ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট ২০২৪। কেবল সদ্যবিদায়ী বছরেই নয়, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ইতিহাসে আলো ছড়িয়ে থাকা মহাকালের দীপ্তি ছড়ানো একটি দিন। এই দিনেই শেখ হাসিনার দীর্ঘ স্বৈরাচারী শাসনের ছায়া থেকে বাংলাদেশ উজ্জ্বলতার সাথে বেরিয়ে এসেছে। সেদিন থেকেই নতুন বাংলাদেশে সম্ভাবনার আকাঙ্ক্ষা উঁকি দিচ্ছে কোটি জনতার মানসপটে।
কেমন হবে আগামীর বাংলাদেশ?
যেখানে দেশের প্রতিটি নাগরিক সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে বসবাস করবে। নাগরিক অধিকার সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে প্রাধান্য দেবে রাষ্ট্র। গণমানুষের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করবে না কোনো কালো আইন। মানুষ ফিরে পাবে গণতান্ত্রিক সকল ন্যায্য অধিকার। সাম্য, মর্যাদা ও মানবিকতার অনুপম দৃষ্টান্ত হবে এই লাল সবুজের ছাপান্ন হাজার বর্গ মাইল। এমনই আশাবাদের দোলাচল কোটি জনতার হৃদ্স্পন্দনে।
বিগত ফ্যাসিস্ট আমলের রাজনৈতিক বিদ্বেষ, হানাহানি, পেশিশক্তির অপপ্রয়োগ, ভিনদেশি আগ্রাসন, প্রাণহানি ইত্যাদি ভীতিকর অভিজ্ঞতা থেকে নিস্তার চায় পরিবর্তিত বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনতা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলছেন অনেকেই। কেমন হবে সেই রাজনৈতিক ইশতেহার। আর কারাই বা গড়ে তুলবেন জনআকাঙ্খার নিরাপদ বাংলাদেশ।
এসব প্রশ্ন মনে আসলে কেবল ঐতিহ্যের ঝাণ্ডাবাহী লড়াকু একটি সংগঠনের নাম আমাদের চেতনায় কড়া নাড়ে। ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল’ প্রতিশ্রুতিশীল সেই নাম।
বিগত ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে সম্মুখসারিতে নেতৃত্ব দেওয়া এই সংগঠনটির অনন্য ভূমিকার কথা আজ কারো অজানা নয়। বিপ্লবী রক্তে রঞ্জিত ছাত্রদলের দুই শতাধিক শহিদ এই আন্দোলনে অসীম সাহসে বুক পেতে দিয়েছেন। ছাত্রদলের আপসহীন লড়াই-সংগ্রাম জুলাই আগস্টের আন্দোলনের টাইমলাইনে সীমাবদ্ধ ছিল না। ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পুরো সময়টা জুড়েই তারা সরব আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। জীবন বাঁচাতে ছলচাতুরি নয় বরং বুক ফুলিয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছে ছাত্রদল। তাই বৈরী সময়েও শোষকের চোখে চোখ রাঙাতে পিছপা হয়নি শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া এই দলের কর্মী বাহিনী।
সেকারণেই পরিবর্তিত সময়ে দেশ গঠনে যখন ছাত্রদের কথা সামনে আসে তখন আবশ্যিকভাবেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নামটি সাহসের সারথি হয়ে উচ্চারিত হয়।
গতকাল ছিল ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আজকের এই দিনে সন্ত্রাস ও হানাহানিমুক্ত শিক্ষাঙ্গণ গঠন, দেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে মেধাবী নেতৃত্ব গঠনের যে লক্ষ্যে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা আজও অব্যাহত রয়েছে। স্বৈরাচার ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশে তারাই গড়ে তুলবে জনআকাঙ্খার পরিবর্তিত বাংলাদেশ।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। ছাত্রদল তাঁদের পথচলায় সান্নিধ্য পেয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসের অনন্য এক নেত্রী আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এবং বর্তমান সাংগঠনিক অভিভাবক জনাব তারেক রহমানের। তাঁদের নেতৃত্বে ছাত্রদল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কাজ করে যাচ্ছে দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে। দেশের জন্য লড়াই করে জীবন দিয়েছে ছাত্রদলের বহু নেতাকর্মী। সকল চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে বুক চিতিয়ে লড়াই করে গেছে ছাত্রদল। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে নিরঙ্কুশ ভূমিকা ছিল ছাত্রদলের। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর পরিবর্তিত বাংলাদেশে ছাত্রদলের উপরে এসেছে এক মহান দায়িত্ব। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের নৈরাজ্য, সিট বাণিজ্য, গেস্টরুম কালচার সাধারণ ছাত্রদের বিষিয়ে তুলেছে। ছাত্রদল শিক্ষাঙ্গনে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে, আগামীর দিনেও কাজ করতে তাঁরা অঙ্গীকারবদ্ধ।"
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, “পরিবর্তিত বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল অত্যন্ত পজেটিভ একটি ছাত্র রাজনীতির সূচনা করেছে। শিক্ষা অধিকারের পাশাপাশি আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে ছাত্র নেতৃবৃন্দকে ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক, জনাব তারেক রহমানের নির্দেশক্রমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আপনারা ইতোমধ্যে খেয়াল করে থাকবেন, বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে আমাদের নেতৃবৃন্দরা বৃক্ষরোপণ করছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় পাখিদের জন্যে কৃত্রিম বাসা স্থাপন করছে। ক্যাম্পাসে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করছে। ডাস্টবিন কিংবা সুপেয় পানি পানের ব্যবস্থার জন্যে ফিলটার স্থাপন করছে। রাস্তায় ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। যেকোনো দুর্যোগ-দূর্বিপাকে প্রথম যাদের সাহায্যকারী হিসাবে দেখবেন তারাই আমাদের বিগত দিনের রাজপথের প্রথম সারির ছাত্র নেতৃবৃন্দ। সবশেষ জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে যে সংগঠন বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে পারে, সেই সংগঠনই আগামীর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে। আপনারা যারা বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সবসময়ই আপনাদেরকে পাশে পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে। সকলে মিলেই আমরা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়বো। ইনশাআল্লাহ"
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, “পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার জন্য ছাত্রদলের ভূমিকা অপরিসীম। আমরা বিগত দিনে যেভাবে দেশের প্রয়োজনে আন্দোলন সংগ্রামে নিয়োজিত ছিলাম, একইভাবে আমরা আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক জনাব তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাব। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্তৃক ঘোষিত বিএনপির রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১দফা রূপরেখা নিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। ছাত্রদল শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে, তাঁদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্য নিরলস কাজ করেছে এবং সামনের দিনেও যে অব্যাহত রাখবে, তা আমরা শিক্ষার্থীদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছি। ছাত্রদল বিগত দিনের মতো যেকোনো প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কিংবা দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে প্রয়োজন হলেই রাজপথে থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি দেশের সকল ধর্ম বর্ণ শ্রেণি বৈষম্যের ঊর্ধ্বে গিয়ে ছাত্রদল একটি সার্বজনীন ছাত্র সংগঠন”
ছাত্রদল শিক্ষাঙ্গনে পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা, সামাজিক কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপণ, পানির ফিলটার স্থাপন, পাখির বাসা বানিয়ে দেওয়া, আবর্জনা পরিষ্কার করা থেকে শুরু গুরুত্ব দিচ্ছে সহশিক্ষা কার্যক্রমে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে “শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ-সুন্দর প্রজন্ম গঠনই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সংকল্প” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে ছাত্রদল ইউনিটগুলোতে আয়োজন করেছে বিভিন্ন খেলাধুলার। কেন্দ্রীয়ভাবেও থাকছে ব্যাডমিন্টন এবং ফুটবল প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রদল আহত এবং অসুস্থ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে, দায়িত্ব নিচ্ছে। এভাবেই পরিবর্তিত বাংলাদেশে নিজেদের মহান দায়িত্ব নিয়ে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে ছাত্রদল।
স্বাধীনতার মহান ঘোষক, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেমের অনুপম আদর্শ, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার আপসহীন চেতনা আর জননেতা তারেক রহমানের সুযোগ্য নির্দেশনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের আন্দোলনে অবিচল থাকবে, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখার জন্য সচেষ্ট থাকবে।
লেখক: মাহবুব নাহিদ
কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট
(খোলা কলাম বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বিডি২৪লাইভ ডট কম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)
সর্বশেষ খবর