• ঢাকা
  • ঢাকা, বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৬ মিনিট পূর্বে
কামরুল হাসান
সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত : ১৪ মে, ২০২৫, ০১:৪৫ দুপুর

শাহবাগ ছেড়ে হঠাৎ যমুনা, সাহসের উৎস কি হাসিনার প্রস্থান?

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের মানচিত্রে এক নতুন বাস্তবতার সূচনা হয়েছে। একসময় শাহবাগ ছিল রাজনৈতিক দাবিদাওয়া ও নাগরিক বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু। তবে বিগত কয়েক মাসে আন্দোলনের গন্তব্য পরিবর্তিত হয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন 'যমুনা'র অভিমুখে রূপান্তরিত হয়েছে। এই পরিবর্তন কেবল ভৌগোলিক নয়, বরং এটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নাগরিক সাহসের প্রতিফলন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে রাজধানী ঢাকায় রাজনৈতিক আবহ পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে উঠেছে। আগের কঠোর প্রশাসনিক শাসনের সময় যেখানে রাষ্ট্রীয় শক্তির ভয় মানুষকে রাস্তায় নামা থেকে বিরত রাখত, সেখানে এখন দেখা যাচ্ছে এক বিপরীত চিত্র। জনগণ, বিশেষ করে ছাত্র, শিক্ষক, বঞ্চিত শ্রেণি ও রাজনৈতিক দলগুলো নানা দাবিতে যমুনার সামনে অবস্থান নিচ্ছে, সরাসরি ‘ক্ষমতার কেন্দ্র’ টার্গেট করছে।

প্রতীকী স্থানান্তর: শাহবাগ থেকে যমুনা

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তন কেবল ভৌগলিক নয়, বরং একটি প্রতীকী রাজনৈতিক বার্তা বহন করে। শাহবাগ ছিল দীর্ঘদিন ধরে নাগরিক প্রতিবাদের প্রাণকেন্দ্র। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেকে শুরু করে কোটা সংস্কার, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন—সবখানেই শাহবাগ ছিল কেন্দ্রীয় মঞ্চ।

কিন্তু এখন, জনগণের লক্ষ্য সরাসরি প্রশাসনের কেন্দ্রে, ক্ষমতার আসনে বসা ব্যক্তির নিকট। এই প্রবণতা দেখায়, মানুষ এখন আর শুধুই প্রতিবাদ করছে না—তারা জবাবদিহি চায়, এবং তা সরাসরি দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছ থেকে।

হাসিনা পরবর্তী সাহস ও প্রত্যাশার উত্থান

শেখ হাসিনা সরকারের সময় অনেকেই রাজপথে নামতে ভয় পেতেন। রাজনৈতিক দমননীতি ও পুলিশি আচরণের কারণে মানুষের মধ্যে প্রতিবাদের প্রতি এক ধরণের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন, অন্তর্বর্তী সরকার অপেক্ষাকৃত সহনশীল আচরণ করায় এবং 'জনতার কথা শোনা হচ্ছে'—এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়, মানুষ আবার রাজপথে ফিরে এসেছে।

বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীরা এখন বারবার যমুনার সামনে হাজির হয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরছে।

সম্ভাব্য প্রভাব: সুফল না কুফল?

এই প্রবণতা গণতন্ত্রের পক্ষে একটি ভালো বার্তা বয়ে আনলেও কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করছে:

ইতিবাচক দিক:

  • প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়ছে।
  • ক্ষমতার কেন্দ্র আরও জবাবদিহিমূলক হয়ে উঠছে।
  • প্রান্তিক জনগণের কণ্ঠস্বর রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পৌঁছানোর সুযোগ পাচ্ছে।

চ্যালেঞ্জ:

  • বারবার যমুনার সামনে বিক্ষোভ প্রশাসনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় চাপ সৃষ্টি করছে।
  • সরকারের কাজের গতি ব্যাহত হতে পারে।
  • পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাড়লে গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

গত কয়েক মাসে যমুনা অভিমুখে যেসব উল্লেখযোগ্য বিক্ষোভ হয়েছে, তার মধ্যে কিছু ঘটনাকে নিচে তুলে ধরা হলো:

জানুয়ারি ২০২৫

৮ জানুয়ারি: ২০০৯ সালের পিলখানা ট্র্যাজেডিতে অভিযুক্ত অনেক জওয়ানকে ‘মিথ্যা মামলা’য় ফাঁসানো হয়েছে অভিযোগ তুলে তাদের মুক্তি ও পুনর্বহালের দাবিতে যমুনার উদ্দেশে পদযাত্রা করে জওয়ান পরিবারের সদস্যরা ও ছাত্র সমাজ।

মার্চ ২০২৫

১১ মার্চ: দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে যমুনা অভিমুখে মিছিল বের করে বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও মানবাধিকার সংগঠন।

মে ২০২৫

৮ মে: আওয়ামী লীগকে 'জঙ্গি সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানায় এনসিপি (জাতীয় ছাত্র পরিষদ)। তারা যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

৯ মে: পূর্ববর্তী দাবির ধারাবাহিকতায় তারা একই দাবিতে আবারও যমুনা অভিমুখে বিক্ষোভ করে।

১০ মে: এনসিপির নেতৃত্বে তিন দফা দাবিতে গণজমায়েত আবারও যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করে।

১৪ মে: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা ও শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে যমুনা অভিমুখে লং মার্চ শুরু করে।

এইসব ঘটনাগুলো স্পষ্ট করে দেয় যে, শাহবাগ থেকে যমুনা অভিমুখে আন্দোলনের স্থানান্তর কেবল ভৌগোলিক নয়, বরং তা মনস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক শক্তির কেন্দ্রে রূপান্তর ঘটার বার্তা দেয়। জনগণের মধ্যে এখন এক ধরনের বিশ্বাস জন্মেছে—দাবি আদায়ে প্রতীকী স্থানে নয়, বাস্তব ক্ষমতার দরজায় কড়া নাড়তে হবে।

হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর রাজনৈতিক পরিসরে একধরনের শূন্যতা এবং সম্ভাবনার সমান্তরাল স্রোত বইতে শুরু করেছে। এই পরিবর্তিত বাস্তবতায় সাধারণ নাগরিক, রাজনৈতিক কর্মী ও ছাত্রসমাজের মধ্যে রাষ্ট্রক্ষমতার মুখোমুখি হওয়ার মতো সাহসের উত্থানও এক নতুন বার্তা দেয়। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এটি একদিকে গণতন্ত্র চর্চার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিলেও, অন্যদিকে প্রশাসনিক কাঠামো ও আইনশৃঙ্খলার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

রাজনৈতিক বার্তা কী?

আন্দোলনের কেন্দ্র বদল মানে শুধু স্থান বদল নয়—এটি একটি চেতনার বদল। জনগণ এখন আর ক্ষমতাকে দূরের, ভয়ংকর কিছু মনে করে না। বরং তারা বিশ্বাস করে, যিনি ক্ষমতায় আছেন, তাকেই উত্তর দিতে হবে। এই প্রবণতা দীর্ঘস্থায়ী হলে, তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কৃতিতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন বয়ে আনতে পারে।

যমুনা অভিমুখে আন্দোলনের এই প্রবণতা সাময়িক না স্থায়ী—তা সময়ই বলবে। তবে এটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের গণআন্দোলনের মানচিত্রে একটি নতুন অধ্যায় রচিত হচ্ছে, যেখানে সাহস, প্রত্যাশা এবং সংঘর্ষ একসাথে জড়ো হয়েছে যমুনার সামনে।

‘শাহবাগ থেকে যমুনা’ অভিমুখে পদযাত্রা, মিছিল, অবস্থান—সবই এক নতুন যুগের সূচক। একটি এমন যুগ, যেখানে জনগণ সরাসরি শাসকদের কানে নিজের দাবি পৌঁছে দিতে চায়। এই সাহস এবং সরাসরিতাই হতে পারে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের ভিত্তি।

(খোলা কলাম বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বিডি২৪লাইভ ডট কম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com