
কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে বোরো ধান কাটার মৌসুমে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বৈশাখের শুরু থেকেই প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা আকাশের নিচে চলছে ধান কাটা ও বহনের কাজ। তবে এই ব্যস্ততার মাঝেই তাদের তাড়া করছে প্রাণঘাতী বজ্রপাতের ভয়।
গত কয়েকদিনে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন হাওর উপজেলায় বজ্রপাতে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার (২৮ এপ্রিল) একদিনেই অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বজ্রপাতে।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন—মিঠামইন উপজেলার শান্তিগঞ্জ হাওরে খড় শুকাতে গিয়ে কিষানি ফুলেছা বেগম (৬৫), অষ্টগ্রাম উপজেলার হালালপুর হাওরে কৃষক ইন্দ্রজিত দাস (৩৬), কলমা হাওরে কৃষক স্বাধীন মিয়া (১৪), বাজিতপুর উপজেলার দৌলতপুর হাওরে কৃষি শ্রমিক আব্দুল করিম (৩৭), এবং কটিয়াদী উপজেলার চাতল বিলে মাছ ধরতে গিয়ে জেলে মো. শাহজাহান (৪২)।
এমন পরিস্থিতিতে কৃষক ও শ্রমিকদের মাঝে উদ্বেগ-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ইটনা হাওরের কৃষক মুকুল মিয়া বলেন, ‘ভোর থেকে কাজ শুরু করি। এখন হাওরে কাজ করতে খুবই ভয় লাগে, শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি। বজ্রপাত শুরু হলে আশ্রয়ের জায়গা নেই।’
স্থানীয় আইনজীবী শেখ মো. রোকন রেজা বলেন, ‘হাওরের কিষান-কিষানি ও শ্রমিকরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উন্মুক্ত আকাশের নিচে কাজ করেন। কিন্তু বজ্রপাত শুরু হলে তাদের আশ্রয়ের জায়গা থাকে না। এতে প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়ে।’
অষ্টগ্রামের কৃষিশ্রমিক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বজ্রপাতের ভয় থাকলেও হাওরে কাজ করতে হয়। কাজ বন্ধ হলে টাকা পাবো না। আমরা গরিব মানুষ, ভাগ্যের ওপর ভরসা করেই কাজ করি।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, হাওরে বজ্রনিরোধক ছাউনি স্থাপন করা এখন সময়ের দাবি। অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেন, ‘হাওরের প্রতিটি মাঠে কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় বজ্র নিরোধক আশ্রয়কেন্দ্র থাকলে কৃষকেরা অন্তত বজ্রপাতের সময় নিরাপদ আশ্রয় নিতে পারতেন।’
আবহাওয়াবিদদের মতে, হাওর এলাকা উন্মুক্ত ও জলাভূমিময় হওয়ায় সেখানে বজ্রপাতের প্রবণতা অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি। খোলা মাঠে কাজ করায় কৃষকরা ঝুঁকির মুখে থাকেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. বদরুদ্দোজা বলেন, ‘বজ্রপাতে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে দাফন-কাফনের জন্য পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। তবে বজ্রপাত নিরোধে আমাদের কোনো প্রকল্প নেই।’
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর