শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে গাছ লাগাতে দিলেন শিক্ষক

প্রকাশিত: ০৫ জুন ২০২৩, ০৮:১১ পিএম

গ্রীষ্মকালে গরমের তীব্রতা এতই বেশি যে, তা অসহনীয়, অসহ্যকর! ভ্যাপসা গরমে সবার প্রাণ যেন ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে। শুধু গ্রীষ্মকালই নয়, বর্ষাকালের বৃষ্টিতেও আজকাল নেই প্রশান্তির লেশ, নেই বিন্দুমাত্র শীতলতার অনুভূতি। সপ্তাহজুড়ে কম-বেশি বৃষ্টি হলেও গরমের তীব্রতা যেন চরমে। বৃষ্টি নামার সঙ্গে সঙ্গে গরম আরও জাপটে ধরে। এ সবই গাছপালা কমে যাওয়ার একমাত্র ফল।

প্রতিদিন কত পরিমাণ গাছ অকারণে, নির্বিচারে, অপ্রয়োজনে কাটা হচ্ছে তার কোনো হিসাব নেই। নির্বিচারে গাছপালা ধ্বংসের কারণে একদিকে প্রকৃতিতে ক্রমশ বৃষ্টি কমছে, অন্যদিকে ক্রমশ উষ্ণতর হচ্ছে পৃথিবীপৃষ্ঠ। দেখা যাচ্ছে, জলবায়ুর অসম পরিবর্তন, ঋতুর আবর্তনে গরমিল, বাড়ছে সূর্যরশ্মির তীব্রতা, বাড়ছে গ্রিনহাউস ইফেক্ট। বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ। পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগী করে রাখতে গবেষক ও পরিবেশবিদরা নিয়মিত বৃক্ষ রোপণ ও সংরক্ষণের তাগিদ দিয়ে আসলেও সেটি নিয়ে কাউকে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়না।

তবে সোমবার (৫ জুন) বিশ্ব পরিবেশ দিবসে বৃক্ষরোপণে ভিন্নধর্মী এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো.তারিফুল ইসলাম।একটি কোর্সের অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে শিক্ষার্থীদের দিয়ে গাছ লাগিয়েছেন তিনি।

জানা যায়,বিভাগটির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ‘সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান’কোর্সের অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে শিক্ষার্থীদের ৩০ টি গাছ লাগাতে বলেছেন তিনি। গাছ লাগালে প্রদান করা হবে নম্বর।

অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে সোমবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় ৩০ টি ভেষজ, ফলজ ও বনজ বৃক্ষ রোপণ করেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। পরে তারা সেগুলো খূটি ও বেড়া দিয়ে বেধে দেন।

বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শেষে বিভাগের শিক্ষার্থী আতিয়া শারমিলা আঁখি বলেন ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমান সময়ে যে হারে বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে সেই অনুপাতে বৃক্ষ রোপণ করা হচ্ছেনা। স্যার আমাদের একটি কোর্সের অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে গাছ লাগাতে দিয়েছেন। পরিবেশ রক্ষার এই কার্যক্রমটি করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত।’

শিক্ষক তারিফুল ইসলাম বলেন ‘পরিবেশগত সুরক্ষা এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণে বৃক্ষ তথা ফলদ বৃক্ষের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান সময়ে দেশে পর্যাপ্ত বনভূমির অভাবে তীব্র দাবদাহে আমরা সবাই অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদেরই স্ব-উদ্যোগে পর্যাপ্ত বৃক্ষ রোপণে এগিয়ে আসতে হবে।

এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে আজ ৫ জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আমি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ১ টি কোর্সের এসাইনমেন্ট হিসেবে প্রত্যেককে ১ টি করে ফলদ বৃক্ষ রোপণ এবং বৃক্ষগুলোর সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দিয়েছি। শিক্ষার্থীরাও এই প্রস্তাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ধারাবাহিকভাবে দর্শন বিভাগের অন্যান্য ব্যাচগুলোও একটি কোর্সের এসাইনমেন্ট হিসেবে আসন্ন বর্ষায় বিভিন্ন ধরনের ফলদ বৃক্ষ রোপন করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এপ্রসঙ্গে একটি তথ্য দিয়ে রাখা ভালো যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ-যেমন ফিলিপাইনে এলিমেন্টরি পরীক্ষা পাশের পর কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অন্তত ১০ টি করে গাছ লাগানো বাধ্যতামূলক। এমন গাছ লাগানোর উদ্যোগ অদ্ভুত মনে হতে পারে, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এটির গুরুত্ব অপরিসীম।’

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: