
গত বৃহস্পতিবার পাহাড়ি-বাঙালির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অশান্ত হয়ে উঠে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। এ দাঙ্গা খাগড়াছড়ি ছাড়িয়ে রাঙ্গামাটিতেও ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের ঘটনায় খাগড়াছড়িতে ৩ জন নিহত ও আহত হন অন্তত ১৭ জন।
এর জেরে শুক্রবার ৩ পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘন্টার সড়ক অবরোধ ঘোষণা করে ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা’ নামে একটি সংগঠন। টানা ৭২ ঘন্টার এ অবরোধের সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টায়।
এর আগে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে সীমিত পরিসরে দূরপাল্লার বাস খাগড়াছড়ি ছেড়ে যায়। তবে আগামীকাল সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হবে পুরোদমে। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হলেও উদ্বেগ উৎকন্ঠা আর আতংক পিছু ছাড়ছেনা জনসাধারণের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে এখনো আতংক সৃষ্টি করছে একটি কুচক্রী মহল। গুজব ছড়ানো এসব ফেসবুক আইডিকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়ে পুলিশ।
এ উদ্বেগ উৎকন্ঠা দূর করে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখতে পাহাড়ি-বাঙালি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে গ্রামে গ্রামে চলছে শান্তি বৈঠক। বাঙালিদের পাশাপাশি এসব বৈঠকে অংশগ্রহণ করছেন পাহাড়ি সমাজের নানান স্থরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। বৈঠক শেষে শান্তি প্রতিষ্ঠায় একাত্মতা ঘোষণা করেন সবাই। শান্তি ও সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতেই শনিবার খাগড়াছড়ি পরিদর্শন করে গেছেন ৪ উপদেষ্টা।
এদিকে সোমবার খাগড়াছড়ির আঞ্চলিক সড়কগুলোতে সীমিত আকারে যাত্রীবাহী সিএনজি ও মাহিন্দ্র চলতে দেখা গেছে। তবে জেলা শহরের চিত্র ছিল অনেকটাই স্বাভাবি।
খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের (শান্তি পরিবহন) অফিস সহকারী সুমন নাথ বলেন, '৭২ ঘন্টার সড়ক অবরোধে আমাদের ঢাকা-চট্রগ্রামসহ সকল দূরপাল্লার বাস বন্ধ ছিল। এতে আমাদের চালক, সুপারভাইজার, হেলপার সবাই বেকার হয়ে পড়েছিল। সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচিগুলোর জন্য জনসাধারণের মাঝে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়। এই অবরোধে সার্বিকভাবে আমাদের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়ক অবরোধ কারও জন্য কাম্য নয়।'
খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন জীপ মালিক সমিতির সভাপতি মো. মফিজুর রহমান বলেন, 'প্রতিদিন গড়ে ১৫০-২০০টি জিপগাড়ি সাজেকসহ বিভিন্ন জায়গায় ভাড়া যেত। ৩দিন কোন গাড়ি কোথাও যেতে পারেনি। গাড়ি চলার উপর নির্ভর করে চালক-হেলপারের সংসার চলতো। আমাদের এখানে পাহাড়ি-বাঙালি সবাই রয়েছে। অবরোধের কারণে ৩দিন সবাই বেকার ছিল। এতে অনেকে পরিবারের সংসার চালাতে কষ্ট হয়ে পড়েছে। এতে আমাদের গড়ে দৈনিক ৩০ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। ৩ দিনের অবরোধে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে জনদুর্ভোগ লাঘবে ভবিষ্যতে সড়ক অবরোধ না দিতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।'
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, 'খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি আগের চেয়ে স্বাভাবিক হয়েছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ি-বাঙালি মিলে শান্তি সমাবেশ করে সম্প্রীতি বজায় রাখতে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। আমরা সবাই মিলেমিশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ণ রেখে চলতে চাই। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এছাড়াও জেলায় যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে। সেনাবাহিনী ও বিজিবিও মাঠে তৎপর রয়েছে।'
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, 'সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনরুদ্ধারে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে শান্তি বৈঠক করা হচ্ছে। শান্তি ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি ৪জন উপদেষ্টা মন্ডলী খাগড়াছড়ি পরিদর্শন করেছেন, মিটিং করেছেন। আমরা সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছি। খাগড়াছড়িতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।'
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর