গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাপ প্রবাহে বিপর্যয় জন-জীবন। অসহ্য গরমে বাড়ছে রোগ-বালাই। হিট স্ট্রোকে মরছে মানুষ। জারি করা হয়েছে `হিট অ্যালার্ট‘। বন্ধ দেয়া হয়েছে স্কুলকলেজ। দেশের হাসপাতালগুলোকে দেয়া হয়েছে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ। এখন পর্যন্ত সারা দেশে হিটস্ট্রোকে প্রায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এবার জেনে নেই তাপপ্রবাহ বাড়ার কারণ। সবুজায়ন ধ্বংস, নদী, পুকুর খাল-বিল ও জলাশয় কমে আসা এবং বৈশ্বিক আঞ্চলিক ও স্থানীয় কারণ অন্যতম।
পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো মানুষের কার্যকলাপের ফলে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাস। এই গ্যাসগুলি সূর্যের তাপকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আটকে রাখে, যার ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জীবাশ্ম জ্বালানি দহন, বন উজাড়, কৃষি, শিল্প, যানবাহন, প্রাকৃতিক কারণ, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বরফ গলানো, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তন। মূলত এসব কারণেই তাপ প্রবাহ বাড়ছে।
আবহাওয়া ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এবং নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধির প্রধান কারণ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, যার জন্য উন্নত বিশ্বের বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশগুলোকেই দায়ী করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই বৈশ্বিক কারণ ছাড়াও অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং পরিবেশের অযৌক্তিক ক্ষতি করাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
এখন ভবনগুলোর ডিজাইনই হচ্ছে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রেখে কিংবা শীতাতপ যন্ত্র যাতে বসানো যায় সে চিন্তা করে। অথচ আগে অনেক ভবন এমনভাবে করা হয়েছে যাতে গরমকালে শুধু ফ্যানেই কাজ হতো।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে জলবায়ু নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে, বিশেষ করে মেট্রো রেলের মতো বিদ্যুৎ চালিত গণপরিবহন বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব ভবন নির্মাণ করতেই হবে।খাল, পুকুর-সব ভরাট হয়ে গেছে। জলাধার নেই। এগুলোই তো সাময়িকভাবে তাপমাত্রা কমাতে দরকার হয়।
নগরায়ণের পাশাপাশি শহরগুলোকে কীভাবে আরো বেশি পরিবেশবান্ধব করা যায়, সে পরিকল্পনার ওপর জোর দেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত হবার সাথে সাথে নগরায়ণ বাড়বে। কিন্তু শহরগুলোকে একটি মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় এনে, গ্রিনারি বা সবুজায়ন নিশ্চিত করতে হবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য।
শহরগুলোর জনসংখ্যা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। শহরের সুবিধাগুলোকে শহরের বাইরে ছড়িয়ে দিতে হবে। এভাবে জনসংখ্যায় ঘনত্ব কমাতে হবে। পাশাপাশি ভবনগুলোকে পরিবেশ বান্ধব করতে হবে।
বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে দাবদাহ বা তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও নতুন নতুন রেকর্ড হয়েই চলেছে।
এর আগে ২০২১ সালের ২৫শে এপ্রিল আগের ২৬ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে তাপমাত্রার ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড হয়েছিলো বাংলাদেশে এবং ওইদিন দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো।
এবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে গতকাল ২০শে এপ্রিল যশোরে ৪২ দশমিক ছয় ডিগ্রি। যদিও এক সাথে অনেকগুলো জায়গায় ৪০ ডিগ্রি বা তার বেশি তাপমাত্রা দেখা যাচ্ছে এবার।
জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ, আবহাওয়াবিদ এবং নগর পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে আগামী কয়েক বছরে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রার এমন বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। তাপ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশে রোগ-বালাই বৃদ্ধি পাবে। জন-জীবন বিপর্যয় হবে। হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা আরও দীর্ঘ হবে এবং অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের সংকটে পড়বে বাংলাদেশ।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর