ঋতুরাজ বসন্তের আগমনি বার্তা জানিয়ে সবুজের আবৃত ভেদ করে বাগানের ৩ হাজারের অধিক গাছের ডালে ডালে ফুটেছে আগুন রাঙা শিমুল ফুল। সেই সাথে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ আর ফুলের গন্ধ না থাকলেও এর যেন অন্য রকম শুভাষ ছড়াচ্ছে। আর দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন রক্ত রাঙা লাল ফুল বিছিয়ে ডাকছে প্রকৃতি প্রেমী, পর্যটক ও সৌন্দর্য পিপাসুদের। সেই সৌন্দর্য উপভোগ করতে বাগানে ঢল নেমেছে পর্যটকদের।
মেঘালয় পাহাড় ঘেঁষে যাদুকাটা ও মাহারাম নদীর কোল ঘেঁষে বাগানটিতে প্রকৃতি যেন আপন সৌন্দর্য বিলিয়ে দিয়েছে অপরূপ সাজে। লাল শিমুল ফুলে পুরো এলাকা ছেয়ে আছে তা দেখতে প্রকৃতি প্রেমীদের পদচারণায় মুখর শিমুল বাগান। দেশের উত্তর পূর্বদিকের জেলা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উপজেলায় উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাও গ্রামে দেশের বৃহত্তর এই শিমুল বাগানের অবস্থান।
বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম জয়লান আবেদিন বাগানটি তৈরি করেন। আর তার নামেই এর নাম করন করা হয়েছে জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান।
বাগানের সৌন্দর্য দেখতে দেশে বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটক, সৌন্দর্য পিপাসু ও প্রকৃতি প্রেমীদের আগমন বাড়ায় বাগানটিকে ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপার্জনের পথ সৃষ্টি হয়েছে। বাগানের ভেতর অনেক যুবক আগতদের ছবি তুলে, কেউবা ঘোড়ায় চড়িয়ে,কেউবা ফুসকা চটপটি বিক্রি করে, শিশুরা ফুলের মালা ও বাগানে ভালোবাসার চিত্র একে রাখে সেখানে দাঁড়িয়ে পর্যটকগণ ছবি তুলে টাকা দিচ্ছে এতে করে আয় করছেন তারা।
স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রামে বালু আবরিত ৯৮ বিঘা (এর মধ্য অর্ধেক সরকারি) অনাবাদি পতিত জমিতে ২০০২সালে বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত জয়নাল আবেদীন সারিবদ্ধ ভাবে ৩ হাজারের অধিক শিমুল চারা রোপণ করেন সখের বসে। সময়ের ব্যবধানে এই বাগানটিই এখন আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে দেশ বিদেশি পর্যটকদের কাছে। দুর থেকে দেখলে মনে হবে লাল ফুলের গালিচা বিছায়ে ডাকছে এই শিমুল বাগান।
বাগানের পাশের মানিগাও গ্রামের বাসিন্দা শামিম আহমেদ জানান, সারা বছরেই দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার প্রকৃতি প্রেমী ও পর্যটকের আগমন ঘটে এই বাগানে। তবে রক্ত রাঙ্গা ফুটন্ত শিমুল ফুল গুলো দেখতে এই সময়েই বিদেশি পর্যটকদের আগমন ঘটে। কিন্তু সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকার আগতরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এছাড়াও স্যানিটেশন ও হোটেলে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগ শিকার হচ্ছে আগতরা।
বাগানে আগত পর্যটক শরীফ আহমেদ জানান, বাগানে সারি সারি গাছে লাল টুক টুকে শিমুল ফুল ফুটেছে,ফুলের সৌরভ আর বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ডাক বাগানে পরিবেশটা অন্যরকম। আর এই সৌন্দর্য দেখতে পর্যটকদের আগমনও বাড়ছে।
রাজধানী ঢাকা থেকে আসা পর্যটক লতিফ সরকারসহ পর্যটক ও দর্শনার্থীরা জানান, বাগানটিকে বাহির থেকে একরকম আর ভেতরে আরেক রকম এক কথায় সৌন্দর্যে অসাধারণ। কিন্তু আমাদের মত আগত পর্যটকদের জন্য কোনো ধরনের সুবিধা নেই বাগানে। বাগানে স্যানিটেশনের ভাল মানের ত নেই পর্যাপ্ত স্যানিটেশন না থাকায় নারীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। সড়ক পথে অবস্থা বেশি খারাপ।
আরেক পর্যটক শাকিল আহমেদ জানান, বাগানের সৌন্দর্যে মনে ভরে গেলেও বাগান মালিকের পক্ষ থেকে বাগানে পর্যটকদের জন্য আধুনিকায়ন করা খুবই প্রয়োজন। তাহলে আগতরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে এখানে আসার আগ্রহ আরও বাড়বে।
বাগান মালিকের ছেলে সাবেক চেয়ারম্যান রাখাব উদ্দিন জানান, বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও আগত পর্যটকদের জন্য স্বচ্ছ সুবিধা দিতে চেষ্টা করেছি। বাগানে ফুল ফুটুক আর না ফুটুক প্রকৃতি প্রেমীরা ছুটির দিনসহ বিশেষ দিনগুলোতে বেড়াতে আসেন,বিশেষ করে ফেব্রুয়ারিতে শিমুল ফুল ফুটার পর থেকে পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। সরকারিভাবে পর্যটকদের স্বার্থে চলাচলের সড়কটি গুরুত্ব সহকারে দ্রুত মেরামত করলে আগতরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে।
যেভাবে যাবেন-রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি বিভিন্ন ধরনের বাসে করে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে। এর পর সুনামগঞ্জ আব্দুল জহুর সেতু থেকে সিএনজি বা মটর সাইকেল জন প্রতি ১০০টাকায় লাউড়েরগড় বাজার। বাজার পার হয়ে যাদুকাটা নদী আর নদী পার হলেই শিমুল বাগান। আবার সুনামগঞ্জ আব্দুল জহুর সেতু পাড় হয়ে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি নিয়ে ও মটর সাইকেলে তাহিরপুর উপজেলা এরপর বাদাঘাট ইউনিয়নের বাদাঘাট বাজার হয়ে শিমুল বাগানে যাতায়াত করা যায়।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর