
বান্দরবানের লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সামগ্রীর সংকট চলমান থাকায় চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় দুই লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র সরকারি ভরসা এই ৫০ শয্যার হাসপাতালে বর্তমানে কর্মরত চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র দুইজন।
হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ফরহাদ উদ্দিন জানান, প্রতিদিন গড়ে বহির্বিভাগে ২৫০ জন রোগী এবং অন্তর্বিভাগে গড়ে ৮৫ জন রোগী সেবা গ্রহণ করেন। তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে পানি সরবরাহে সংকট, প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাব, ব্যবহারের অযোগ্য অ্যাম্বুলেন্স, যন্ত্রপাতির অচলাবস্থা এবং জনবল সংকট—সব মিলিয়ে হাসপাতালটিতে কার্যত এক ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও তারা দুজন চিকিৎসক যথাসাধ্য সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এখানে ২২টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে মাত্র ২ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। ৩২টি নার্স পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৮ জন। ৬ জন কনসালটেন্ট ও ১২ জন মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের ৪টি পদের মধ্যে একজন কর্মরত থাকলেও তিনি আগামী ১৯ মে হজ পালন উপলক্ষে মক্কা গমন করবেন।
চিকিৎসক সংকটের মাঝে গত ৫ মে ডা. মেকি মার্মা নামের এক চিকিৎসক যোগ দিলেও তিনি বান্দরবান জেলা পরিষদের সুপারিশে ডেপুটেশনে বান্দরবান সদর হাসপাতালে বসবেন। ফলে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা আরও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
লামার বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা অভিযোগ করেন, পানি সংকটের কারণে হাসপাতালে তিনদিন ধরে চরম দুর্ভোগ চলছে। দুটি অ্যাম্বুলেন্সের একটি দীর্ঘ এক যুগ ধরে অচল, অপরটি ব্যবহারের অনুপযোগী। সম্প্রতি বন্যায় হাসপাতালের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, ইসিজি ও আধুনিক এক্স-রে মেশিনসহ ল্যাবের বিভিন্ন যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে রোগীরা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে পারছেন না।
লামা পৌরসভা, সাতটি ইউনিয়ন ছাড়াও আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন ও চকরিয়া উপজেলার বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের মানুষ এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবাগুলো পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও জনবল সংকটে কার্যকরভাবে সেবা দিতে পারছে না, ফলে অনেক রোগী বাধ্য হয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলা চকরিয়ায় চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন, যা তাদের আর্থিকভাবে চাপে ফেলছে। অনেকেই চিকিৎসার অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন দত্ত বলেন, “আমরা চরম জনবল সংকটে রয়েছি, বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর কাজ করছে।”
বান্দরবান সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “আমি সদ্য যোগদান করেছি। লামা হাসপাতালের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।”
সর্বশেষ খবর