
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদ এখন আর জীবন-জীবিকার স্থান নয়—এটি রূপ নিয়েছে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার নদীতে। গেল সাত মাসে এই নদী ও আশপাশের এলাকা থেকে অন্তত ২২০ জন বাংলাদেশি জেলেকে অপহরণ করেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (AA)।
শুধু ২০২৪ সালের প্রথম পাঁচ মাসেই অপহরণের শিকার হয়েছেন ১৫১ জন। বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসনের বারবার চেষ্টা সত্ত্বেও অনেককে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি, নিখোঁজ রয়েছেন অনেকেই।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জেলে মো. আইয়ুব ৬ এপ্রিল সকালে বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ ধরে ফিরছিলেন, সঙ্গে ছিল প্রায় আড়াই লাখ টাকার মাছ। হঠাৎ অস্ত্রধারী সাতজন আরাকান আর্মির সদস্য ট্রলার থামিয়ে তাদের চোখ-মুখ বেঁধে নিয়ে যায় রাখাইনের মংডু এলাকায়।
আইয়ুব জানান, তাদের বন্দি রাখা হয় অন্ধকার একটি ঘরে যেখানে আগে থেকেই ৩১ জন বাংলাদেশি ছিল। সেই বন্দিশালায় বন্দির সংখ্যা ছিল প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ জন। খাবার হিসেবে দেওয়া হতো নিরামিষ এঁচোড় ভাত, একটু লবণের দাবিতেও মিলত মারধর।
একই নদীতে ১২ মে গুলিবিদ্ধ হন জেলে হেদায়েত উল্লাহ (১৮) ও মো. হোসেন (১৬)। বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সময় সরাসরি গুলি চালায় আরাকান আর্মি। একই সময় আরও তিনজন অপহৃত হন।
২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও মাদক পাচার রোধে নাফ নদে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতের আদেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে আবারও নেমে পড়েন জেলেরা—যার পর থেকেই অপহরণ বেড়ে যায় ব্যাপক হারে।
জানা যায়, রোজার মাসে বন্দিদের মুক্তিপণ হিসেবে প্রতি ট্রলারের জন্য দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করে আরাকান আর্মি। হ্নীলার আবদুর শুক্কুর জানুয়ারিতে অপহৃত হন, এখনও নিখোঁজ। তার স্ত্রী সাজেদা বেগম বলেন, “চার সন্তান নিয়ে বাঁচার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না। কেউ কিছু জানে না।”
ফিরে আসা কয়েকজন জেলে জানান, আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ার চেষ্টা করছে এবং বন্দিদের মাধ্যমে এপারে খাবার পাঠানোর বার্তা দেয়।
সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারীরা জানান, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর রাখাইনের প্রায় ৯০% নিয়ন্ত্রণে নেয়া সংগঠনটি এরপর থেকেই আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। এমনকি সীমান্ত বাণিজ্যও তাদের নিয়ন্ত্রণে—জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ইয়াংগুন থেকে আসা চারটি ট্রলার তারা আটকে দেয়, ছাড়াতে হয় কমিশন দিয়ে।
বিজিবি’র রামু সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “জেলেরা ভুল করে সীমান্ত পার হলেই আরাকান আর্মি ধরে নেয়। আমরা যোগাযোগ করে অনেককে ফেরত আনছি, তবে খাবার পাঠানোর প্রশ্নই আসে না।”
শাহপরীর দ্বীপ নৌঘাটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর বলেন, “সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জেলেরা নদীতে নামছে। অনেকে সীমান্ত অতিক্রম করছে না বুঝেই। এরপর আর তাদের খোঁজ পাওয়া যায় না।”
আরমান/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর