
নড়াইল সদর উপজেলার বুড়ি ভৈরব নদীতে জরাজীর্ণ সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে দুই ইউনিয়নের ১৬ গ্রামবাসীর। দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।
কাঠ ও বাঁশ দিয়ে প্রায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রশস্ত এই সাঁকোটি দুই ইউনিয়নের বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করেছিলেন। নড়াইল জেলা শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দুরে সদর উপজেলার শেখহাটি আফরা গ্রাম। গ্রামটি দিয়ে বয়ে গেছে বুড়ি ভৈরব নদ। নদীটির এক পারে নড়াইলের শেখহাটি ইউনিয়নের আটটি গ্রাম। ওপারে যশোর সদর উপজেলার বসুন্ধিয়া ইউনিয়নের আটটি গ্রাম।
দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত নড়বড়ে সাঁকোটি এক মাত্র ভরসা ১৬ টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের। জরাজীর্ণ এই সাঁকোটি দিয়ে লোকজন সাইকেল ও ভ্যানগাড়ি নিয়ে ভয়ে হেঁটে সাঁকো পার হতে হচ্ছে।
অনেকে আবার পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরাও পায়ে হেঁটে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন। সাবধানে চলাচল করছেন সবাই। কারণ সাঁকোর ওপর থেকে অনেকে পড়ে আহত হয়েছেন। একটু অন্যমনস্ক হলে যেকোনো সময় পড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সেতু নির্মাণে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিশ্রুতি মিললেও দৃশ্যমান পরিবর্তন আসেনি। ফলে জরাজীর্ণ সাঁকোটি একমাত্র ভরসা এখন সবার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর দুই পাশে কংক্রিটের পিলারের ওপর সেতুতে বিছানো পাটাতন বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় ভ্যান, মোটরসাইকেলসহ হালকা যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞার নোটিশ টানিয়ে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। তবু অনেকটা বাধ্য হয়েই সাঁকোটি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয়রা জানানা, নড়াইলে বুড়ি ভৈরব নদীর ওপর কাঠ ও বাঁশ দিয়ে প্রায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রশস্ত একটি সাঁকো নির্মাণ করা হয়। প্রায় ১৩ বছর আগে স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকোটি নির্মাণ করেছিলেন শেখহাটি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম রেজার নেতৃত্বে স্থানীয় গ্রামবাসী।
বুড়ি ভৈরব নদের পূর্ব পাশে নড়াইল সদর উপজেলার শেখহাটি ইউনিয়নের আটটি এবং পশ্চিমে যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের আটটি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এ কাঠের সাঁকো দিয়ে চলাচল করছেন।
নদীটির উভয় পারের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ নদী পারাপারে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছিল। অনেক শ্রমিককে নদীর পশ্চিম পারে যশোরের নওয়াপাড়া ও বসুন্দিয়ায় শিল্পকারখানায় কাজ করে রাতে বাড়ি ফিরতে খেয়া-নৌকার অপেক্ষায় থাকতে হতো। অবশেষে ২০১২ সালে বুড়ি ভৈরব নদের ওপর কাঠ ও বাঁশ দিয়ে সাঁকো নির্মাণ করা হয়।
তুলারামপুর গ্রামের বাপ্পী সরদার বলেন, ভূড়ি ভৈরব নদীর ওপর থেকে এপার আসতে একসময় গ্রামের মানুষ নৌকায় যাতায়াত করতেন। পরে গ্রামবাসীর নিজেদের উদ্যোগে প্রায় ১৩ বছর আগে ওই সাঁকোটি নির্মাণ করে।
বছরের পর বছর ধরে এতগুলো গ্রামের মানুষ এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করে আসছেন। রাতের বেলায় টর্চ দিয়া পা টিপে টিপে চলাচল করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। এতে কৃষি প্রধান এই এলাকার মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আফরা গ্রামের ইদ্রিস আলি বলেন,‘বর্ষাকালে বৃষ্টিতে কাঁদা হয়ে যায়। পাশে পানি জমে যায়। গাড়ি নিয়ে উঠা নামা করা যায় না। যাওয়া আসা কষ্ট হয়ে যায়। অনেক রাস্তা সাত কিলো ঘুরে আসতে হয়। মহিলারা চলাচল করতে পারে না। অনেকে পড়ে যায়। পুরুষেরাও জুতা পরে চলতে পারে না।
শেখহাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বুলবুল আহমেদ বলেন, এপার যশোর ওপার নড়াইল দুই ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন এলাকার লোক এ সেতু দিয়ে পারাপার হয়। সেতুটি এ অঞ্চলে জনগুরুত্বপূর্ণ। এই সেতুটি যদি নতুন করে মেরামত হয় বা নতুন সেতু হয় তাহলে এলাকায় কৃষক সহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষের চলাচলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
নড়াইল এলজিইডির নির্বাহী নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ কুমার কুন্ডু বলেন, আফরা বুড়ি ভৈরব নদের উপরে সেতুটি আমাদের নড়াইল জেলার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। ইতিমধ্যে এটির জরিপ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এবং এই ব্রিজের ডিজাইনের কাজ চলমান রয়েছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর