ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরায়েল বাহিনীর আগ্রাসন, নির্বিচারে হত্যার প্রতিবাদ ও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের ঘোষণার দাবিতে ফিলিস্তিনের মানব পতাকা প্রদর্শনের মাধ্যমে অভিনব কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন: সলিডারিটি ফ্রম বাংলাদেশ’ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
এ সময় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা চলমান। ইসরাইলী জায়নবাদী রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের নারী-শিশুসহ সিভিলিয়ানদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। এ ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামীদের পাশে রয়েছি। আমরা অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতি চাই এবং গাজায় চিরতরের জন্য যুদ্ধ বিরতি চাই। বৈশ্বিকভাবে আমরা আজকের এই সমাবেশ ও মানব পতাকা কর্মসূচি থেকে বার্তা দিতে চাই বাংলাদেশের তরুণ সমাজ ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আছে। আজকে আমরা এই সমাবেশ থেকে তিনটি সুস্পষ্ট দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমি যখন প্যালেস্টাইনের খবর দেখি তখন রাতে আমার ঘুম হয় না। নারী ও শিশুদের ছিন্নভিন্ন রক্তাক্ত দেহ দেখে রাতে ঘুমাতে পারি না। এগুলা কি মানুষ যারা এভাবে মানুষ হত্যা করছে? গাজায় ইসরাইলের আক্রমণে এখন পর্যন্ত ৬৭ শতাংশ বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয়েছে। ৩৫ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এর প্রথম তিন দিনেই পনেরো হাজারের বেশি হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি নারী ও শিশু।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল ছাত্রসংগঠনগুলোকে একত্রিত হয়ে একটি বৃহৎ ছাত্র সমাবেশের আহ্বান জানিয়ে ঢাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ফিলিস্তিনে আজকে যা হচ্ছে তা মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে বর্বর ঘটনা সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। গাজাতে ইতোমধ্যে ইসরায়েলী বাহিনীর আক্রমণে ৬৭ শতাংশ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সবচেয়ে বড় ধ্বংসযজ্ঞের রেকর্ড ভেঙেও অনেক উপরে চলে গিয়েছে। ৩৫ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েলিরা যার মধ্যে ৭০ শতাংশ হচ্ছে নারী এবং শিশু এবং ৮০ শতাংশ হচ্ছে সাধারণ নাগরিক যাদের সাথে গাজা যুদ্ধের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
তিনি আরও বলেন, গতকাল ইসরায়েলী বাহিনী কর্তৃক মিশর সীমান্তে অবস্থিত রাফা দখলের মাধ্যমে আরও খারাপ অবস্থায় পড়বে গাজাবাসী। রাফা দখলের মাধ্যমে ইসরায়েলিরা মিশর-ইসরায়েলের যে ডেভিড চুক্তি সেটি ভঙ্গ করেছে। এটিই একমাত্র সীমানা যেখান দিয়ে আহত ফিলিস্তিনি নাগরিকদের জন্য এইড আসতো, ক্ষুধার্ত লোকদের জন্য খাবার আসতো। আজ সেই রাস্তাও বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। আমরা আশা করবো ফিলিস্তিন একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে এবং জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য হবে।
লেখক রাখাল রাহা বলেন, এই আগ্রাসন শুরু হয়েছে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই। তারপর থেকেই নানা চড়াই উতরাই পার করে আজকের এই অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে ফিলিস্তিনকে জাতিগত উচ্ছেদ বা জাতিগত নির্মূলের অবস্থায় নিয়ে গেছে ইসরায়েল। এই উচ্ছেদ আয়োজন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এই হামলায় সরাসরি মদদ দাতা যুক্তরাষ্ট্রকে এই সমর্থন থেকে ফিরে আসতে হবে।
মানব পতাকা প্রদর্শনের পাশাপাশি সমাবেশে তিনটি দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো, গাজায় গণহত্যা বন্ধ করা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দমননীতি বন্ধ করা এবং ইসরায়েলে সামরিক সহায়তা বন্ধ করা।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর