
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দেহব্যবসায় বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে ১৭ বছর পর কলেজ ছাত্র মোহাম্মদ আলী হত্যা মামলায় দুই নারীসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছে কিশোরগঞ্জের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এছাড়া প্রত্যেক আসামিকে ১০ হাজার টাকা অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে কিশোরগঞ্জের ৩য় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত এর বিচারক ফাতেমা জাহান স্বর্ণা এ আদেশ দেন। প্রদত্ত সাজা ফাঁসির মাধ্যমে কার্যকর করার নির্দেশ দেন বিচারক।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দৌলতদিয়া গ্রামের মো. কাইয়ুম সরকারের স্ত্রী মোছা. সেলিনা বেগম ওরফে শিউলী (২৫) একই জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুর গ্রামের আব্দুল খালেকের মেয়ে শোভা প্রকাশ মেঘলা (২০) এবং কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার ভৈরবপুর উত্তরপাড়ার মৃত সাহিল উদ্দিন এর ছেলে মো. সুমন (২২)।
রায় ঘোষণার সময় সেলিনা বেগম ছাড়া বাকি দুজন পলাতক। রায়ে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
নিহতের নাম মোহাম্মদ আলী (২২)। তিনি ভৈরবের হাজী আসমত কলেজে বিএসসি ১ম বর্ষের ছাত্র। তিনি কলেজ ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করতেন। তিনি জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার তারাকান্দি মধ্যপাড়া এলাকার মো. সামছুদ্দিন মিয়ার ছেলে।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এপিপি শফিউজ্জমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গত ২০০৮ সালের (০৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে ভৈরব হাজী আসমত কলেজের বিএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলীকে আসামীরা পরস্পর যোগসাজশে ধারালো অস্ত্রের উপর্যুপরি আঘাতে হত্যা করে।
এ ঘটনায় পরদিন নিহত মোহাম্মদ আলীর পিতা শামসউদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ভৈরব থানায় একটি হত্যা মামলা দয়ের করেন। পরে তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভৈরব থানার এসআই আব্দুল আজিজ ২০০৮ সালের ৩০ মে মো. সুমন মিয়া, সেলিনা বেগম, শোভা প্রকাশ ও মহরম আলী এ চারজনকে আসামি করে অভিযোগ পত্র প্রদান করেন। মামলার তদন্তকালে আটক হয়ে মো. সুমন মিয়া ও মহরম আলী ১৬৪ ধারায় স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
স্বীকারোক্তিতে তারা জানান সেলিনা বেগম ও শোভা প্রকাশ দেহ ব্যবসায় জড়িত ছিল। নিহত শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী তাদের অনৈতিক কাজে বাধা দিত সেলিনা বেগম ও শোভা প্রকাশ তার ও মহরম আলীর শরণাপন্ন হয়। এর জের ধরে (৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাত নয়টার দিকে হাজী আসমত কলেজের ভিতর আটকে মোহাম্মদ আলী ও তার বন্ধু মুরাদকে ধারালো অস্ত্রের উপর্যুপরি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এর ফলে হাসপাতালে নেয়ার পূর্বেই মোহাম্মদ আলীর মৃত্যু হয় এবং গুরুতর আহত মুরাদকে ঢাকার একটি হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
এ মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন এপিপি শফিউল জামান ভুঁইয়া।
কিশোরগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আদালতের নির্দেশনায় সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা হত্যার সঠিক তথ্য উপস্থাপন করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর