• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ২ মিনিট পূর্বে
নিউজ ডেস্ক
বিডি২৪লাইভ, ঢাকা
প্রকাশিত : ১৫ মে, ২০২৫, ০৮:২৫ রাত

মেহেজাবিনের হাত ধরে অনেক নারীর হচ্ছে স্বপ্নপূরণ!

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

শুরুটা সহজ ছিলনা। অনেক চড়াই-উতরাই পার করে আজ সফল মেহেজাবিন। তাকে দেখে পূরণ হচ্ছে অনেক নারীর স্বপ্ন। মেহেদীর হাত শখকে পুঁজি করে আজ তিনি  ‘‘Mehezabin Mehedi House’’-এর স্বত্বাধিকারী মেহেজাবিন খান প্রিয়াংকা। ছোটবেলা থেকেই মেহেদির প্রতি ছিল তার অসম্ভব ভালোলাগা। সময় পেলেই চাচির কাছে যেতেন মেহেদির রঙে দু’হাত রাঙ্গাতে। ধীরে ধীরে নিজেই শিখে যান মেহেদির ডিজাইন।

নিজের হাত ও বান্ধবীদের হাতে চলতো তার মেহেদি দেয়ার চর্চা। এটা ছিল মেহেজাবিনের অন্যতম একটি শখ। ২০১০ সালে শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে খোলেন তার মেহেদির ফেসবুক পেজ। নিজের নামেই করেন নামকরণ। প্রথমদিকে শুধু তার করা ডিজাইনের ছবিগুলোই শখের বশে আপলোড দিতেন। এভাবে আপলোড দিতে দিতে হঠাৎ চলে আসে একটি বিয়ের কনেকে মেহেদি পরানোর অফার। মাত্র ৭০০ টাকার এই ব্রাইডাল কাজের মাধ্যমেই শুরু হয় তার কর্মজীবনের পথচলা।

পাশে পেয়েছিলেন তার বাবাকে। মেহেজাবিনের বাবাই তাকে ক্লায়েন্টের বাসায় পৌঁছে দিতেন। কাজ শেষ না হওয়া অবধি তিনি বাইরে অপেক্ষা করতেন এমনও হয়েছে তিনি ৫-৭ ঘণ্টা দাঁড়িয়েছিলেন তার মেয়ের কাজ কখন শেষ হবে আর মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফিরবেন সেই অপেক্ষায়।  মেহেদি পরানোর এই কাজটি মেহেজাবিনের শখেরই একটি অংশ ছিল। তবে তা বেশিদিন শখের গণ্ডিতে আটকে থাকেনি।

বাবার ব্যবসায় বড় ধরনের লোকসানে মুখ থুবড়ে পরে তাদের সুন্দর সংসার। ৩ ভাইবোনের মাঝে মেহেজাবিনই বড়। মেজো ভাই প্রতিবন্ধী ও ছোট ভাই অনেক ছোট থাকায় সংসারের সবকিছু সামলানোর দায়িত্ব নেন মেহেজাবিন নিজেই। মেহেদি পরানোর কাজের পাশাপাশি চাকরি করতেন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক হিসেবে। অক্লান্ত পরিশ্রমে নিজের পড়াশোনা, ভাইদের পড়াশোনাসহ সংসারের যাবতীয় খরচ বহনের দায়িত্ব অত্যন্ত সুন্দরভাবেই পালন করেন তিনি।

মেহেজাবিনের মা বলেন- “ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম, মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। ওর সায়েন্স ভালো লাগতো না। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করেছে। ওর ইচ্ছা ছিল ফ্যাশন ডিজাইনার হবে। হয়েছে মেহেদি আর্টিস্ট। এতে আমি অনেক খুশি। ওর মেহেদির প্রতি ভালোবাসা দেখে মা হিসেবে অনেক ভালো লাগতো। কখনো ওর কোনো কাজে বাধা দেইনি। ওর সিদ্ধান্তকে সম্মান করেছি সবসময়’।

একটা সময় মেহেজাবিন নিজে নিজে মেহেদি বানানোর চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশে তখন এসেনশিয়াল অয়েল পাওয়া যেত না। খুঁজতে খুঁজতে একটা সময় ইন্ডিয়ায় বসবাসরত চাচার মাধ্যমে খোঁজ পান মেহেদি পাউডার ও এসেনশিয়াল অয়েলের। চাচা তাকে অল্প পরিমাণ পাউডার ও অয়েল পাঠান। তা থেকেই মেহেজাবিন প্রথমবারের মতো অর্গানিক মেহেদি বানাতে সফল হন। তবে তার চাচার মৃত্যুতে তিনি অর্গানিক মেহেদি বানানোর মনোবল হারিয়ে ফেলেন। 

২০১৪ সালে তার বন্ধুর সহায়তায় ইন্ডিয়া থেকে কাবেরী মেহেদির খোঁজ পান মেহেজাবিন। সর্বপ্রথম তিনিই কাবেরী মেহেদির সঙ্গে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দেন। কাবেরী মেহেদির সুন্দর রঙের কারণে তা খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তার ব্যবসাও অনেক ভালো চলতে থাকে। মেহেজাবিন বলেন- “কাবেরী মেহেদিতে প্রথমে কালার ভালো আসছিলো না। তখন খুব হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। পরে দেখি আস্তে আস্তে কালার গাঢ় হচ্ছে। ম্যাজিকের মতো কালার হচ্ছিলো। তখন ছবি তুলে পোস্ট করতে থাকি। অনেক আপুরা পেজে নক দিতে থাকেন, অনেক অর্ডার আসা শুরু হয়।’’ পার্সেল ডেলিভারি করাও তখন সহজ ছিল না। বর্তমান সময়ের মতো এত এত ডেলিভারি কোম্পানি তখন ছিল না। ঢাকার ভেতরের লোকেশনগুলোতে মেহেজাবিন নিজে গিয়েও ডেলিভারি দিয়ে আসতেন। ঢাকার বাইরে সুন্দরবন কুরিয়ারের মাধ্যমে পার্সেল পাঠানো হতো। প্যাকেট হিসেবে ব্যবহার করতেন বাবার এনে দেয়া কাগজের ঠোঙা। অল্পের মাঝেই চেষ্টা করতেন প্যাকেজিংটা কীভাবে সুন্দর করা যায়। ডায়েরির পাতায় লিখে লিখে অর্ডার কাটতেন মেহেজাবিন।

২০১৬ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মেহেজাবিন এবং নাফিউল। মেহেজাবিন শুধু একজন জীবনসঙ্গী নয়, পেয়েছিলেন একজন বিশ্বস্ত বন্ধুও। স্বামীর চেষ্টায় মেহেদি বানানোর কাঁচামালের খোঁজ পান। আবারো অর্গানিক মেহেদি বানানোর ইচ্ছা চাপে তার মনে। কারণ কাবেরী মেহেদিতে স্কিন পিল অফ (চামড়া ওঠা) হতো। যা ছিল অস্বস্তিকর। ইন্ডিয়া থেকে মেহেদি পাউডার, এসেনশিয়াল অয়েল, সেলোফেন পেপার আসা শুরু হয়। তা দিয়েই তৈরি হয় মেহেজাবিন মেহেদি হাউসের অর্গানিক মেহেদির কোন। দ্রুত সময়েই মেহেদির অনেক অর্ডার আসা শুরু হয়। প্রথমদিকে স্বামী-স্ত্রী মিলেই মেহেদি বানানো থেকে শুরু করে কাস্টমারকে পার্সেল দিয়ে আসা পর্যন্ত সবকিছু করতেন। একসঙ্গে রাত জেগে কাজ করতেন তারা। পরবর্তীতে কাজের চাপ বাড়তে থাকে, সকল সেক্টরে নেয়া হয় কর্মচারী।

মেহেজাবিন বলেন- “অর্গানিক মেহেদি ব্যবহারে স্কিনে কোনোরকম সমস্যা হয় না। ডিপ ফ্রিজে এ মেহেদি ১০ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা যায়। ১০০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয় আমাদের অর্গানিক মেহেদির কোন। দেশের ৬৪টি জেলা এখন মেহেজাবিনের দখলে। প্রতিদিন শত শত মেহেদির কোন এবং কাঁচামাল খুচরা ও পাইকারি মূল্যে পৌঁছে যায় দেশের আনাচে-কানাচে।

মেহেজাবিন বলেন- “প্রতিবছর দুই ঈদ এবং শীতকালীন বিয়ের সিজনে পেজে কাজের চাপ অনেক বেড়ে যায়। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে দৈনিক ৫০০-৭০০ কোন বানানো হয়, সেখানে সিজন আসলে দৈনিক ৩০০০-৫০০০ কোন বানানো হয়।’’ এ ছাড়াও মেহেজাবিন দুই ঈদে করেন মেহেদি মেলার আয়োজন। ঈদের ২/৩ দিন আগে থেকে শুরু হয় মেলা। এ মেলায় থাকে ৪০-৫০ জন সিনিয়র মেহেদি আর্টিস্ট। ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নারীরা ছুটে আসেন এ মেলায়। এ যেন মেহেদিপ্রেমীদের এক মস্ত বড় মিলনমেলা। এ ছাড়াও যারা মেহেদি দেয়া শিখতে চায়, তাদের জন্য রয়েছে কোর্স করার সুযোগ। প্রশিক্ষক মেহেজাবিন নিজেই। যেখানে বেসিক থেকে প্রফেশনাল কাজগুলো হাতে ধরে ধরে শেখানো হয়ে থাকে।  

একজন সফল মেহেদি আর্টিস্ট এবং নারী উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে অবদান রয়েছে তার পুরো পরিবারের। মেহেজাবিন বলেন- ‘আমার সফলতার পেছনে রয়েছে আল্লাহর রহমত, আমার কঠোর পরিশ্রম ও আমার পরিবার। আব্বু আর স্বামীকে সবসময় পাশে পেয়েছি। তাদের সাপোর্ট ছাড়া কখনো এখানে আসা সম্ভব হতো না।’

মেহেজাবিন এখন এক কন্যা সন্তানের জননী। দায়িত্ব আর অনুপ্রেরণা যেন সমানতালে বাড়ছে তার জীবনে। শূন্য হাতে কর্মজীবন শুরু করা মেহেজাবিনের হাত ধরে ৩০০’র বেশি নারী হয়েছেন স্বাবলম্বী। কেউ হয়েছেন প্রতিষ্ঠিত মেহেদি আর্টিস্ট, কেউ অর্গানিক মেহেদির ব্যবসায়ী, কেউবা ক্রাফটিং সেক্টরে হয়েছেন সফল। মেহেদি আর্টিস্ট, মডারেটর, ডেলিভারিম্যান ও অন্যান্য কর্মচারীসহ অর্ধশতাধিক সদস্যের একটি টিম নিয়ে বর্তমানে এগিয়ে যাচ্ছেন মেহেজাবিন। ধীরে ধীরে গড়ে তুলছেন মেহেদির সাম্রাজ্য। কীভাবে প্রডাকশন ভালো করা যায়। কীভাবে কোয়ালিটি আরও ভালো করা যায় সেদিকে তিনি এখন চিন্তিত। তিনি বলেন স্বামী,বাবা তার পাশে না থাকলে তিনি এতদূর এগোতে পারতেন না।

আরমান/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]