
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া উত্তর উথলী এলাকার মো. আনোয়ার হোসেনের ছেলে রকি ড্রাইভার। পিকআপ চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসা রকি প্রতারকচক্রের খপ্পরে পড়ে এখন নিঃস্ব। প্রতারণার বিষয়ে থানায় মামলা করতে না পেরে ন্যায়বিচারের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি।
রবিবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে প্রতারকচক্রের বিচার দাবি করে মানিকগঞ্জ সদর থানা আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেছেন তিনি।
আদালতে দাখিলকৃত মামলা সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিম খণ্ড এলাকার মৃত হাবিজ উদ্দিনের ছেলে আশরাফুলের নিকট থেকে তার ব্যবহৃত ও মালিকানাধীন একটি পিকআপ গাড়ি ক্রয় করেন রকি ড্রাইভার। ঢাকা মেট্রো ন১৯-৬৯১৮ রেজিস্ট্রেশন নম্বরের গাড়িটি নগদ ৭ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেন রকি।
পিকআপ গাড়িটির নদগ মূল্য বুঝে পেয়ে গাড়ির সমস্ত কাগজ-পত্রাদিসহ গাড়িটি রকি ড্রাইভারকে বুঝিয়ে দেন আশরাফুল। নোটারি কার্যালয়ের মাধ্যমে গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনও করে দেন তিনি। এরপর রকি মিয়া এই গাড়িটি গাজিপুর থেকে মানিকগঞ্জে নিয়ে এসে পরিচালনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পহেলা নভেম্বর রকির পিকআপের লক ভেঙ্গে কাগজ-পত্রাদিসহ শাহ জালাল নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে দেন মানিকগঞ্জ সদর থানার এস.আই মুক্তার হোসেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রকি ড্রাইভার বলেন, নিজের জমানো কিছু টাকা ও বিভিন্ন এন.জি.ও থেকে লোন নিয়ে মোট সাত লক্ষ নব্বই হাজার টাকা দিয়ে নগদে আশরাফুলের কাছ থেকে রবিবার পিকআপটি ক্রয় করি আমি। এসময় গাড়ির মূল মালিক শাহ জালালের নিকট থেকে এফিডেভিটের মাধ্যমে আশরাফুলের মালিকানা কাগজপত্রসহ গাড়ির সকল মূল কাগজপত্র বুঝিয়ে দেন আশরাফ।
গাড়িটি ক্রয় ও টাকা লেনদেনের সময় আশরাফের শশুড় রফিকুল ইসলাম, শ্যালক রাব্বি মিয়া ছাড়াও ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যম হিসেবে আশরাফুলের এলাকার সাইফুল ও সুমন উপস্থিত ছিলেন। সকলের সামনেই নগদ টাকা পরিশোধ করে গাড়িটি ক্রয় করে মানিকগঞ্জে নিয়ে আসেন তিনি। কিন্তু সদর থানা পুলিশ সেই গাড়িটি রাতের আঁধারে লক ভেঙ্গে কাউকে কিছু না জানিয়ে শাহ জালালকে দিয়ে দেন।
তিনি তার গাড়ি ক্রয়ের প্রমাণ পত্র দেখালেও সেগুলো কোনো আমলেই নিচ্ছে না সদর থানা পুলিশ। পরে তিনি আশরাফের এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন আশরাফুলসহ সকলেই একটি প্রতারক চক্র। এভাবেই তারা গাড়ি বিক্রি করে থানা পুলিশের সহায়তায় আবার তা ফিরিয়ে নেন। যে কারণে তার সকল বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও পুলিশ এ ঘটনায় কোন মামলা নিতে নারাজ বলে জানান তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ সদর থানার উপ-পরির্দশক (এসআই) মুক্তার হোসেন বলেন, শাহ জালাল নামে গাজীপুর জেলার এক ব্যক্তি মানিকগঞ্জ সদর থানায় তার পিকআপটি হারিয়েছে মর্মে জিডি করেন। পরে পহেলা নভেম্বর তার গাড়িটি উদ্ধার করে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। বাকী তথ্য ওসি সাহেব দিতে পারবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পরে মানিকগঞ্জের সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস.এম আমান উল্লাহ সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গাড়িটির জিডি এবং উদ্ধারের বিষয়ে অবগত রয়েছেন তিনি। গাড়িটি কিনে রকি প্রতারণার শিকার হয়েছে। রকি গাড়িটি যেখান থেকে ক্রয় করেছেন সেখানে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রকির আইনজীবী খন্দকার সুজন হোসেন বলেন, গাড়িটির মূল কাগজপত্রে শাহ জালালের নাম রয়েছে। শাহ জালালের নিকট থেকে গাড়িটি এফিডেভিটের মাধ্যমে আশরাফুল ক্রয় করে রকির নিকট বিক্রি করেন। কিন্তু সদর থানা পুলিশ বড় একটি প্রতারকচক্রকে ধৃত করার সুযোগ হাতছাড়া করে গাড়িটি শাহ জালালের নিকট হস্তান্তর করায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় রকি।
পরে বিষয়টি নিয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানা আমলি আদালতে মামলা দায়ের করা হলে বিচারক মামলাটি আমলে গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পিবিআই’র সুষ্ঠু তদন্তে অবশ্যই প্রতারণার বিষয়টি উঠে আসবে এবং রকি ন্যায় বিচার পাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর