
ডিজিটাল যুগের দৌড়ে যখন গ্রামবাংলার বইয়ের ফেরিওয়ালারা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে, তখনো টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ৮০ বছর বয়সী আব্দুর রশিদ বই আর ছন্দকে আঁকড়ে ধরে আছেন।
রসুলপুর ইউনিয়নের মধুপুরচালা গ্রামের এই বইপ্রেমী বৃদ্ধ গত ৪৮ বছর ধরে হাটে হাটে ঘুরে ছন্দে ছন্দে কবিতা গেয়ে বই বিক্রি করে চলেছেন। এখনো প্রতিটি হাটে তিনি যেন হয়ে ওঠেন এক জীবন্ত সংস্কৃতির প্রতিনিধি—এক ফেরিওয়ালা, যিনি বইয়ের পাতায় ছড়ান জ্ঞানের আলো, আর কণ্ঠে ভাসান লোককবিতার সুর।
সম্প্রতি ঘাটাইলের গারোবাজার হাটে দেখা হয় তার সঙ্গে। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে বই, হাতে কয়েকটি শিরোনাম, আর মুখে দ্বিপদী-ত্রিপদী ছন্দের জাদু। পথচারী, হাটের ক্রেতা কিংবা শিশুরা মুগ্ধ হয়ে শোনে তার ছন্দপাঠ। কেউ আগ্রহভরে কিনে নেয় একটি-দুটি বই।
আব্দুর রশিদ বলেন, “আগে জোছনা রাতে উঠানে পুঁথি পাঠ হতো, মানুষ কবিতা শুনে রাত কাটাত। এখন আর কেউ কবিতার বই চায় না। তাই এখন শিশুসাহিত্য আর ধর্মীয় বই দিয়েই পেট চালাই। তবে ছন্দটা এখনো বুকে ধরে রেখেছি।”
ঘাটাইলের সাগরদিঘী, ধলাপাড়া, গারোবাজার, কুতুবপুর, সখিপুর, কচুয়া—এইসব হাটই তার জীবনের অংশ। সপ্তাহের হাটবারে তিনি আয় করেন প্রায় ৪-৫ শত টাকা। বড় সংসার, চার সন্তান ও আট নাতি-নাতনি নিয়ে চলে তার জীবন। কষ্ট আছে, কিন্তু অভিযোগ নেই।
“মানুষের মুখে হাসি আনতে পারি, এইটাই বড় পাওয়া,” বললেন আব্দুর রশিদ।
গারোবাজারের স্কুলশিক্ষক সাজ্জাদ রহমান বলেন, “তিনি শুধু বই বিক্রি করেন না, হাটে হাটে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেন। তার কণ্ঠস্বর আর ছন্দে একটা আলাদা আনন্দ আছে।”
গারোবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হারুনুর রশিদ বলেন, “তার হাসিমুখ, প্রাণবন্ত কণ্ঠ এখনো আগের মতোই আছে। আমরা অনেকেই তার কাছ থেকে বই কিনেছি—এটা এক সময়ের ঐতিহ্য, যা আজ বিলুপ্তপ্রায়।”
আজ যখন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষ স্ক্রিনে ডুবে থাকে, তখন আব্দুর রশিদের মতো বই ফেরিওয়ালারা আমাদের মনে করিয়ে দেন—আলো ছড়ানোর পথ কখনো থেমে যায় না, যদি ভালোবাসা থেকে যায়।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর