
বর্তমান বাংলাদেশের যুব সমাজের একটি বড় অংশ ক্রমশ অনলাইন ক্যাসিনো ও মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। পরিশ্রমহীনভাবে রাতারাতি ধনী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে বেকার শিক্ষিত ও অশিক্ষিত অনেক যুবক অনলাইন জুয়া ও মাদকের ফাঁদে পা দিচ্ছে। শুধু শহরেই নয়, গ্রামেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই মরণব্যাধি।
অনলাইন জুয়া ও মাদকের কারণে দেশে দিন দিন বাড়ছে পারিবারিক কলহ। অনেক সন্তান বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। অনেকে নেশার টাকা যোগাড় করতে নিজ ঘরে চুরি করছে, এমনকি বাবা-মায়ের ওপর হাত তুলতেও দ্বিধা করছে না। অনেক ক্ষেত্রে অনলাইন জুয়া ও গেম খেলে সন্তান পুরো পরিবারকে পথে বসিয়ে দিচ্ছে।
সাংবাদিক মনজুরুল ইসলামের জনপ্রিয় ফেসবুক অনুষ্ঠান “এখন আমি কি করবো?”-এর কয়েকটি পর্বে অনলাইন জুয়া ও মাদকের ভয়াবহতার চিত্র উঠে এসেছে। এক পর্বে দেখা যায়, এক পুলিশ সদস্য অনলাইন জুয়া খেলতে খেলতে তার অর্থ-সম্পদ, স্ত্রী ও সন্তান হারিয়েছে। দেনার দায়ে তিনি এলাকা ছেড়ে মাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমানে মাসে মাত্র ১০-১২ হাজার টাকা আয় করে কোনোমতে বেঁচে আছেন। পাওনাদারদের ভয়ে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছেন না। তার প্রায় ৪০-৪২ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে, যা শোধ করার কোনো উপায় তার নেই।
রংপুরের আরেক যুবকের গল্পও হৃদয়বিদারক। তিনি তার বাবার কয়েক লাখ টাকা অনলাইন গেমে নষ্ট করেছেন। বারবার চেষ্টা করেও তিনি এই আসক্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারছেন না। বাবার কাছেও বহুবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু পরক্ষণেই আবার খেলায় জড়িয়ে পড়েছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি অনলাইন গেম বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: অনএক্সবেড, বাবু৮৮, ত্রিপল৭৭৭, তিনপাত্তি ও ক্রেজিটাইম। এসব গেমে আসক্ত হয়ে অনেক যুবক নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। শুধু যুবকরাই নয়, বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের মধ্যেও এই আসক্তি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে মারাত্মক সংকটে পড়তে পারে।
এদিকে মাদকও সমানতালে ছড়িয়ে পড়েছে শহর ও গ্রামে। গ্রামের নিরীহ যুবকরাও প্রতিনিয়ত মাদকাসক্ত হচ্ছে। অধিকাংশ যুবক গাঁজা ও ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। নেশার টাকা যোগাড় করতে কেউ কেউ বাবা-মায়ের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে, কেউবা চুরি করছে। এতে গ্রামের সামাজিক পরিবেশও দ্রুত নষ্ট হচ্ছে।
বরগুনা জেলার রহমান (ছদ্মনাম) তার বাবার মৃত্যুর পর প্রাপ্ত সম্পত্তির প্রায় ৪০ কাঠা বিক্রি করে ইয়াবা সেবন করে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। আরেকজন আলামিন (ছদ্মনাম) গাঁজা সেবন করে প্রায়ই তার মাকে মারধর করে।
বাংলাদেশকে যদি একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হয়, তবে এখনই অনলাইন জুয়া ও মাদকের বিস্তার রোধ করতে হবে। তা না হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। এই ভয়াবহতা প্রতিরোধে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
সর্বশেষ খবর