
কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্যারাবন নিধন আর সরকারি খাসজমিসহ বন দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মহোৎসব চলছে। থেমে নেই নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন, অবাধে পাহাড় কর্তন, বনের গাছ নিধন ও মাটি বিক্রিও। গত কয়েক বছরে আনুমানিক কয়েক লাখ গাছ কেটে দখল করা হয়েছে কয়েকশ একরের জলাভূমি।
পাশাপাশি গাছপালা উজাড় হওয়ায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থল ও জীববৈচিত্র্য। কাটা গাছের গোড়ালি যাতে প্রশাসনের কেউ দেখতে না পান এ জন্য চলছে ভরাটের কাজ।
এছাড়াও বাঁকখালী নদীর দখলদারদের উচ্ছেদ, দখল বন্ধ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে।
এমতাবস্থায় রামুতে আবু তাহের নামের পাহাড়, বালু খেকো ও দখলকারী আস্তানায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছেন র্যাব, উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ।
রোববার (২৬ নভেম্বর) কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের পানেরছড়া রেঞ্জের পানেরছড়া বিটের মরিচ্যা ঘোনা এলাকায় এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা মুস্তফা।
বনবিভাগ ও স্থানীয়দের সূত্র মতে, কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের পানেছড়া রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি এলাকার নুর হোসেনের ছেলে আবু তাহেরের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে বালু ও পাহাড় কেটে মাটি পাচার করে আসছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার যৌথ অভিযান পরিচালনা করেন প্রশাসন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো.সারওয়ার আলম।
অভিযানে অংশ নেয়া পানেরছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রতন লাল মহত জানিয়েছেন, র্যাব, রামু উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ পানেরছড়া বিটের মরিচ্যা ঘোনা এলাকায় অভিযান চালায়। ওই সময় পাহাড় কাটার কাজে ব্যবহৃত ১০০ ফুট লম্বা কালো হুস পাইপ, ২০ ফুট লম্বা থ্রেড পাইপ ও সাবমার্সিবল পাইপ মেশিনের মুখে অবস্থিত লোহার খন্ড জব্দ করা হয় এবং পাহাড় ধ্বংস করা এলাকা কর্ডন করে লাল ফ্লাগ দেয়া হয়। এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে একটি অবৈধ মিটার হতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা বলেন, আবু তাহের একজন চিহ্নিত পাহাড়, বালু ও জবরদখলকারী। তার বিরুদ্ধে বন আইনের মামলা ছাড়াও রামু থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে আবু তাহেরের বিরুদ্ধে মামলা করায় গত ২২ নভেম্বর পানেরছড়া বিট কর্মকর্তা জলিলুর রহমানকে মুঠোফোনে হত্যার হুমকি দেন। বিষয়টি লিখিতভাবে বন আদালত রামুকে জানানো হয়েছে।
রামু থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোহাম্মদ আবু তাহের দেওয়ান বলেন, এখনো বনবিভাগের পক্ষ থেকে হুমকির বিষয়ে অভিযোগ দেয়া হয়নি। নিশ্চয়ই অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাহাড় খেকো আবু তাহেরের বিরুদ্ধে খোঁজ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ওসি।
সর্বশেষ খবর