
জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল রেলগেট এলাকায় একটি ইটভাটার ধোঁয়ায় আশপাশের প্রায় ১২০ বিঘা জমির বোরো ধান এবার নষ্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
এতে অন্তত ৪৫ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নষ্ট ফসলের প্রতিকার চেয়ে ইউএনওর কার্যালয়, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি করেছে উপজেলা প্রশাসন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ইটভাটার কারণে গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আত্মীয়স্বজন তাদের বাড়ি আসতে চান না। কালো ধোঁয়ার কারণে গাছে ফলও ধরছে না। এরপরও আরএনবি নামের ইটভাটায় ইট প্রস্তুত চলছে পুরোদমে। এপ্রিল মাসজুড়ে প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও এ কার্যক্রম চলছে। এতে পাশের মাঠের বোরো ধানক্ষেত ধূসর রং ধারণ করছে ।
সরেজমিনে পুরানাপৈল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কিছু ধানের ক্ষেত সোনালি রং ধারণ করেছে। দূর থেকে দেখে পাকা ধান মনে হলেও কাছে গিয়ে দেখা যায়, সব চিটায় পরিণত হয়েছে। যেগুলোর শীষ বের হয়নি, সেগুলোও তাপে বিবর্ণ হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বলছেন, সদ্য বের হওয়া ধানের শীষ ঝলসে চিটা হয়ে গেছে। এতে উৎপাদন কম হবে। লোকসান গুনতে হবে সবাইকে। তারা ফসলি এলাকায় ইটভাটা স্থায়ীভাবে বন্ধ ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কৃষক একরামুল বলেন, তারা পাঁচ বছর ধরে ঘরের ধানের ভাত খেতে পারেন না। বিষাক্ত ধোঁয়ায় সব শেষ হয়ে যায়। এবারও একই অবস্থা হওয়ায় তারা উদ্বেগে আছেন।
কৃষক মিরাজুল ইসলাম ও আজাদুলের ভাষ্য, প্রতি বছর ধান পুড়ে যাবে, আর তারা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেবে, তা হতে পারে না। ইটভাটার গরম ধোঁয়ায় ধানক্ষেত নষ্ট হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যে অভিযোগ করেছেন, তা শুনেছেন জানিয়ে আরএনবি ইটভাটার মালিক মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে তাদের ধানক্ষেত নষ্ট হয়েছে কিনা, তা দেখতে হবে। প্রয়োজনে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেবেন বলে জানান তিনি।
পুরানাপৈল ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আরমান আলী বলেন, ১২০ বিঘা নয়, ৭৫ বিঘার ধান, তিন বিঘার কলা ও দুই বিঘার ভুট্টা ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কৃষকরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগেও ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে কৃষকের ফসল নষ্ট হয়েছিল। তখন তারা রাস্তা অবরোধ করে ক্ষতিপূরণ আদায় করেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
কৃষকের অভিযোগ পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ধানক্ষেত পরিদর্শন করেছেন বলে জানান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাফসিয়া জাহান। তিনি বলেন, একে তো গরম আবহাওয়া, তার ওপর ইটভাটার গরম ধোঁয়ার কারণে বোরো ধানক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটি ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মাঠে গিয়ে তদন্ত করে কৃষকের তালিকা ও ক্ষতির কারণ নির্ণয় করবে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি ।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর