
চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর বহুল প্রত্যাশিত রেলসহ সড়ক সেতু নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার (১৪ মে) সকাল ১১টায় চট্টগ্রামের সার্কিট হাউস থেকে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ফলক উন্মোচন করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে পৌঁছালে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এর আগে, চট্টগ্রাম বন্দরে মতবিনিময় সভা শেষে তিনি সড়ক পথে সার্কিট হাউসে এসে পৌঁছান।
উদ্বোধন ঘোষণা করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'কালুরঘাট ব্রিজে আমার অনেক স্মৃতি। এই সেতুর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। আজ এখানে বোয়ালখালীর বাসিন্দাও উপস্থিত আছেন। কালুরঘাট সেতু তাদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত। এটি তৈরি হয়ে গেলে চট্টগ্রামবাসীর বহু কষ্টের অবসান হবে।'
সড়ক পরিবহণ ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন একটি কালুরঘাট সেতু নির্মাণ। এর নিমার্ণকাজ শুরু হওয়ায় বোয়ালখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসী উৎফুল্ল। এখন যে সেতুটি আছে ১৯৩১ সালে সেটি নির্মাণ করা হয়েছিল। যদি এর মেয়াদকাল ৮০ বছরও ধরা হয়, তবে ২০১১ সালে এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বলে তিনি জানান।
সেতু উপদেষ্টা বলেন, নতুন সেতুর কাজ ২০২৯ সালের মধ্যে শেষ করে ২০৩০ সালে চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাটে একটি সেতু রয়েছে। এটি ১৯৩১ সালে নির্মাণ করেছিল ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের জন্য এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফায় সংস্কার করেছিল রেলওয়ে। কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের পর ২০২৩ সালে ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি আরেক দফা সংস্কার করা হয়। তারপরও অবস্থা জরাজীর্ণ। ভারী যানবাহন চলতে দেওয়া হচ্ছে না। এসব যানবাহন চলছে ফেরি দিয়ে। এ ছাড়া সেতুটি একমুখী। একদিক থেকে যানবাহন এলে অপর প্রান্তের যানবাহনগুলোকে অপেক্ষায় থাকতে হয়। এসব কারণে যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ফলে নতুন সেতুর উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার।
এদিকে দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসী উৎফুল্ল। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকাল ৯টায় কালুরঘাট সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে বোয়ালখালীর সর্বস্তরের নাগরিক সমাজ ও বোয়ালখালী কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে আনন্দ মিছিল বের করা হবে।
উল্লেখ্য, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সফর করছেন। প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে সার্কিট হাউস ত্যাগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠান। এতে ২০১১ থেকে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ২২ হাজার ৬০০ জন শিক্ষার্থীকে সনদপত্র প্রদান করা হবে। এছাড়া ২০১৫-২০২৫ সালের ২২ জন শিক্ষার্থীকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্ষুদ্রঋণ ও দারিদ্র্য বিমোচনে অবদানের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি লিট ডিগ্রি প্রদান করবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন শেষে হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে নিজের পৈতৃক বাড়ি পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে তিনি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে সময় কাটাবেন। এরপর সন্ধ্যায় বিমানে চট্টগ্রাম ত্যাগ করার কথা রয়েছে।
আরমান/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর