরা তদবির করে বিপুল টাকার বিনিময়ে রুস্তমকে মুচলেকায় ছাড়িয়ে আনেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে থানায় উপস্থিত থাকা এক ব্যাক্তি জানান, ইউপি সদস্য রুস্তম আলী শত্রুতার জেরে একজন নীরিহ ও আরেকজন গরু পাচারকারীকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে থানায় সোপর্দ করে। পরে পুলিশ খোজ নিয়ে অস্ত্রটি রুস্ত মেম্বারের জানতে পারলে তাকেও আটকিয়ে রাখে। এরপর ঈদগড় ইউপির চেয়ারম্যান, স্থানীয় যুবলীগ নেতা ও কয়েকজন গরু পাচারকারী কয়েক ঘন্টা চেষ্টা করে ওসিকে ম্যানেজ করে রুস্তম আলীকে মুচলেকায় ছাড়িয়ে নেন। পরবর্তীতে অস্ত্রসহ আটক দুই ব্যাক্তিকে কিভাবে ছাড়া হয়েছে তাদের জানা নেই বলে জানান তিনি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ঈদগড় ইউনিয়ন ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য রুস্তম আলী ফোন করে জানান দুইজন ডাকাতকে আটক করেছে তারা। এমন খবর পেয়ে আমরা চেয়ারম্যানকে ও ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে বলি। ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি স্থানীয় জনতা দুইজন ব্যাক্তিকে বসিয়ে রেখে চারদিকে ঘিরে রেখেছেন। তাদের সামনে টেবিলে একটি কালো ব্যাগ মোড়ানো অস্ত্র রাখা আছে। তাৎক্ষণিক দুইজন স্বাক্ষীর জবানবন্দি নিয়ে ওসির সাথে কথা বলে স্বাক্ষীসহ আটকদের অস্ত্রসহ থানায় নিয়ে যায় ঈদগড় পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ফয়েজুর রহমান।
রামু ঈদগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ ভূট্টো জানান, ডাকাত সন্দেহে অস্ত্রসহ দুইজন আটক হওয়ার ঘটনায় ইউপি সদস্য রুস্তমকেও থানায় আটকে রাখা হয়। এরকম খবর পেয়ে থানায় যায়। পরে থানায় মুচলেকা দিয়ে ইউপি সদস্যকে ছাড়িয়ে নিই।
তবে এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ঈদগড় পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মোঃ ফয়েজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে আমি কোন বক্তব্য দিতে পারব না। ওসি ও সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা আপনাকে সব তথ্য দিতে পারবেন। আমি তাদের অনুমতি ছাড়া কিছু বলতে পারব না।’
জানতে চাইলে রামু থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ডাকাত সন্দেহে যে দুইজনকে থানায় আনা হয়েছে তাদের কাছে থাকা অস্ত্রটি খেলনার। এ ধরনের অস্ত্র শুধু সিনেমায় ব্যাবহার করা হয়।’
টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যানের জিম্মায় মুচলেকা নিয়ে ইউপি সদস্য ও ডাকাত সন্দেহে আটক দুই ব্যাক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
কক্সবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ‘স্থানীয় জনতা ডাকাত সন্দেহে একজন মোটর সাইকেল চালক ও একজন নীরিহ মানুষকে ধরে থানায় খবর দেয়। অস্ত্র মামলা দিয়ে দিলে তাদের জীবন ধ্বংস হয়ে যেতো। অস্ত্রের সাদৃশ্য বস্তটি একটি জিডিমুলে রিসিভ করা হয়েছে। পরে তাদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় চেয়ারম্যানের মুচলেকায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।’
বন্দুকটি কে দিয়েছে? বন্দুকটি খেলনার হলে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে আপনার চেনার কথা আর খেলনাই যদি হয় তাদের আটক করা হলো কেন? এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তোর না দিয়ে যার তদন্ত এখনো চলছে বল দাবি করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: