
দুই যুগ আগে যারা একসাথে ক্লাস করত, হাসত, খেলত—আজ তারা জীবনের নানা ব্যস্ততা পেরিয়ে আবার একত্র হলো পুরনো দিনগুলোর টানে। এসএসসি ২০০১ এবং এইচএসসি ২০০৩ ব্যাচের বন্ধুদের নিয়ে আয়োজিত হলো এক অসাধারণ মিলনমেলা, যার আয়োজক ছিল ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ ‘ক্লাসরুম’।
১৮ এপ্রিল শুক্রবার, নারায়ণগঞ্জের সায়রা গার্ডেন রিসোর্টে দিনব্যাপী এই আয়োজনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন বন্ধুরা। সকাল ১১টা থেকেই গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বন্ধুদের মিলন। দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে রেজিস্ট্রেশন, যার পরপরই পরিবেশন করা হয় দুপুরের খাবার। পুরো আয়োজন ছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলে, যেন গরমের ভেতরেও স্বস্তি মেলে বন্ধুত্বের উষ্ণতায়।
আয়োজনে ছিল এক লক্ষ টাকার লটারি, যা আয়োজনকে করে তোলে আরও রোমাঞ্চকর। যাঁরা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে স্পন্সর করেছেন, তাঁদের দেয়া হয় সম্মাননা ও কৃতজ্ঞতা স্মারক। বন্ধুত্বের এই মিলনমেলায় কেউ আসেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে, কেউ একা—কিন্তু সবার মুখেই ছিল এক অভিন্ন হাসি।
বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট থেকে শুরু হয় মঞ্চ আয়োজন। সন্ধ্যার স্ন্যাক্সের পর শুরু হয় বহুল প্রতীক্ষিত কনসার্ট। গানের শুরুটা করেন জনপ্রিয় শিল্পী প্রিতম হাসান। তাঁর গান আর মঞ্চজুড়ে হাসি, নাচ আর উচ্ছ্বাস যেন মিলিয়ে দেয় সবাইকে এক আবেগে। এরপর রাত ৭টার দিকে মঞ্চে আসে লালন ব্যান্ড। ব্যান্ডের গানে দর্শক-শ্রোতা যেন ফিরে যান সেই যৌবনের দিনগুলোয়, যখন গান মানেই ছিল একসাথে গলা মেলানো, হাত তালি আর বুকভরা অনুভব।
এই আয়োজনে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে যুক্ত ছিল অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডি২৪লাইভ ডটকম। প্রতিষ্ঠানটির এডিটর-ইন-চিফ আমিরুল ইসলাম আসাদ নিজেও ২০০১-২০০৩ ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী। যদিও কর্মব্যস্ততার কারণে তিনি অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থাকতে পারেননি, তবে তাঁর শুভেচ্ছা আর হৃদয়ের ভালোবাসা ছিল পুরো আয়োজনজুড়ে। আয়োজকরা জানান, বন্ধুত্বের এমন মিলনমেলায় আসাদ ভাইয়ের জায়গাও সবসময় অটুট থাকবে।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী প্রকৌশলী সোহেল রানা বলেন, “আমরা পেশাজীবনের নানা ব্যস্ততায় হয়তো অনেক দূরে চলে গেছি, কিন্তু আজকের দিনটা মনে করিয়ে দিল—আমরা এখনো বন্ধু, এখনো এক।” অন্যদিকে শিক্ষক জেবা খাতুন বলেন, “এই ধরনের আয়োজন শুধু আমাদের জন্য নয়, আমাদের সন্তানদের জন্যও। তারা দেখুক—বন্ধুত্ব কীভাবে জীবনের অংশ হয়ে থাকে।”
অনুষ্ঠান শেষে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই আয়োজন ছিল শুরু মাত্র। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে, নিয়মিত আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
বন্ধুরা অনুষ্ঠান শেষে রাত ১০টার মধ্যেই যার যার গন্তব্যে রওনা হন, কিন্তু মন থেকে কেউই ফিরতে পারেননি। কারণ এদিন তারা ফিরে গিয়েছিলেন জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টায়—যেখানে ছিল না কোনো প্রতিযোগিতা, ছিল কেবল অকৃত্রিম বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা।
সময় চলে যায়, বয়স বাড়ে, দায়িত্ব বাড়ে—but বন্ধুত্ব যদি থাকে সত্যিকারের, তাহলে তা আবার এক করে দেয় সবাইকে। আর সেই বন্ধুত্বই ছিল ‘ক্লাসরুম’-এর এই আয়োজনের প্রাণ।
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর