
কুমিল্লার দেবীদ্বারে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনার আওতায় বোরো ধানের 'সমলয় চাষাবাদে' যান্ত্রিকীকরণে নতুন উদ্ভাবনী জাত ব্রি ধান- ১০২ চাষে সফল কৃষকেরা।
সোমবার (৫ মে) ইউছুফপুরে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের উদ্যোগে শস্য কর্তন ও উঠান বৈঠক এর আয়োজন করা হয়। সমলয় চাষাবাদে যান্ত্রিকীকরণ ও নতুন উদ্ভাবনী জাত ব্রি ধান চাষে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন।
বছরের শুরুতে বিনামূল্যে চাষের জন্য ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে দেশের সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ইউছুফপুরে কৃষি মাঠের ৫০ একর জমি নির্ধারণ ও নতুন উদ্ভাবনী (ব্রি ধান-১০২) ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেন উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর। এই কর্মসূচির আওতায় সিডলিং ট্রেতে চারা তৈরি করে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের সাহায্যে চারা রোপণ করা হয়। আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেশিনে কর্তন শুরু হয়।
ইউসুফপুরের সমলয় চাষাবাদের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কৃষক কৃষানীরা কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনে ধান কেটে, মারাই শেষে বস্তায় ভরে মাথায় নিয়ে ঘরে ফিরছেন। কৃষকরা জানান, যান্ত্রিকীকরণে মজুরির টেনশন থাকেনা, স্বল্প সময়ে, স্বল্প খরচে এবং ফসলের লাভ নিয়ে ঘরে ফেরা যায়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ব্রি ধান- ১০২ জাতটি জিংক সমৃদ্ধ; যাতে জিংক এর পরিমাণ ২৫.৫ মি. গ্রাম/কেজি। তাছাড়া, জাতটির অ্যামাইলোজ ২৮% ও প্রোটিনের পরিমাণ ৭.৫%। ফলে এ ধানের চাল চিকন ও সাদা হওয়ার পাশাপাশি ভাত ঝরঝরে হবে। বিঘা প্রতি প্রায় ২৫ থেকে ২৬ মন ফলন দিতে সক্ষম ব্রি ধান-১০২ জাতটি।
কৃষক দেলোয়ার হোসেন ও মনু মিয়াসহ একাধিক কৃষক জানান, প্রতি একর জমিতে গড়ে ৯১ মণ করে ধান পাচ্ছেন তারা। কোন কোন জমিতে যা বেড়ে দাড়িয়েছে ১০০ মণ, অর্থাৎ প্রতি শতাংশে এক মণ। হাতে লাগানো জমিতে গড়ে ফলন পাওয়া গেছে ৭৩ মণ। অর্থাৎ ৫০ একরে প্রায় ৯০০ মণ অতিরিক্ত ধান উৎপাদিত হয়েছে। যার বাজার মূল্য সরকার নির্ধারিত ৩৬ টাকা প্রতি কেজি হিসেবে ১২ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা।
তাছাড়া যন্ত্রের সাহায্যে রোপন ও কর্তনের ফলে অর্থনৈতিক সুবিধা পেয়েছে কৃষক। সরকারিভাবে রোপন ও কর্তনের ব্যয় বহন করা হলেও বাজার মূল্য বিবেচনায় নিয়ে হিসাব করলে একর প্রতি সাশ্রয় হয়েছে ১৯ হাজার ৮ শত ১৫ টাকা। যা ৫০ একরে দাঁড়ায় ৯ লক্ষ ৯০ হাজার ৭ শত ৫০ টাকা। অর্থাৎ, ৫০ একরের সমলয় চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষকদের সর্বমোট ২২ লক্ষ ৮৬ হাজার ৭ শত ৫০ টাকার অতিরিক্ত ফসল ও অর্থ সাশ্রয় হয়েছে।
ব্রি ধান- ১০২ জাতটির বিষয়ে কৃষকদের আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গত বছর পার্টনার প্রোগ্রামের মাধ্যমে এক একরের একটি ব্রি ধান- ১০২ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করি। জমির ফলন দেখে এ বছর ৫০ একরন জমিতে কৃষকেরা নিজেরাই ব্রি ধান- ১০২ চাষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বানিন রায় জানান, মূলত: দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা ‘সমলয় চাষাবাদের’ ব্লক প্রদর্শনীটি বাস্তবায়ন করছি। প্রথমত, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ; বিশেষ করে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের ব্যবহারকে জনপ্রিয়করণ। দ্বিতীয়ত, বোরো ধানের নতুন জাত হিসেবে প্রোটিনসমৃদ্ধ ব্রি ধান- ১০২ সম্প্রসারণ। আগামীতে প্রায় ১০০ একরের সমলয় চাষাবাদের বিষয়ে কৃষকগণ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খান জানান, সমলয় চাষাবাদের ফলে কৃষকের পরিশ্রম, সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয়েছর, অন্যদিকে ফলন বৃদ্ধি পায়। দেবিদ্বারের কৃষি যান্ত্রিকীকরণের গুরুত্ব অনেক। আগামীতে কৃষকের উন্নয়নে সকল কার্যক্রমে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করবো।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর