৪০ বছর পর সড়ক যোগাযোগের আওতায় বিলাইছড়ি

প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৩, ১২:৪৯ পিএম

নানা চ্যালেঞ্জের মুখেও পার্বত্য চট্টগ্রামে সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে সরকার। বদলে যাচ্ছে দুর্গম পাহাড়ি জনপদের জীবনধারা। এবার দীর্ঘ ৪০ বছর পর
সড়ক যোগাযোগের আওতায় আসছে পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটির দুর্গম বিলাইছড়ি উপজেলা। এ উপজেলায় নৌ -পথ ছাড়া যোগাযোগের আর কোন মাধ্যম ছিল না। খরা মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলে এ উপজেলায় পায়ে হেঁটে পৌঁছাও দুষ্কর।

এবার দূর্গম বিলাইছড়ি উপজেলাকে সড়ক যোগাযোগের আওতায় আনতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিডি) এর অধীনে প্রকল্প গ্রহণ করেছেন সরকার।
রাঙ্গামাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর কতৃপক্ষ সূত্রে জানা
গেছে,রাঙ্গামাটি কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী এলাকার কারিগরপাড়া হতে বিলাইছড়ি
উপজেলা সদর পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আওতার লক্ষ্যে ৩৩৮ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

২০২১ সালের ৪ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়
প্রকল্পটি পাস হয়। এই প্রকল্পের আওতায় রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলাধীন
রাইখালীর কারিগর পাড়া হতে বিলাইছড়ি পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন ব্রীজ/কালভার্ট নির্মাণ
প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হচ্ছে ৪০ কি:মি: সড়ক ও ১২ টি সেতু।

বিলাইছড়ি উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা মৃণাল কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা জানান, ১৯৮৩ সালে
বিলাইছড়ি উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখান থেকে হিসাব করলে ৪০ বছর হয়। দীর্ঘ ৪০ বছর পর বিলাইছড়ি উপজেলা সড়ক যোগাযোগের আওয়তায় আসছে,এ জন্য বিলাইছড়িবাসী খুবই আনন্দিত। বিশেষ করে সড়ক যোগাযোগের ফলে আমূল পরিবর্তন আসবে।

তিনি আরো জানান, ভরা মৌসুমে তাদের নৌ-পথে কাপ্তাই-রাঙ্গামাটি যাতায়াত করতে প্রায় ৩ ঘন্টা সময় লাগে আর এখন খরা মৌসুমে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা সময় লাগে,দুই থেকে তিনটি জলযান পরিবর্তন করতে হয়। সড়কটির নিমার্ণ কাজ শেষ হলে যোগাযোগের যেমন গতি আসবে,তেমনি ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। এটি ট্রানজিট উপজেলা হবে এবং এই উপজেলার সড়ক দিয়ে বরকল ও জুরাছড়ি পর্যন্ত পৌঁছানো যাবে।

আরেক স্থায়ী বাসিন্দা মনচিতা তঞ্চঙ্গ্যা জানান, সড়কটির কাজ পুরো শেষ হয়ে গেলে
তারা গাড়ি দিয়ে খুব সহজে কাপ্তাই-বিলাইছড়ি উপজেলায় যাতায়াত করতে পারবেন। সড়কটি নিমার্ণ করা সরকার তথা এলজিইডিকে ধন্যবাদ জানান এবং নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করছেন।

কারিগড় পাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা সুশীল তঞ্চঙ্গ্যা জানান, সড়কটি হওয়ায় বিলাইছড়ির
৩ ঘন্টার পথ এক ঘন্টায় যাওয়া যাবে। বিলাইছড়ি থেকে সহজে যাতায়াত করতে এখন তাদের অনেক সুবিধা হবে।

আরেক স্থায়ী বাসিন্দা রনি তঞ্চঙ্গ্যা জানান, বর্ষা মৌসুমে এই সড়কটি কাদায় পরিপূর্ণ থাকে। যার ফলে যাতায়াত করতে তাদের অনেক কষ্ট হয়। সড়কটি পাকা হয়ে গেলে
তাদের যাতায়াত সুবিধা হবে। তিনি আরো জানান, কাপ্তাই-বিলাইছড়ি গাড়ি পথে যাতায়াত করতে সুবিধা হবে।

কাপ্তাই উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা মোঃ ইউসুপ জানান, বিলাইছড়ি সড়ক বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থা। বনায়ন, কৃষি ও পর্যটন শিল্পে ব্যাপক
পরিবর্তন আসবে। উন্নয়ন ঘটবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে। এলাকার কৃষকরা পাবেন
তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য। সহজে পাওয়া যাবে স্বাস্থ্যসেবা। বাড়বে
শিক্ষার হার। সার্বিকভাবে বিলাইছড়িবাসীর জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে। কাপ্তাই উপজেলা এলজিইডি’র সহকারী প্রকৌশলী সবুজ হোসেন জানান, সেতু নির্মাণের
কাজ শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন প্যাকেজের কাজের মাটি কাঁটা চলছে। আশাকরি,
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবো।

কাপ্তাই উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, কাপ্তাই
উপজেলার রাইখালী এলাকার কারিগরপাড়া হতে বিলাইছড়ি উপজেলার সংযোগ সড়ক নির্মাণ

প্রকল্প। এই প্রকল্পের অধীনে মোট প্রায় ৪০ কিলোমিটার সড়ক এবং ১২ টি সেতু
নিমার্ণ করা হবে। যার মধ্যে কাপ্তাইয়ের মধ্যে ৩২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা
হবে। যার টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান আছে। এছাড়াও ২০ কিলোমিটার রাস্তার কাজ চলমান এবং ৪টি সেতুর কাজ চলমান রয়েছে। এই সড়কটি হলে জনগণের জীবনমান এবং পর্যটনের উন্নয়ন হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রাঙ্গামাটি নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ
শফি জানান, সড়কটি নির্মিত হলে বিলাইছড়িবাসী পানি পথে যেভাবে কষ্ট করে
আসা-যাওয়া করতো তা থেকে মুক্তি পাবে। সড়ক পথে বিলাইছড়ি থেকে কাপ্তাই আসা-যাওয়া করা যাবে। তিনি আরো জানান, খুবই দুর্গম জায়গা দিয়ে তাদের কাজ করতে হচ্ছে। এটি তাদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ। সড়কটি নির্মাণের ফলে বিলাইছড়ি এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য খুব সহজেই বাজারজাত করতে পারবে।

উল্লেখ্য, রাঙ্গামাটির ১০ উপজেলার মধ্যে তিনটি উপজেলা বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি ও
বরকল সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এসব উপজেলায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌ পথ। কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর এ তিন উপজেলায় নৌ যোগাযোগ শুরু হয়। যোগাযোগ সংকটের কারণে এসব উপজেলা কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটনসহ ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধা থেকে পিছিয়ে আছে। এবার দীর্ঘ ৪০ বছর পর সড়ক যোগাযোগ পাওয়ার স্বপ্ন পুরণ হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: