
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বাড়ছে বরিশালের কামার পট্টিতে। একদিকে হাপরে আগুনের শিখা অন্যদিকে হাতুরির টুংটাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠছে কামার পট্টিগুলো। শহর থেকে শুরু করে গ্রাম, সবখানেই কামারদের এই ব্যস্ততা লক্ষণীয়। স্থায়ী কামারের দোকানের পাশাপাশি ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন হাট-বাজারে বসেছে অস্থায়ী দা, বটি, ছুরি ও চাপাতির দোকানও। তাদের অক্লান্ত শ্রমে তৈরি হচ্ছে কোরবানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম দা, বটি, ছুরি ও চাপাতি।
কোরবানির ঈদে গরু, ছাগল, মহিষসহ পশু জবাই করা হয়। ঈদ উপলক্ষ্যে সাধারণত তিনদিন ধরে কোরবানি দেওয়া যায়। শুরু হয় ঈদের দিন সকাল থেকে। এসব পশুর মাংস তৈরিতে প্রয়োজন পড়ে নানা ধরনের ধারালো ধাতব সরঞ্জামাদি। যেমন দা, বঁটি, ছুরি ও চাপাতি ইত্যাদি। ফলে ঈদ সামনে রেখে এসব তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কামাররা।
কামার পট্টিতে গিয়ে দেখা যায়, টুংটাং শব্দে মুখর কামার পট্টি। কয়লার চুলায় জ্বলছে আগুন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন কারিগররা।
কেউ তৈরি করছেন নতুন সরঞ্জাম। কেউ শান দিচ্ছেন পুরোনো ছুরিতে। কারখানার জ্বলন্ত আগুনের তাপে কামারদের শরীর থেকে ঝরছে অবরিাম ঘাম।
চোখে মুখে প্রচণ্ড ক্লান্তির ছাপ। তবুও তারা থেমে নেই। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে তাদের ব্যস্ততা। তৈরি করছেন পশু জবাইয়ের সামগ্রী। কারখানার সামনেই দোকান বসিয়ে সরাসরি এসব সামগ্রী বিক্রি করছেন কেউ কেউ।
জেলার সদর উপজলাসহ বিভিন্ন উপজেলার হাট বাজারে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দা, বটি, চাকু, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করছে কামাররা। কেউ কেউ শান দিচ্ছে নতুন দা, বটি, ছুরি ও চাকু । সাজিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সামনে। ক্রেতারা তাদের পছন্দমতো কিনে নিচ্ছেন কোরবানির অপরিহার্য এই সরঞ্জাম।
সদর উপজেলার কামার পট্টির রণজিৎ কামার বলেন, স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরাও এখন কোরবানির সরঞ্জাম কিনে নিচ্ছেন।
আবার কসাইরাও মৌসুমি ব্যবসার জন্য পশুর মাংস বানিয়ে বাড়তি রোজগারের আশায় তাদের চাহিদামতো সরঞ্জাম বানিয়ে নিচ্ছেন। তিনি জানান, কামারপাড়ার এই ব্যস্ততা থাকবে কোরবানির দিন পর্যন্ত।
সুভাষ কামার বলেন, বছর জুড়ে কাজের চাপ কম থাকলেও ঈদুল আজহার সময় চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। আগের তুলনায় এখন দোকানগুলোতে ক্রেতার সংখ্যাও বেড়েছে।
পশু জবাই করার সামগ্রী কিনতে বাজারগুলোতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। দাম কিছুটা বাড়লেও চাহিদার কারণে বিক্রি থেমে নেই। ঈদের বেচাকেনা দিয়েই কামারদের ঘরে উঠবে বছরের অন্তত: কয়েক মাসের খাবার।
তিনি বলেন, বর্তমানে ছোট ছুরি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ২’শ ৫০ টাকা, বড় ছুরি ১’শ ৫০ থেকে ৩’শ টাকা, দা ২’শ ৫০ থেকে ৬’শ ৫০ টাকা, বড় বঁটি ৩’শ থেকে ৮’শ টাকা, জবাইয়ের ছুরি ৫’শ থেকে ১ হাজার টাকা এবং হাড় কাটার চাপাতি ৩’শ থেকে ৪’শ টাকায়। বড় চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৪’শ থেকে ৮’শ টাকায়। কয়েকদিন পরই পবিত্র কোরবানির ঈদ। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তার নামে পশু জবাই করে কিছুটা হলেও ত্যাগ স্বীকার করেন ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর