রামুতে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে ৪ ব্যবসায়ী আহত, আড়াই লাখ টাকা ছিনতাই

প্রকাশিত: ২৯ মে ২০২৩, ১০:০৬ এএম

কক্সবাজারের রামুতে চার ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাত ও বেধড়ক পিটিয়ে আড়াই লাখ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে সংঘবদ্ধ একটি কিশোরগ্যাং চক্রের বিরুদ্ধে।

গত শনিবার (২৭ মে) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে রামুর চেরাংঘাটা বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

কিশোরগ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে আহত ব্যবসায়ীরা হলেন, রামুর মন্ডল পাড়া এলাকার সমাজপ্রতি এবং চৌমুহনীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন জনু, তার ভাই সাইফুল ইসলাম, মৃত আলমের ছেলে মোহাম্মদ রফিক ও মৃত আজিজের ছেলে নুরুল ইসলাম। বর্তমানে তাদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরমধ্যে নুরুল ইসলামকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা।

আহত ব্যবসায়ী জনু জানান, চৌমুহনী ষ্টেশনে তার পাঁচটি দোকান রয়েছে। প্রতিদিনের মতো শনিবার রাতে দোকানের হিসাব-নিকাশ শেষে বেচা-বিক্রির আড়াই লাখ টাকা নিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে চৌমুহনী থেকে তার বোনের বাড়িতে ফিরছিল। পথিমধ্যে চেরাংঘাটা এলাকায় বার্মিজ সরকারি স্কুলের সামনে পৌঁছালে ফুলনীরচর এলাকার নুর আলমের ছেলে কিশোর গ্যাং লিডার তুষার (২১), একই এলাকার ভুট্টুর ছেলে আরাফাত (১৯), মিজান (২০), বড়ুয়া পাড়া এলাকার সুগত বড়ুয়ার ছেলে সৌরভ বড়ুয়া (২৪), মন্ডল পাড়া এলাকার মৃত নুরুল হাকিমের ছেলে কবির (২০) ও একই এলাকার আনু মিয়ার ছেলে মাসুদসহ (২০) ১০-১২ জনের একদল কিশোর জনুর গতিরোধ করে। একপর্যায়ে তাকে টানা-হেঁচড়া করতে করতে বার্মিজ স্কুল সংলগ্ন নির্জন গলির মধ্যে নিয়ে যায়। এসময় তার ভাই সাইফুলসহ দোকানের অন্যান্য কর্মচারিদের ফোন করলে সেখানে জনুকে পিঠমোড়া করে বেঁধে কাঠের বাটাম, লোহার রড দিয়ে ব্যাপক মারধর এবং ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত করা হয়। এসময় তাকে উদ্ধারে সাইফুলসহ আহত অন্যান্যরা এগিয়ে এলে তাদেরকেও মারধরের একপর্যায় ছরুকাঘাত করে। এতে তারা নিস্তেজ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে কিশোর দুর্বৃত্তরা তাদের কাছে থাকা আড়াই লাখ টাকা ও স্মার্টফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে মূমূর্ষ অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন।

ব্যবসায়ী ও সমাজপ্রতি জনু বলেন, অভিযুক্তরা সবাই চিহ্নিত কিশোর অপরাধী চক্রের সদস্য। তারা চরম নিষ্ঠুরভাবে আমাদের ছরিকাঘাত করে টাকা লুট করে নিয়েছে।

তিনি আরোও বলেন, প্রতিদিন রাতে চেরাংঘাটা ও আতিক্কানিরঘাটা এলাকায় এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গরু, টাকা ও মোবাইলসহ মুল্যবান জিনিসপত্র ডাকাতি করে আসছেন। তারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন আমাকে পর্যন্ত ছাড় দেন নি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার চাই।

এদিকে এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছোট ছোট অপরাধ থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ড, রাস্তায় উৎপাত থেকে শুরু করে ধর্ষণ, ছিনতাই থেকে মাদকাসক্তি— গত কয়েক মাসে রামু উপজেলাসহ আশেপাশের এলাকায় কিশোর গ্যাংদের এ রকম অনেক সংবাদ গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, এই কিশোর গ্যাংদের প্রায়শই পেছন থেকে সমর্থন দেয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের একাংশ। তারা ‘বড় ভাই’ হিসেবে এই কিশোরদের কাজে প্রভাব বিস্তার করে থাকেন। গ্যাং সদস্যদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত হওয়ার পাশাপাশি মাদক, মায়ানমার থেকে অবৈধ পথে আসা গরু ছিনতাইসহ চোরাচালানেও জড়িত। কেউ কেউ নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য দেখাতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র বহন করে। তারা এলাকায় প্রভাব বজায় রাখতে গিয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।

গত চার মাসে সন্দেহভাজন কিশোরদের হাতে এক ডজনের বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরাধতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই কিশোরদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার কাজটি খুবই কঠিন হতে পারে।

এ বিষয়ে রামু থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন বলেন, আসলে রামুতে সে রকম কোনো কিশোর অপরাধী চক্র গড়ে ওঠেনি। বিচ্ছিন্নভাবে হয়তো কেউ অপরাধে জড়াতে পারে। উল্লিখিত ঘটনা ঘটার সাথে সাথে পুলিশ পাঠিয়েছি। বিভিন্নভাবে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: