• ঢাকা
  • ঢাকা, বুধবার, ২১ মে, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১ মিনিট পূর্বে
মোঃ এস হোসেন আকাশ
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২১ মে, ২০২৫, ১০:১৩ দুপুর

মানবতার প্রতীক মনু মিয়া: যার ঘোড়াটিও ছিল এক বীর সহচর

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

কিশোরগঞ্জের কৃতি সন্তান অভিনেতা খাইরুল বাসার ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে দেখতে গেলেন কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধী ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের কবর খোদক মনু মিয়াকে। 

এরপর হাসপাতালে তাদের দু'জনের মধ্যে কি কথোপকথন হয় তা নিজের ফেসবুকে তুলে ধরেন অভিনেতা খায়রুল বাসার। 
যে কথোপকথন হয় তা হুবহু তুলে ধরা হলো......

মনু চাচা দোয়া ছাড়া কিছু চান না আপনাদের কাছে। উনি আপনাদের জন্য দোয়া করেন আপনারা ভালো থাকুন , সুন্দর থাকুন। 

মনু চাচা বললেন ঘোড়ার জন্য তার কষ্ট নাই। কষ্ট নাই কারা তার ঘোড়াকে হত্যা করেছে তা নিয়েও। মনু চাচা মনে করেন তার ঘোড়ার সাথে তার যাত্রা এ পর্যন্তই রাখছেন আল্লাহ। ঘোড়াটার কপালে আল্লাহ সময় সীমা এই রাখছিলেন। বললেন সে মারা গেছে তো চোখে দেখি নাই তাই কষ্ট যেটুক হবার তাও হচ্ছে না। আসলে আর কতটা অভিনয় করলে সন্তানের প্রতি মায়া আড়াল করতে পারবেন; মনু চাচা ভেবে পাচ্ছেন না!

আবার জিজ্ঞেস করলাম, বাড়ি ফিরে ওকে ছাড়া শূন্য শূন্য লাগবে না? বললেন ১০ মণ খড় আর ১০ মন কুড়া কিনেছিলেন ওর জন্য। অল্প খাইয়ে ঢাকায় এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। এই খড় কুড়া ওর রিজিকে থাকলো না , তার আগেই সে চলে গেলো! বাড়ি ফিরে এই খড় কুড়া দেখে কষ্ট হবে। বাড়ি ফিরে যে ঘোড়াটার জন্য কষ্ট হবে ; এই ভেবেই মনু চাচার চোখ ভিজে উঠলো! আমি একটু থামলাম। ভাবলাম কত আর শক্ত থাকা যায়! মায়া তো মনু চাচার আছে।

মনু চাচার অসুস্থতা বলতে ডায়বেটিস আর কোমর ব্যথা। কথাবার্তায় যা বুঝলাম খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম করেন খুব। ফজরের নামাজ পড়ে বেরিয়ে পড়েন উনার দায়িত্বে , জোহরের নামজ শেষে দাফন শেষ হয় , তারপর বাড়ি ফিরতে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা বা রাত। সকালের নাস্তা বা দুপুরের খাবার খাওয়া হয় না। এমনটা প্রায়ই ঘটে, কারণ মৃত ব্যক্তির বাড়িতে উনি কখনও কিছু খান না। কবর খোঁড়া কাজে উনি কোনদিন কারো থেকে এক পয়সা নেন নাই। নিঃস্বার্থভাবে নিরলসভাবে উনি মানুষের প্রতি উনার মহৎ দায়িত্বটাকেই এগিয়ে রেখেছেন! 

জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই ঘোড়াটা কতদিন ছিলো আপনার সাথে? উনি বললেন মুক্তির সময় থেকে উনি ঘোড়ায় চড়েন। ৭১-এ বয়স কত ছিলো জিজ্ঞেস করলে বললেন মুক্তিদের বয়সের সমানই। ১৩-১৪? হেসে বললেন বয়স তখন ১৭-১৮ই হবে মনে হয়। হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলাম এই কাজ কবে থেকে করেন? উনিও হেসে বললেন তখন বাবাজি তোমরা জন্মও নাই। 

মানুষের বাইক-সাইকেলের শখ থাকে। আমি যতটা বুঝলাম উনার শখ ছিলো হাতেম তাই হওয়া। মানুষের প্রোয়োজনে ঘোড়ার পিঠে চড়ে মানুষের দুয়ারে পৌঁছে যাওয়া। উনি উনার সাধ্যের মধ্যে সবচেয়ে মহৎ কাজটিই করে গেছেন আজীবন। উনি সুস্থ হয়ে আবার উনার শখের কাজে ফিরতে চান দ্রুত। আপনাদের দোয়ায় নিশ্চয়ই আল্লাহ উনাকে দ্রুত সুস্থ করে তুলবেন। 

উনি কারো কাছে ঘোড়া চান না , দোয়া চান। উনার কারো প্রতি অভিযোগ - অনুযোগ নেই। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে প্রোয়োজনে ৭ টা ঘোড়া কিনতে পারবেন বলেছেন। যা হবার হয়ে গেছে , আল্লাহ যা নির্ধারণ করতে চান তাই হবে। উনি মনে করেন সবই নসিব।

কতটা কদর বুঝি আমরা এমন মানুষদের! কি প্রতিদান পেল এই মানুষটা? হাঁটছি আর ভাবছি...
"মুক্তার মালা গলায় দিয়ে ঘুরে কপাল পুড়া! 
না কিনে উপায় কি কিনতে চাইলে ঘোড়া?? 

মনু মিয়ার ঘোড়া তার জীবন দিয়ে আমাদের সাথে এক নায়কের পরিচয় করিয়ে দিলো! আমাদের শেখা উচিত এই সমাজের মানবিক আদর্শ , সম্মান এবং গর্ব " আমাদের মনু মিয়া "।

উল্লেখ্য, ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন বৃদ্ধ মনু মিয়া। বয়স ৬৭। শরীরে একাধিক রোগ বাসা বেধেছে। চোখে দৃষ্টি ঝাপসা, কিন্তু মন এখনও টানছে দূরের সেই গ্রামের দিকে। যেখানে কেউ মারা গেলে তিনিই প্রথম ছুটে যেতেন, হাতে কোদাল নিয়ে। কিন্তু কি করে ছুটে যাবেন? তিনদিন হলো তিনি জানেনেই না তার ছুটে চলার সাথী, জীবনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রাণী ঘোড়াটি আর বেঁচে নেই।

ঘোড়াটি তার বাহন ছিল না কেবল, ছিল একান্ত আপন। যে কথা বলত না, তবু যেন সব অনুভূতি বুঝত। সেই ঘোড়াটিকে অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারীরা বল্লম দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছে।

প্রায় এক দশক আগে নিজের শেষ সম্বল, বাজারের একটি ছোট দোকান বিক্রি করে কিনেছিলেন একটি ঘোড়া। কারণ তখন পায়ে হেঁটে আর কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না। সেই ঘোড়াটিই হয়ে ওঠে তার সহচর—দিনের আলো হোক কিংবা রাতের অন্ধকার, মানুষের মৃত্যু সংবাদ পেলেই টগবগ টগবগ করে ছুটে যেতেন। হাতে কোদাল, কাঁধে ফাতিলা কাপড়। চোখে নির্ভীক নিষ্ঠা।

সেই প্রাণপ্রিয় সাথীটিই গত শুক্রবার সকালে ঘাস খেতে গিয়ে আর ফিরেনি। তিনি যতদিন ছিলেন সন্তানের মতো আগলে রাখতেন। কিন্তু তিনি অসুস্থ হয়ে সয্যাশায়ী হওয়ায়। ঘোড়াটির দেখভালের কেউ ছিল না। গত বৃহস্পতিবার (১৫ মে) পাশের হাশিমপুর গ্রামে ঘাস খেতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ঘোড়াটি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিথর দেহে পরিণত হয় মনু মিয়ার প্রিয় বাহনটি।

এলাকাবাসী হতবাক হয়ে পড়ে। মনু মিয়ার মতো তার ঘোড়াটিও ছিল ব্যাপক জনপ্রিয় সবার কাছে। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে কেউ কেউ কান্না আটকে রাখতে পারেনি। কেউ বলেছে, ‘মনু চাচার ঘোড়াটির মতো এমন প্রাণী আর আসবে না। আঘাত শুধু ঘোড়াটিকে করা হয়নি বরং মনু চাচাকে আঘাত করা হয়েছে। আঘাত করা হয়েছে মানবতাকে।’

ঘোড়ার মৃত্যুর খবর শুনে এলাকার কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার সকালেই ওই স্থানে ছুটে যান রিজন আহমেদ, তার ভাষ্যমতে, ঘোড়াটি যেখানে পড়ে আছে আশপাশের কিছু লোকের তোপের মুখে পড়ে আর ফেরতও আনতে পারেননি। তিনি জানান, এখনো ঘোড়ার নিথর দেহটি পড়ে আছে একটি জমিতে।

তারই এক প্রতিবেশী আলমগীর বলেন, ‘মনু চাচা এক পয়সাও নেন না কারও কাছ থেকে। মৃত্যুর সংবাদ শুনলেই চলে যেতেন। সেই মানুষটির ঘোড়াটিকে এভাবে হত্যা করা—এটা তো পশুহত্যা নয় শুধু, পুরো সমাজের বিবেকের মৃত্যু।’

যদি সুস্থ হয়ে ফিরতে পারেন মনু মিয়া, হয়ত নিজ হাতে খনন করবেন তার প্রিয় সাথীর কবর। কোদালের প্রতিটি ঘায়ে হয়ত পড়বে এক ফোঁটা করে চোখের জল। মাটিতে চাপা পড়বে শুধু একটি দেহ নয়—একটি বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, আর ইতিহাস।

আরমান/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com