
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) ২০২৫–২০২৭ সেশনের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর ব্যবসায়ীরা আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
এদের মধ্যে অনেকেই আবার তাদের রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তন করেছে। যার ফলে জুলাই আগস্ট আন্দোলনের পক্ষের ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম (আইজিএফ) এর হাসানুল হক ইনুর এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে এসব ব্যবসায়ী গোষ্ঠী।
তারা আরও বলছেন, আগামী ১৭ মে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনের ১৩ পদে লড়ছেন ২৪ প্রার্থী। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরআইএসপিএবি নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় অংশ নেয়ার কথা বলে সেখানে পুরনো ফ্যাসিবাদীদের ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছেন সংগঠনের কয়েকজন সদস্য।
সংগঠনটির সদস্যদের অভিযোগ, প্রথমে জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির কথা বলে কয়েকজন সদস্য বর্তমান আইএসপিএবি নেতৃত্ব দেয়া ‘বৈষম্যবিরোধী আইএসপিএবি’ ব্যানারের উদ্যোক্তাদের দলে ভেড়াতে চেষ্টা করেন। পতিত আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ীদের কেন বিভিন্নভাবে সুযোগ দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এদের অনেকেই অতীতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় নানা সুবিধা ভোগ করেছেন এবং আইএসপি খাতকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন নিজেদের স্বার্থে।
অভিযোগ রয়েছে, আইএসপিএবির নির্বাচনের জন্য যে প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে এদের মধ্যে আইএসপিএবির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের থেকে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন। এছাড়াও তিনি চেয়ারপারসন হিসাবে আছেন বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামে যা পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তৈরি প্রতিষ্ঠান।
আইএসপিএবি ২০২৪-২৬ মেয়াদের কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন টিম ফরওয়ার্ড প্যানেলের সাধারণ ক্যাটাগরিতে ৯ জন পরিচালক প্রার্থীর মধ্যে ৮ জন বিজয়ী হয়েছেন। কেএস নেটওয়ার্কের নাজমুল করিম ভূঁইয়া সেই নির্বাচনে ভোট পেয়েছেন ২০৪। তার প্যানেলে ছিল ইউনিফাইড কোর লি: এর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন। অভিযোগ রয়েছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন সহযোগিতায় আইএসপিএবি ২০২৪-২৬ ভোট কারচুপি করেন নাজমুল করিম ভূঁইয়া ও সদ্যসাবেক সভাপতি ইমদাদুল হক।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আইএসপিএবি নির্বাচনের পটভূমিতে রাজনৈতিক পরিচয় এখনো একটি বড় হাতিয়ার। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, সাবেক আওয়ামী লীগঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যবসায়ী নিজেদের পুরনো রাজনৈতিক পরিচয়কে সামনে এনে সমর্থন জোগাড়ে ব্যস্ত। অনেকে ইতোমধ্যে প্রভাবশালী অপারেটরদের সঙ্গে জোট গঠনেও কাজ শুরু করেছেন।
বর্তমান নেতৃত্ব বা নতুন প্রার্থীরা চাইছেন— আইএসপিএবি যেন কোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত থাকে এবং এটি পুরোপুরি স্বতন্ত্র, স্বচ্ছ ও নীতিভিত্তিক ব্যবসা উন্নয়নের প্ল্যাটফর্মে রূপ নেয়।
এ ঘটনায় ভোটারদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলেছেন, পুরোনো ডায়নোসরদের দরকার নেই । আবার কিছু ভোটার সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, ISP UNITED আসলে ‘পুরোনো ঘরানার’ কিছু গোষ্ঠীর নতুন মোড়ক: “নাম পাল্টালেই চরিত্র পাল্টায় না। পিছনে কারা আছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ।” – বলেছেন ঢাকার এক সিনিয়র ভোটার।
২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে চলমান ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের সময় বাংলাদেশে পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের অভিযোগে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ISPAB)-এর সদ্যসাবেক সভাপতি ইমদাদুল হক এবং তার নির্বাহী কমিটির বিরুদ্ধে কঠোর অভিযোগ তুলেছিল একাধিক আইএসপি মালিক ও সচেতন প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা। তারা দাবি করছেন— ইমদাদুল হক ও তার কমিটি সরকারের ইচ্ছানুযায়ী ইন্টারনেট বন্ধ করে জনগণের মৌলিক অধিকার, তথ্যপ্রবাহ ও গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলেছিল।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর