• ঢাকা
  • ঢাকা, সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
  • শেষ আপডেট ৩০ মিনিট পূর্বে
ইয়ানুর রহমান
যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১১:০৫ দুপুর
bd24live style=

শার্শায় অবৈধ ইটভাটার জন্য মাটি-বালু উত্তোলন, হুমকির মুখে পরিবেশ 

ছবি: প্রতিনিধি

যশোরের শার্শায় অবাধে একের পর এক অবৈধ ইটভাটা নির্মাণ আর বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশের ভারসাম্য। অবৈধ মাটি ও ইটবাহী যানবাহনের চাপায় প্রতিনিয়ত জীবন ঝরেছে  মানুষের। এতে উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে বছরের পর বছর এ অবস্থা শার্শার সব কটি ইউনিয়নে বিরাজ করলেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের ঘুষ বাণিজ্যে এর প্রতিকার হচ্ছেনা। তবে উপজেলা প্রশাসন এসব কর্মকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করে বলছেন দ্রুত এসব অনিয়ম রোধে আরো শক্তভাবে কাজ করবেন তিনি।

ভুক্তভোগী শার্শা উপজেলার বাসিন্দা ঢাকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান নিপুণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, অবৈধ ইট ভাটাগুলো একটা নিয়ন্ত্রণে আনা যায় কিনা একটু দেখেন! পিচের পাঁকা রাস্তা! অল্প বৃষ্টি হলে রাস্তার বেহাল অবস্থা হয়ে যায়। ইটভাটাগুলো বন্ধ করতে না পারলেও তাদের গাড়ি থেকে পরা কাদা মাটি থেকে অন্তত রাস্তাগুলো পরিষ্কার রাখার একটু ব্যবস্থা করেন। এলাকার হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন কষ্ট পাচ্ছে। কাদা শুকালে এমন ধুলা উড়ে যে ঐ এলাকায় চলাচল করা যায় না। এটা করতে পারলে হাজার হাজার মানুষ মন থেকে আপনার জন্য দোয়া করবে। 

এ বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন প্রভাষক মনির হোসেন বলেন, কৃষি জমির পাশে ইট ভাটা থাকলে ফসলের উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায় ও জীব বৈচিত্র্য ক্ষতির মুখে পড়ে। এছাড়া নিয়ন না মেনে বালু উত্তোলনে যে কোনো সময় ভূমি ধসের ঘটনাও ঘটতে পারে। একারণে ইট ভাটা নির্মাণ বা বালু উত্তোলনের ক্ষেত্রে নিয়ম মানতে হবে।

উপজেলা সূত্রে জানা গেছে গত ১২ ডিসেম্বর নয়ন কুমার রাজবংশী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে যোগদান করলেও এখন পর্যন্ত কোন অবৈধ স্থাপনা, অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তিনি কোন অভিযান পরিচালনা করেননি। অভিযোগ আছে প্রভাবশালীরা উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দেদারসে বালু, মাটি উত্তোলন, ইটভাটা, করাতকল, ক্লিনিক পরিচালনা করে আসছে। শার্শা উপজেলা ব্যাপী অবাধে চলছে অবৈধ ১৯টি ইটভাটা। অনুসন্ধানে জানা গেছে ১৯টি ইটভাটার না আছে পরিবেশ ছাড়পত্র, না আছে জেলা প্রশাসনের অনুমোদন। এরপরও শার্শায় কোন অদৃশ্য শক্তিতে এসব অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। একাধিক ভাটা আছে সরকারি স্কুল ও আবাসিক এলাকার মধ্যে। গত বছর ১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট দেশের সব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে জেলা প্রশাসকদের ব্যবস্থা নিতে আদেশ দেন। হাইকোর্টের নির্দেশের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে যখন অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চললেও শার্শা উপজেলাতে চিত্র ভিন্ন। এখানে প্রশাসন অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। এছাড়াও আবাসিক এলাকার মধ্যে অবৈধ করাতকল থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না উপজেলা প্রশাসন। উপজেলাব্যাপী চলছে মাটি বালু উত্তোলনের মহোৎসব কোন অভিযান না থাকার কারণে কৃষি জমি থেকে প্রথমে গভীর করে মাটি উত্তোলন করে ইটভাটার চাহিদা মিটাচ্ছে। হাওর বাঁওড় ও গভীর পুকুর থেকে দেদারসে চলছে বালু উত্তোলন।  

বেনাপোলের  বাসিন্দা ফারুক আহম্মেদ জানান, অনেক বছর যাবৎ বাহাদুরপুর রোড়ে আবাসিক এলাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত আলামিন স-মিল চালানোর কারণে স-মিলের বিকট শব্দ ও কাঠের গুড়ার কারণে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। একাধিকবার পৌরমেয়র সহ উপজেলা প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি। 

ভুক্তভোগী শার্শার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন জানান, স্বজন ঘেরের পাশে ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলন করে বাড়ির পাশ দিয়ে দিনে ও রাতে দেদারসে বালুবাহী ট্রাক্টর-ট্রলি চলাচলের ফলে ধুলাবালির কারণে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী। রাতেও ঘুমাতে পারছেন না এমনকি স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা পড়ালেখায় ব্যাপক বিঘ্ন ঘটছে। উপজেলা প্রশাসনের কোন তদরকি না থাকায় সাধারণ মানুষ ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

বাহাদুরপুর ইউনিয়নের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গুরুত্বপূর্ণ স্থান বাহাদুরপুর বাঁওড় থেকে জনসম্মুখে মেইন রডের সাথে ব্রিজের পাশে দেদারসে বালু উত্তোলন করে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই।

এছাড়াও শার্শা উপজেলার গোগা ইউনিয়ন, কায়বা ইউনিয়ন, পুটখালী ইউনিয়ন, বাঁগআচড়া ইউনিয়ন, লক্ষণপুর ইউনিয়ন, শার্শা ইউনিয়ন, উলশী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্থানে অবাধে মাটি এবং বালু উত্তোলন করার একাধিক অভিযোগ থাকলেও নেই কোন কার্যকরী পদক্ষেপ। 

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার রাজবংশীকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমিও এমন কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি এবং কয়েকটি ইটভাটার সাথে কথা বলেছি তারা জানিয়েছেন বর্তমানে লাইসেন্স বন্ধ থাকায় তারা লাইসেন্স করতে পারছেন না। আর মাটি এবং বালুর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সেটা সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে জানাবেন। এগুলো দেখার জন্য তিনি আছেন।

তথ্য বলছে, গত ৫ বছরে মাটি ও বালুবাহী অবৈধ যানবাহনের চাপায় ১০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে। যার অধিকাংশ রয়েছে শিশু। এছাড়াও দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অনেকেই। এদের মধ্যে আপাতত পাওয়া কয়েকজন নিহতের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন, ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি শার্শার পাচভুলোট গ্রামের আবু বক্কর ছিদ্দিকের ছেলে মিজানুর রহমান নিহত হয়। গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর শার্শার উলাশী গ্রামের মনির ছেলে আব্দুর রহমান মাটির টলি চাপায় নিহত হয়। ১৯ আগস্ট শার্শার উত্তর বুরুজবাগান গ্রামের মোকসেদ আলীর ছেলে খোরশেদ আলী ইঞ্জিন চালিত অবৈধ নসিমন চাপায় নিহত হয়। 

২০২১ সালের ২২ মে শার্শার সেতাই গ্রামে মাটি বোঝায় ট্রাকটরের চাপায় হাসান আলীর ছেলে বিপ্লব হোসেন নামের এক যুবক ২০২১, সালের ১৪ ডিসেম্বর শার্শার কন্যাদহ গ্রামের কোরবান আলীর ৪ বছরের শিশু সন্তান তামিম ইকবাল বালুবোঝাই ট্রাকের চাপায় নিহত হয়। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি শার্শার রামপুর গ্রামের শরিফুল ইসলামের শিশুসন্তান মাটিবাহী ট্রাকটরের ঢাক্কায় নিহত হয়। ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর শার্শার বসতপুর গ্রামের জতিন দাসের ৭ বছরের শিশু সন্তান সোহাগ দাস মাটিবাহী ট্রাকের চাপায় নিহত হয়। এসময় এলাকার ক্ষুব্ধ জনতা ট্রাকটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়।

শাকিল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ [email protected]