• ঢাকা
  • ঢাকা, বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
  • শেষ আপডেট ৩০ মিনিট পূর্বে
মোঃ শাকিল শেখ
সাভার করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত : ২৮ নভেম্বর, ২০২৩, ০২:১৮ দুপুর
bd24live style=

শাপলার বুকে অতিথি পাখি; কিচিরমিচির শব্দে মুখর জাবি ক্যাম্পাস

ছবি: প্রতিনিধি

প্রকৃতিতে শীতের হাওয়া বইছে। সাথে উত্তরের হিমালয় অঞ্চল থেকে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি। এসব অতিথি পাখির নিরাপদ আবাসস্থল লাল মাটি আর সবুজের চাদরে ঘেরা এই ভূমিতে অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

এখানে প্রকৃতি একেক ঋতুতে একেক রূপে সাজে। আর শীতে শাপলার বুকে অতিথি পাখির অবাধ বিচরণ ও কিচিরমিচির শব্দে মুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্তি পেতে আর ধুলাবালি মুক্ত বায়ুতে নিঃশ্বাস নিতে শীতের এই সময়ে ক্যাম্পাসে ভিড় করছেন শত শত পাখিপ্রেমীরা।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বিভিন্ন লেক ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে ২৬টি লেক রয়েছে। এগুলোর মধ্যে জাহানারা ইমাম হলের পিছনের লেক, ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার ও মনপুরা সংলগ্ন লেক, ট্রান্সপোর্ট সংলগ্ন লেকের পশ্চিম পাশে দর্শনার্থীদের ভিড় ও দোকানপাড় থাকায় লেকের পূর্ব পাড়ে লেকে এসে আশ্রয় নিয়েছে পাখিগুলো।

এর মধ্যে ঝাঁক বেধে আপন মনে সাঁতার কাটছে কিছু পাখি। কিছু শাপলার পাতায় আপন মনে বিশ্রাম নিচ্ছে। কিছু আবার আকাশে উড়ছে। আবার পরক্ষণেই ঝাঁপ দিচ্ছে লেকের জলে। পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখর চারদিক। সবুজ গাছপালা আর দিনভর লেকের জলে পাখিদের ভেসে বেড়ানো ও জলকেলি খেলা চলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সন্ধ্যা হলে পাখিগুলো আশ্রয় নিচ্ছে লেক সংলগ্ন গাছে

প্রতিবছর শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে জাবি ক্যাম্পাসে আনাগোনা শুরু হয় অতিথি পাখির। আর ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে ফোটে লাল শাপলা। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। লাল শাপলার চাদরে মোড়া আঁকাবাঁকা লেক আর লেকের পাড় ঘেঁষা সবুজ গাছের ডালে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে অসংখ্য অতিথি পাখি। ভোর হতেই খাবারের সন্ধানে বের হয় পাখিগুলো। সন্ধ্যা নামলেই শেষ হয় সন্ধান। সারাদিন এসব পাখির কলকাকলি আর জলকেলিতে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। এবার নভেম্বরের শেষদিক থেকে ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে।

জানা যায়, ১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম অতিথি পাখি আসতে শুরু করে। সাধারণত শীতে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে পাখিরা জাবির লেকগুলোতে আসে। হিমালয়ের উত্তরের দেশ সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া ও নেপালে বছরের এই সময়ে প্রচুর তুষারপাত ঘটে। এসময় জীবন বাঁচাতে খাদ্যের খোঁজে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে আসে পাখিগুলো। জাবি ক্যাম্পাস নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল, লেকগুলো খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণ ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল হওয়ায় অতিথি পাখিরা এখানে অবস্থান করে। প্রায় ২০৬ প্রজাতির অতিথি পাখির দেখা পাওয়া যায় জাবি ক্যাম্পাসে। এর ১২৬ প্রজাতির দেশীয়, বাকি ৮০টি বিদেশি প্রজাতির। তবে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পাখি দেখা যায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আগত এসব অতিথি পাখিদের অধিকাংশই হাঁসজাতীয়। এর মধ্যে পাতিসরালি, পান্তামুখী, মুরগ্যাধি, গার্গেনি, কোম্বডাক, পাতারি, পচার্ড, ছোট জিরিয়া, পাতারী হাঁস, জলকুক্কুট, খয়রা ও ফ্লাইফেচার প্রধান। এছাড়া কলাই, ছোট নগ, লাল গুড়গুটি, নর্দানপিনটেল, কাস্তে চাড়া, জলপিপি, মানিকজোড়, খঞ্জনা, লাল গুড়গুটি, নর্দানপিনটেল, চিতাটুপি, বামুনিয়া হাঁস, নাকতা, ও কাস্তে চাড়া প্রভৃতি নামের হাজার হাজার পাখি দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আসে এই ক্যাম্পাসে।

দর্শনার্থীরা বলছেন,আসলে দেখেন আমরা তো যান্ত্রিক শহরে বসবাস করি। চারপাশে  ইট পাথরের জঞ্জাল। এখন শীতে শুরুতে যেটা হয় শহর থেকে একটু বাহিরে এখানে এসে পরিবারকে নিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে একটা আনন্দ মুখর সময় কাটানো কাটানো যায়। আর সাথে যেটা হয় যুক্ত হয় জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি পাখি। আর আমাদের শীতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ থাকে ঢাকাবাসীদের এখানে এসে অতিথি পাখি দেখা। 

এদিকে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের হলের পাশেই হচ্ছে লেক পাড়। প্রতিদিন সকাল বেলা এই অতিথি পাখিদের কলকাকলীতে আমাদের ঘুম ভাংগে। সকালে এই লেক পাড়ের পাশে বসেই আমরা নাস্তা করি। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখি শাপলা ফুল আর পাখিদের ডানা ঝাপটানো এই কম্বিনেশন টা খুবই ভালো লাগে।  আমাদের সকলের মনে হয় ভার্সিটি লাইফ টা শেষ হয়ে গেলে এই অতিথি পাখিদের কে বেশি মিস করবো।

পাখিপ্রেমী বন্যজীবনের আলোকচিত্রী ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অরিত্র সাত্তার দাবি করছেন, পাখির সুরক্ষায় এবছরও নেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের মোটর বাইকের শোডাউন ও হর্নের শব্দে ভীত পাখিরা। এসব বিষয়ে তদারকির জন্য নিয়মিত টহলের ব্যবস্তা করা হলে তাহলেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি পাখির সংখ্যা বাড়বে।

লেকগুলোতে অতিথি পাখিদের বিচরণ শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরই নয়, এখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদেরও মন কাড়ে। শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্তি পেতে আর ধুলাবালি মুক্ত বায়ুতে নিঃশ্বাস নিতে শীতের এই সময়ে ক্যাম্পাসে ভিড় করছেন শত শত পাখিপ্রেমীরা।

এব্যাপারে পাখি বিজ্ঞানী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান জানান, এবার পাখি এখন পর্যন্ত কিছুটা কম, তবে বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে পাখি অনেক বেড়েছে। আশা করা যায় শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষ করে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পাখি পুরোপুরি আসবে।

তিনি আরও বলেন, অন্যবার সেপ্টেম্বরের শেষে আসলেও এবার একটু দেরিতে আসছে। যেহেতু পাখি একটু পরে আসা শুরু হয়েছে তাই বেশি পাখি আসতে একটু দেরি হবে। পাখি আগে আসা কিংবা পরে আসাটা মাইগ্রেশন প্যাটার্নের ওপর নির্ভর করে। শুধু ক্যাম্পাসে নয় অন্যান্য জায়গাতেও পাখি পরে এসেছে। লেকগুলো যদি নিরাপদ ও দর্শনার্থীর কোলাহল কম থাকে তাহলে পাখির সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।

এবিষয়ে সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলম জানান, আমরা কোলাহল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। কিন্তু প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের অসহযোগিতায় তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। আমি তাঁদের অনুরোধ করব অন্তত গাড়ি বাইরে পার্কিং করে ক্যাম্পাসে হেঁটে আসতে। এ ছাড়া আগামী বছর থেকে পাখি আসার আগেই লেকগুলো পরিস্কারের ব্যবস্থা করা হবে। পাখির আবাসস্থলের কাছাকাছি ছয়তলার বেশি উঁচু ভবন ক্যাম্পাসে নির্মাণ করা হবে না।

এদিকে, প্রতিবছরে মতো এবারও পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামী জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি জাবিতে 'পাখি মেলা' হবে বলে জানান পাখি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কামরুল হাসান। ২০০১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে এ মেলার আয়োজন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। ২০১৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। তবে সম্প্রতি ক্যাম্পাসের লেকগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বিগত কয়েকবছর ধরে অতিথি পাখি কম আসছে। তার ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছ এবছরও।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:


BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ [email protected]