
সুদূর চীন থেকে ঘুরতে এসে বাংলাদেশের ভোলার মেয়েকে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করলেন মাওয়েন হুয়া ইরিছা (২৪) নামে এক চীনা তরুণ।
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। যা নিয়ে রীতিমতো ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে জেলাজুড়ে। ঘটনাটি ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চন্দ্রপ্রসাদ গ্রামের শরীফখান বাজার সংলগ্ন চেয়ারম্যান বাড়ির।
সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে জানা যায়, ওই চীনা তরুণের বাড়ি চীনের লানজু এলাকার গানছুতে। তার বাবার নাম মেছউধা। এদিকে তরুণীর নাম নাভিয়া আক্তার। তিনি ওই বাড়ির ইলিয়াস হাওলাদার ও খুকুমণি দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে। নাভিয়া ভোলা সরকারি কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী।
কনে নাভিয়ার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, প্রায় আড়াই বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ইউচ্যাট) বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে কনে নাভিয়ার বড় ভাই মো. রনির সাথে ওই চীনা তরুণের। একপর্যায়ে সে রনির কাছে বাংলাদেশে ঘুরতে আসার ইচ্ছে পোষণ করেন এবং গত এক মাস আগে চীনা তরুণ মাওয়েন হুয়া ইরিছা বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন জেলা ভোলায় তার বন্ধু রনির বাড়িতে বেড়াতে আসেন।
সেখানে এক মাস তাদের বাড়িতে থাকেন। পরে চীনা তরুণ তার বন্ধুর ছোট বোন নাভিয়াকে পছন্দ করলে বিষয়টি নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে কথাবার্তা হলে চীনা তরুণের পরিবার রাজি হলেও প্রথমে রাজী হননি কনে নাভিয়ার বাবা-মা। একপর্যায়ে গত রোববার (৪ মে) সন্ধ্যায় তাদের উভয় পরিবারের সম্মতিতে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ে সম্পূর্ণ হয়।
এ বিষয়ে কনের ভাই মো. রনি বলেন, গত দুই বছর আগে আমার সাথে তার সাথে অনলাইনে পরিচয় হয়। তার বাড়ি চীনে। সে মুসলিম ধর্মের অনুসারী। এবং চীনের একটি মাদরাসার ছাত্র। পরিচিত হওয়ার সুবাদে সে ঢাকায় আসে এবং গত ১১ এপ্রিল আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। এরপর আমার বোনকে সে পছন্দ করে এবং বিয়ের প্রস্তাব দেন। প্রথমে বাবা-মা রাজি হননি।
পরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে (৪ মে) সন্ধ্যায় ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে আমার বোনের সাথে তার বিয়ে সম্পূর্ণ হয়। এবং সোমবার (৫ মে) গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা হয়েছে। পাসপোর্ট-ভিসা কার্যক্রম সম্পূর্ণ হলে আমাকে ও আমার বোনকে সে চীনে নিয়ে যাবে বলেছে।
এদিকে চীনে তরুণের সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর চোখে-মুখে খুশির ছাপ কনে নাভিয়ার। তিনি বলেন, ভিনদেশের তরুণের কাছে পরিবার আমাকে বিয়ে দিয়েছে। আমি খুশি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, পরিবার আমাকে যেখানে বিয়ে দিয়েছে স্বামীর সাথে সেখানেই থাকব।
বর মাওয়েন হুয়া ইরিছা সুরা-ফাতিহা পাঠ করে শোনান। এরপর তিনি বন্ধুর বোনকে বিয়ে করতে পেরে নিজের আনন্দের কথা জানান নিজস্ব ভাষায়। তারও চোখে-মুখে ছিল আনন্দের ছাপ। বললেন স্ত্রীকে চীনে নিয়ে যাবেন।
চীনা তরুণের সাথে ভোলার মেয়ের বিয়ের খবরে বিদেশি জামাইকে দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছেন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। ইফরান মৃধা,হাসিব ও শাহেলা বেগম বলেন, ভোলাতে এর আগে এমন বিয়ে হয়েছে কি-না আমাদের জানা নেই।
তাই বিদেশি জামাইকে দেখতে এসেছি। জামাই দেখতে সুদর্শন। এদিকে, এ নবদম্পতির দাম্পত্য জীবনের জন্য দোয়া ও শুভ কামনা জানিয়েছেন সকলেই।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর