
শনিবার ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে “পূর্ণ এবং তাত্ক্ষণিক যুদ্ধবিরতি” ঘোষণায় আন্তর্জাতিক মহলে স্বস্তি ফিরেছে। কাশ্মীরের পাহালগামে প্রাণঘাতী হামলার পর দুই দেশের মধ্যে কয়েকদিন ধরে চলছিল টানা গুলি, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও আর্টিলারি হামলা। অবশেষে এই রক্তক্ষয়ী উত্তেজনার অবসান ঘটলো আলোচনার মাধ্যমে।
এই সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব শুধু সীমান্তে থেমে থাকেনি, এর প্রতিফলন দেখা গেছে সংস্কৃতি অঙ্গনেও। বলিউডের বহু তারকা সামাজিক মাধ্যমে মুখ খুলেছেন, কেউ সমর্থনে, কেউবা শান্তির আহ্বানে। তবে এই বিষয়টি নতুন নয়, ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বরাবরই বলিউডের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।
ভারতীয় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে এমন বহু সিনেমা রয়েছে যেখানে দুই দেশের যুদ্ধ, দ্বন্দ্ব কিংবা সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে গল্প বলা হয়েছে। চলুন জেনে নিই এমন কিছু আলোচিত সিনেমা সম্পর্কে, যেগুলো ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বা দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে নির্মিত।
এলওসি কার্গিল (২০০৩)
কার্গিল যুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনাদের কাহিনি নিয়ে নির্মিত এই ছবিটি পরিচালনা করেছেন জে. পি. দত্ত। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন সঞ্জয় দত্ত, সাইফ আলি খান, সুনীল শেঠি, অভিষেক বচ্চন, কারিনা কাপুরসহ অনেকে। ৪ ঘণ্টা ১৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের এ ছবিটি ভারতের অন্যতম দীর্ঘ চলচ্চিত্র হিসেবেও পরিচিত।
লক্ষ্য (২০০৪)
ফারহান আখতারের পরিচালনায় হৃতিক রোশন এবং প্রীতি জিনতা অভিনীত এই ছবিটির পটভূমি কার্গিল যুদ্ধ। দায়িত্বজ্ঞানহীন এক তরুণ কিভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে নিজের জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পায়, সেই কাহিনী ফুটে উঠেছে এই ছবিতে।
ট্যাঙ্গো চার্লি (২০০৫)
অজয় দেবগণ ও ববি দেওল অভিনীত ‘ট্যাঙ্গো চার্লি’ সরাসরি যুদ্ধ নয়, বরং সেনাদের ব্যক্তিগত ত্যাগ ও সংগ্রামের গল্প তুলে ধরে। ছবি পরিচালনা করেছেন মণি শঙ্কর।
দ্য ঘাজি অ্যাটাক (২০১৭)
১৯৭১ সালের যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সাবমেরিন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয় 'দ্য ঘাজি অ্যাটাক'। রানা ডাগুবাতি ও তাপসী পান্নু অভিনীত ছবিটিতে ভারতীয় নৌবাহিনীর সাহসিকতা তুলে ধরা হয়েছে। ছবির এক দৃশ্যে তাপসীকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের লাইন বলতে শোনা যায়।
গুন্ডে (২০১৪)
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে নির্মিত হলেও, ছবিটির শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধকে “ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ফসল” হিসেবে তুলে ধরায় বাংলাদেশে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। নির্মাতারা পরবর্তীতে দুঃখ প্রকাশ করে বিতর্কিত অংশটি সংশোধন করেন।
১৯৭১ (২০০৭)
মনোজ বাজপেয়ী, রাভি কিষাণ অভিনীত এই ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে হলেও, গল্পটি গড়ে উঠেছে পাকিস্তানি বন্দিদের নিয়ে, যারা ভারতের সীমান্তে আটকে পড়ে। ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়।
বর্ডার (১৯৯৭)
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত আরেক জনপ্রিয় ছবি ‘বর্ডার’। পরিচালনায় ছিলেন জে পি দত্ত, অভিনয়ে সানি দেওল, সুনীল শেঠি, অক্ষয় খান্না ও জ্যাকি শ্রফ। ছবিটি বক্স অফিসে ব্যাপক সাফল্য পায়।
রাজি (২০১৮)
১৯৭১ সালের আগে পাকিস্তানে ভারতীয় এক নারীর গুপ্তচর হয়ে যাওয়া এবং তথ্য সংগ্রহের ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয় ‘রাজি’। আলিয়া ভাটের অনবদ্য অভিনয় ছবিটিকে নতুন মাত্রা দেয়।
এছাড়াও ‘উপকার’ (১৯৬৭), ‘হিন্দুস্তান কি কসম’ (১৯৭৩, ১৯৯৯), ‘স্টাম্পড’ (২০০৩), ‘মৌসুম’ (২০১১)–এই ছবিগুলোর মধ্যেও ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বা সীমান্ত সম্পর্কিত আবহ বারবার উঠে এসেছে।
ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি দীর্ঘদিন ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও প্রভাব ফেলেছে। বলিউড বারবার এই সংকটকে উপজীব্য করে গল্প বলেছে, কখনো দেশপ্রেম, কখনো বীরত্ব, কখনোবা আত্মত্যাগকে সামনে রেখে। যুদ্ধবিরতির এই মুহূর্তে এসব সিনেমা যেন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।
সর্বশেষ খবর
বিনোদন এর সর্বশেষ খবর