
‘কুরবানি দেওয়ার জন্য গরু কিনলাম। ঘরে ঈদের খুশি। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। ছেলেহারা এ রকম ঈদ যেন কারও না হয়। আমাদের এতিম করে কোথায় চলে গেলি রে বাপধন। এখন কীভাবে থাকব। তোর মা কীভাবে থাকবে। তুই ফিরে আয়।’ -চট্টগ্রামের ভাষায় এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম তুষারের বাবা আবুল মনছুর।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে কালুরঘাট সেতুতে ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ওরফে তুষার (২৭)। চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর পূর্ব গোমদণ্ডীর বাংলাপাড়া এলাকায় তার বাড়ি। পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ছিলেন তিনি।
শুক্রবার (৬ জুন) দুপুরে তুষারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেমিপাকা ঘরে উপচে পড়ছে মানুষ। প্রতিবেশীরা আসছেন সান্ত্বনা দিতে। ঘরের দুয়ারে বসে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন বাবা আবুল মনছুর (৫৫)। আত্মীয়স্বজন এলেই তার কান্নার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছিল। বারবার ছেলের কবরের দিকে ছুটে যেতে চাইছিলেন তিনি। একই অবস্থা তুষারের মা রিজিয়া বেগমের (৫০)। ছেলের রেখে যাওয়া জামা ও জুতা বুকে জড়িয়ে ধরে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ছিলেন তিনি।
তুষার তিন ভাইবোনের মধ্যে একমাত্র ভাই। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। বড় বোন রুমা আক্তার বলেন, ‘ঘরে শোক কাটছেই না। মাত্র পাঁচ দিন আগে জ্যাঠাতো বোন খালেদা বেগম হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে। সেই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ভাইকে হারালাম। ভাই তুষার আর খালেদার কবর পাশাপাশি।’
নিজের অবস্থার কথা জানিয়ে আবুল মনছুর বলেন, তিনি অসুস্থ। ভালোভাবে হাঁটতে পারেন না। তুষারই ছিলেন পরিবারের একমাত্র ভরসা। এখন ছেলের মৃত্যুর পর পরিবার চালানোর কেউ রইল না।
তিনি বলেন, তুষার যে ঘরটিতে থাকতেন, সেটি এখন নিস্তব্ধ। অন্ধকার ঘরজুড়ে জমে আছে স্মৃতি।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর