ভাঙ্গায় ফরিদপুরে তার কোটিপতি মাদকাসক্ত স্বামী দীপ সাহার পরিবার ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রিয়ন্তী সাহা। বুধবার সকালে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পৌর সদরের চৌধুরীকান্দা গ্রামে নিজ বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
ফুটপাতে হলুদ-মরিচের ব্যবসা করেন প্রিয়ন্তীর বাবা কুমারেশ সাহা। প্রিয়ন্তীর স্বামী দীপ একজন শিল্পপতির ছেলে।
প্রিয়ন্তী বলেন, ‘আমার বাবা-চাচাদের অনেক লোভ-লালসা দেখিয়েছে। তারা সুখের দিক তাকিয়ে আমাকে বিয়ে দেন ভাঙ্গা বাজারের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী রবিন সাহার ছেলে দীপের সাথে। বিবাহ হয় ২৬ ফেব্রুয়ারি। হিন্দু ধর্মের রীতিতে অনেক কিছু করতে হয়, দীপ প্রথম রাতেই বিবাহ সম্পন্ন না করে নেশায় আসক্ত হন। সে আমাকে একা রেখে নেশা করতে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়, ফিরে আসে ভোররাতে। নেশাগ্রস্ত স্বামীর সঙ্গে কোনোভাবেই আমার সংসার করা সম্ভব নয়।’
প্রিয়ন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাকে জোর করা হতো মদ্য পান করতে। আমি রাজি না হলে নির্যাতন করত শারীরিক-মানসিকভাবে। নতুন অবস্থায় টয়লেটের মধ্যেও আটকে রাখত। আমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড নিয়ে সে (দীপ) সেটাকে চেঞ্জ করে বিভিন্ন অশ্লীল ছবি ফেসবুকে ছেড়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছে। আমি ভাঙ্গা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করব।’
প্রিয়ন্তীর মা শিখা সাহা বলেন, ‘আমার মেয়ে প্রিয়ন্তী এই মুহূর্তে বিবাহ করবে না, তাকে অনেক অনুরোধ করে রাজি করিয়েছি। এমন নেশাগ্রস্ত ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে ওর (প্রিয়ন্তী) জীবনটা বিপন্ন করে ফেলেছি। দীপ নেশাগ্রস্ত, এটা আমাদের জানা ছিল না। আমরা এই নেশাগ্রস্ত ছেলের কাছে আর মেয়ে দেব না। আমাদেরকে দীপের পরিবার অনেক ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। গুলি করে মারবে, এসিড নিক্ষেপ করবে। আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।’
প্রিয়ন্তীর চাচা গোপাল সাহা বলেন, ‘নেশাগ্রস্ত ছেলের নিকট আমার মেধাবী ভাতিজি, সে (প্রিয়ন্তী) ইন্টারমিডিয়েট পড়ে। ওর জীবনটাকে বিপন্ন করে ফেলেছে রবিন সাহা (দীপের বাবা)। আমরা এর বিচার চাই।’
নেশাগ্রস্ত ছেলের সঙ্গে মেধাবী ছাত্রী প্রিয়ন্তীকে বিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী। প্রতিবেশী রানী সাহা বলেন, ‘আমাদের বাড়ির সামনে এসে ছেলে নেশা খেয়ে মেয়ের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। পুলিশ তখন মাদকসহ ওকে (দীপ) হাতেনাতে ধরেছে।’
ভাঙ্গা বাজারের ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, ‘শুনেছি, দীপের বিয়েতে ২০০ ভরির ওপরে স্বর্ণ দিয়েছে। তারা মার্কেট করেছে সিঙ্গাপুর থেকে, এত ব্যয়বহুল বিয়ে আমি জীবনে দেখি নাই।’
দীপের চাচা রাজকুমার সাহা বলেন, ‘আমার ভাইয়ের একমাত্র ছেলে দীপ, আমরা অনেক আনন্দ করে বিয়ে করিয়েছিলাম। কিন্তু দীপ মানসিকভাবে ফিট না, নেশা করে, যার জন্য এমন হয়েছে। আমরা এতে খুশি না। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি ওকে নেশার জগৎ থেকে ফিরিয়ে আনার।’
এ বিষয়ে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন আল রশিদ বলেন, ‘দীপের বিরুদ্ধে আমরা একটা অভিযোগ পেয়েছি। দীপ তার স্ত্রীকে দিয়ে মদ্যপানসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করাতে জোর করত। পরে তার স্ত্রী প্রিয়ন্তীকে আমরা উদ্ধার করে ওর বাবা-মায়ের হাতে দিয়েছি। এরপরও যদি দীপ কোনো অন্যায় করে, আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর