
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাবেক সভাপতি একরামুল হক একরাম হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর পূর্ণ হলো আজ। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর পূর্ণ হলেও এখনও গ্রেফতার হয়নি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৭ আসামি। ১৭ আসামির মধ্যে সবাই আওয়ামী লীগ যুবলীগ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ২০১৪ সালের ২০ মে প্রকাশ্য দিবালোকে ফেনী শহরের একাডেমিতে স্বদলীয় প্রতিপক্ষ একরামকে গুলি করে, কুপিয়ে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে নৃংশসভাবে হত্যা করে স্বদলীয় প্রতিপক্ষ। হত্যার ঘটনায় জড়িত একের পর এক হত্যাকারীরা গ্রেফতার হতে থাকলে মুখোশ উন্মোচিত হয় ঘটনার নেপথ্যে কাহিনি। বেরিয়ে আসে সরকার দলীয় অন্তকোন্দলের কারণে হত্যা করা হয় একরামকে। হত্যার সাথে রাঘব-বোয়ালদের নাম বেড়িয়ে এলে গা ঢাকা দিয়ে আত্মগোপন যায় হত্যাকারীরা।
হত্যার পর ফুঁসে ওঠে এলাকাবাসী। হরতাল-অবরোধ-বিক্ষোভসহ মাস ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে ফুলগাজী উপজেলাবাসী। একরাম হত্যার ঘটনায় তার বড় ভাই রেজাউল হক জসিম বাদি হয়ে ৩০-৩৫ জনকে আসামী করে মামলা করে। হত্যার একশত দিন পর ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ৫৬ জনকে আসামী করে আদালতে অভিযোগ পত্র (চার্জশিট) দাখিল করে। আদালত আড়াই মাস পর ওই বছরের ১২ নভেম্বর আলোচিত এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে। অভিযোগপত্র দাখিলের ১৬ মাস পর আদালত মামলার চার্জফ্রেমে (বিচারকাজ) গঠন করে। পরবর্তীতে সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরু হয়।
২০১৮ সালের ১৩ মার্চ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে ৩৯জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৬ জনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। ফেনীর জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গির আদেল, পৌর কমিশনার আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু রয়েছেন। জামিন নিয়ে পালাতকদের মধ্যে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী ও ফেনী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নিলুফা ইয়াসমিন বড় মনির ছেলে আবিদুল ইসলাম আবিদ রয়েছেন।আদালত মামলার বাদি একরামের বড় ভাই রেজাউল হক জসিম, ছোট ভাই এহসানুল হক, নিহতের স্ত্রী তাসমিন আক্তার, গাড়ি চালক আবদল্লাহ আল মামুনসহ ৫০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে। মামলার অভিযোগ পত্রে পুলিশ ৫৯ জনকে সাক্ষী করেছিলো।
এদের মধ্যে সাধারণ সাক্ষী রয়েছে ২৮ জন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১৬ জন আসামী হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যায় ব্যবহৃত একাধিক চাপাতি ও ৫টি পিস্তলের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে মাত্র দুটি পিস্তল ও কয়েকটি চাপাতি। এই মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ২২ জন কারাগারে রয়েছেন। ৮ জন জামিনে মুক্ত হয়ে পালাতক রয়েছেন। ৯জন শুরু থেকে পালাতক রয়েছেন। রুটি সোহেল নামে একজন জামিনে থাকা অবস্থায় র্যাবের ক্রস ফায়ারে নিহত হয়।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর