• ঢাকা
  • ঢাকা, রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪
  • শেষ আপডেট ১৮ সেকেন্ড পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৫ মে, ২০২৪, ০৪:৫৩ দুপুর
bd24live style=

বাস্তবে সম্পদের পাহাড়, হলফনামায় নেই

ছবি: প্রতিনিধি

কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুর রহমান। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ছিলেন। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় তাঁর বিরুদ্ধে সম্পদের হিসাব বিবরণীতে তথ্য গোপন করার অভিযোগ উঠেছে।

হলফনামায় তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাস ও ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যা উল্লেখ করেছেন তাকেও গত ছয় বছরে মুজিবুর রহমানের সম্পদ ও আয় কয়েক গুণ বেড়েছে। উচ্চমাধ্যমিক পাস মুজিবুর রহমানের পেশা ডেইরি ফার্ম ও ফিশিং বোট। তাঁর নগদ টাকা আছে ৩৩ লাখ। কৃষি খাত থেকে তিনি বার্ষিক আয় করেন ৩২ হাজার, বাড়ি ভাড়া থেকে পান ১৪ লাখ ১২ হাজার ৭০০ টাকা। ব্যবসায় তাঁর বার্ষিক আয় ৪০ লাখ ২০ হাজার। ফার্ম থেকে তাঁর আয় ৩৭ হাজার এবং নির্ভরশীলদের আয় ৭২ হাজার টাকা।  

স্থাবর সম্পদের মধ্যে মুজিবুর রহমানের নিজের নামে ৭ লাখ টাকার দশমিক ২১৫৪ একর জমি, ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার ১ দশমিক ৫১ একর, ৫৬ হাজার টাকার ১৪ শতক কৃষিজমি রয়েছে। তিনি ২০২১ সালের একটি মামলার আসামি। তাঁর কোনো দায় ও ঋণ নেই।

এদিকে তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তিনি শত কোটি টাকার মালিক। যা হলফনামায় উল্লেখ করেননি। তাদের দাবি, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মুজিবুর রহমান নানা উপায়ে হয়েছেন টাকার কুমির। স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসেব কষাই যেন জটিল ধাঁধা।

এর মধ্যে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির গন্ধ উঠে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের গায়ে। বিশাল এই দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করতে অবশেষে মাঠে নেমেছিলো দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

দুদক সূত্রে জানা যায়, পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির নানা অভিযোগ ওঠে আসছিল। অভিযোগের মধ্যে অন্যতম হলো, শহরের ঝাউতলাস্থ হোটেল সি-কুইন মার্কেটের সাথে লাগোয়া সমবায় মার্কেট নির্মাণ করে সরকারি কোষাগারে নামমাত্র পে-অর্ডার জমা করে প্রত্যেক দোকানের ভাড়াটিয়া মালিক থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়, একইভাবে বাস টার্মিনালে দোকান নির্মাণ করে সরকারি কোষাগারে নামমাত্র পে-অর্ডার জমা করে প্রত্যেকটি দোকান থেকে ১০-১৫ লাখ করে নগদ অর্থ আদায়, ঐতিহ্যবাহী বাঁকখালি নদীর তীর দখল করে গরুর খামার, কক্সবাজার পৌরসভায় টমটমের (ইজিবাইক) লাইসেন্স বিক্রি করে অর্ধশত কোটি টাকা আয়, পৌরসভার প্রত্যেক উন্নয়ন প্রকল্প থেকে তার মনোনীত ইঞ্জিনিয়ার টিটনকে দিয়ে কড়াই গণ্ডায় হিসাব করে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমিশন আদায়, সুগন্ধা পয়েন্টের সরকারি খাসজমির ওপর ৬০টি দোকান ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কলাতলীর সরকারি খাসজমিতে কাঁচা ভবন নির্মাণ, ব্যক্তিমালিকানাধীন ১০টি হোটেল ও রিসোর্ট দখল এবং অর্থ উত্তোলন, অনিয়মের মাধ্যমে কক্সবাজার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে অর্থ উত্তোলন, ২৬টি মেগা প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে ঘুস গ্রহণ, ঘুস নিয়ে কক্সবাজারে দুটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য এবং কক্সবাজার পৌরসভার ৪৪টি উন্নয়নমূলক কাজ থেকে ১০ শতাংশ সুদ গ্রহণসহ সরকারি অর্থ-সম্পত্তি আত্মসাৎ ও অর্থ পাচার। এছাড়াও হোটেল মোটেল জোনের ইকরা মিজান নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে মেয়র মুজিবুর রহমান ৫০০ কোটি টাকা দুবাই পাচারসহ স্ত্রীর এক শত ভরি স্বর্ণ থাকার অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়াও ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে মেয়র, তার ছেলে ও শ্যালকের অ্যাকাউন্ট থেকে সম্প্রতি ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা জব্দ করেছিলেন দুদক।

শুধু তাই নয়, ফোনে গুলি করে হত্যার হুমকির পর এবার হোটেল ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছিলো মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। এমন একটি অডিও রেকর্ড প্রকাশ পেয়েছিলো। অডিও রেকর্ডটিতে দেলোয়ার নামে এক হোটেল ব্যবসায়ীকে গুলি করার হুমকির ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 

এদিকে এর আগে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগে ২০২২ সালের ২১ মার্চ মেয়র মুজিবুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগের মধ্যে ছিল- বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, পানি শোধনাগার প্রকল্পে দুর্নীতি, সরকারি জমিতে মার্কেট নির্মাণ করে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, অর্থ পাচার, অবৈধ সম্পদ অর্জন ইত্যাদি। ওই সময় দুদকের উপ-পরিচালক মো. আলী আকবর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

মুজিবুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। অনুসন্ধানে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযোগে জানা যায়, ভূমি অধিগ্রহণের নামে কক্সবাজারের ৩ মেগা প্রকল্পে সংঘটিত হয়েছে ৭৮ কোটি টাকার দুর্নীতি। এ দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় ১৪০ জনকে চার্জশিটভুক্ত আসামি, ১৫ জনের বিরুদ্ধে নতুন মামলা এবং ৯৬ জনের বিরুদ্ধে সম্পদ অনুসন্ধানের নোটিশ করার অনুমতি চেয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তিনটি তদন্ত প্রতিবেদন গিয়েছিল গত বছরের ৩০ জুন। কিন্তু ৬২০ পৃষ্ঠার সেই তিন তদন্ত প্রতিবেদন ধামাচাপা পড়ায় ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন ৭৮ কোটি টাকা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা প্রধান হোতারা। ৩ তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিলো এদের মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান অন্যতম। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছিলেন চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন। শরিফ উদ্দিনের এ তিনটি তদন্ত প্রতিবেদন আমলে না নিয়ে ওই সময় তা পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন কমিশন।

সৌদি আরবের মুজিবুর রহমানের ২৮ টি পেট্রোল পাম্প রয়েছে বলে দাবি করেন কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কায়সারুল হক জুয়েল। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি সভায় জুয়েলসহ তার অপরাপর ভাইয়েরা মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকে দুই দফা মনোনয়ন বাণিজ্য, দলীয় পদ বাণিজ্য, দুর্নীতি ও দখলবাজি করে হাজার কোটি টাকার সম্পদের পাহাড়সহ তিনি এবং তার সিন্ডিকেট টাকার বিনিময়ে জামায়ত-বিএনপি, ইয়াবা ব্যবসায়ী ও পেশাদার অপরাধীদের আওয়ামী লীগে পুনর্বাসন করছেন বলেও দাবি করেন।

এরআগে কক্সবাজার সসদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কায়সারুল হক জুয়েলের দাবি করেছেন, মনোনয়ন বাণিজ্য, দুর্নীতি ও দখলবাজি করে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। তিনি একর মিজান নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে ৫০০ কোটি টাকা দুবাই পাচার করেছেন। তার স্ত্রীর এক হাজার ভরি স্বর্ণ রয়েছে। ফেসবুকে দেওয়া পৃথক দুটি স্ট্যাটাসে এমনটাই দাবি করেন জুয়েল। এছাড়া আরেকটি পোস্টে মুজিবের চাচাতো ভাই জুয়েল দাবি করেছিলেন, সম্প্রতি শেষ হওয়া ইউপি নির্বাচনে জেলার প্রায় সব নৌকার প্রার্থীর কাছে মেয়র মুজিব ঘুস নিয়েছেন। সদরের খুরুশলকুলের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহজাহান সিদ্দিকীর মনোনয়নের জন্য তিনি নিজ হাতে মেয়র মুজিবকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছেন।

তবে এসব অভিযোগ রাজনৈতিক ও প্রতিপক্ষের প্রতিহিংসা- এমন উল্লেখ করে মেয়র মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এসব অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ। আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি দুদক বা যে কোনো সংস্থা কিংবা ব্যক্তি যদি আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার, হোটেল দখলের একটি অভিযোগও প্রমাণ করতে পারে, তাহলে আমি কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করব।’

আমার ব্যবসা বাণিজ্য সব পরিষ্কার দাবি করে মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দুদক এর আগেও আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করেছিল, তখন কোন ধরনের অনিয়ম পায়নি। আশা করি ভবিষ্যতেও পাবে না। আমি জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করি, উন্নয়নের রাজনীতি করি। উন্নয়নের মাধ্যমে কক্সবাজারকে আধুনিক কক্সবাজারে রূপান্তরিত করে আমার বিরুদ্ধে সব অপপ্রচারের জবাব দেব।’

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:



BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ [email protected]