• ঢাকা
  • ঢাকা, রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১ মিনিট পূর্বে
আবু হাসান শেখ
কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২৫ মে, ২০২৫, ১০:০১ রাত

উদ্যোক্তাদের গল্প তুলে ধরতে ধরতে নিজেই হলেন সফল উদ্যোক্তা

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

পেশায় সাংবাদিক। মাঠে ঘাটে, পথে প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে তথ্য নিয়ে তৈরি করেন জীবন যুদ্ধে হার না মানা উদ্যোক্তাদের গল্প। সেই সব গল্প থেকে নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে সফল উদ্যোক্তার গল্পে পরিণত হয়েছেন ওই সাংবাদিক। তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি তাঁর নিজ গ্রামের বাড়িতে গরু মোটাতাজাকরণ, মাছ চাষ, বস্তায় আদা চাষ ও দেশি মুরগি পালন করে শুধু নিজের জীবনই বদলে দেননি, বরং আশেপাশের অনেকের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন। এলাকার মানুষের কাছে সফল উদ্যোক্তার গল্পে পরিণত হয়েছেন।

নীলফামারী জেলার এক ছোট্ট গ্রামে জন্ম জুয়েল আহমেদের। পুরো নাম আনজারুল ইসলাম জুয়েল। জুয়েল আহমেদের হাতেকরি পেশাগত জীবন শুরু হয় বাবা প্রভাষক তোফাজ্জল হোসেনের নিজ হাতে গড়া স্থানীয় সাপ্তাহিক নীলসাগর দিয়ে । ন্যায়ের পথে থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন তিনি। এরপর বিভিন্ন পত্রিকা ও চ্যানেলে ছিলেন নীলফামারী প্রতিনিধি। পরবর্তীতে তিনি চ্যা নেল২৪ চ্যানেলের রংপুর অফিস প্রধানের কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাভিশন চ্যানেলের উত্তারাঞ্চল প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় কাটিয়েছেন সংবাদমাধ্যমে। তবে সাংবাদিকতা জীবনে আর্থিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বরাবরই ছিল এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। সে সময় তার বিভিন্ন জীবন যুদ্ধের উদ্যোক্তাদের স্টোরির চিত্র ফুটে উঠে চোখে। সেই থেকে নিজের জীবনে ভিন্ন কিছু করার ভাবনা আসে তার মনে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি ছোট আকারে খামার গড়ে তোলার চিন্তা করেন তিনি।

তিনি বলেন, "সংবাদপত্রে কাজ করতে গিয়ে কৃষি ও উদ্যোক্তাদের নিয়ে অনেক রিপোর্ট করেছি। তখনই ভাবনায় আসে, কিছু করার। সেটাই আমার অনুপ্রেরনা। 

জন্মস্থান নীলফামারীর রামনগর ইউনিয়নের চাদের হাটের দেওয়ানী পাড়ায় নিজের বসতবাড়ির খালি জায়গা থেকেই শুরু হয় জুয়েলের নতুন পথচলা। বাড়ির উঠোন, ফাঁকা জায়গায় প্রথমে শুরু করেন দেশি গরুর মোটাতাজাকরণ প্রকল্প।‘নাম দেয়া হয় ‘নীবিড় এ্যাগ্রো ও ডেইরি ফার্ম’। করেছেন সরকারি নিবন্ধনও। দুইটি গরু দিয়ে শুরু করে এখন তার খামারে গরুর সংখ্যা ১৫ এর বেশি। বিশেষভাবে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু লালন-পালন করেন তিনি, যাতে কম খরচে ভালো মুনাফা পাওয়া যায়।

এ কাজে নীলফামারী জেলা ও উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তা এবং চিকিৎসকদের আন্তরিকতার অভাব ছিল না। গরুর খামারের পেছনেই তৈরি করেন একটি বড় পুকুর, যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করছেন তিনি। তেলাপিয়া, রুই, কাতলা, সিলভার কার্পসহ নানা জাতের মাছ রয়েছে তার পুকুরে। স্থানীয় বাজারে এই মাছের চাহিদা ব্যাপক। সপ্তাহে একাধিকবার স্থানীয় বাজারে মাছ সরবরাহ করেন তিনি।

এছাড়াও পলিব্যাগে বা বস্তায় আদা চাষ করে চমক দেখিয়েছেন জুয়েল। সামান্য জায়গায় কিভাবে আদা চাষ করে লাভবান হওয়া যায়, তার উজ্জ্বল উদাহরণ তিনি। তার বাড়ির চারপাশে ছড়িয়ে থাকা বস্তায় বেড়ে উঠছে আদার গাছ, যেগুলো থেকে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। আদা চাষে ‘মসলার উন্নত জাত, প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, প্রকল্প সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হটিকালচার সেন্টার বুড়িরহাট রংপুর’ এ কাজে সহযোগিতা করেছে।

জুয়েলের উদ্যোগের আরেকটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে দেশি মুরগি পালন। বাড়ির উঠানে ঘেরা পরিবেশে দেশি জাতের মুরগি লালন-পালন করে বাজারজাত করছেন তিনি। মুরগির মাংস ও ডিম স্থানীয়ভাবে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অগ্রিম বুকিং দিয়ে রাখেন। নির্ভেজাল দেশি মুরগির মাংস ও ডিমের স্বাধ গ্রহণ করছেন পরিবারসহ আশপাশের সবাই। 

তিনি বলেন, “দেশি মুরগি পালন করতে গেলে একটু সময় ও যত্ন লাগে, তবে বাজারে এর দাম অনেক বেশি। তাই আমি এটা নিয়মিত করছি। স্থানীয় নারীরাও এখন আমার কাছ থেকে শিখে নিজেদের বাড়িতে ছোট ছোট খামার গড়ে তুলছেন।”

জুয়েল আহমেদ আধুনিক প্রযুক্তি ও ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করতেও দক্ষ। ইউটিউব, কৃষিভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপ ও সরকারি কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে নিজের খামারে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেন তিনি। যেমন, গরুর খাবার হিসেব করে দেওয়া, মাছের পিএইচ মাপা, কিংবা মুরগির বাচ্চা ফোটানোর ইনকিউবেটর ব্যবহার—সব কিছুতেই তিনি আধুনিকতা এনেছেন।

 জুয়েল আহমেদ জানান, চ্যালেঞ্জিং পেশা সাংবাদিকতা। তারওপর রংপুর বিভাগীয় শহরে সাংবাদিকতা সামলে যে টুকু সময় পান তখনি পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে ৬৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ছুটে আসেন খামারে। নীলফামারী আর রংপুরে স্থায়ী বসবাসের কারণে গ্রামের বাড়িটি ভূতুরে হয়ে ছিলো। পালাপর্বন ছাড়া বাড়িতে খুব একটা আশা হতোনা। যদিও বৃদ্ধ মা মনোয়ারা বেগম (৭৬) এর মন টিকটো না শহরে। বার বার স্বামীর ভিটেতে মন পড়ে থাকতো আর শরীর থাকতো ইটপাথরের শহুরে। খামার তৈরির পর থেকে মায়ের মন বসেছে বাড়িতে। সবুজ প্রকৃতি আর প্রাণীদের কলকাকলিতে বাড়িতে এখন এক অন্যরকম আবহ বিরাজ করছে। 

উদ্যোক্তা হওয়ার পথে তার সবচেয়ে বড় সমর্থক ছিলেন তার পরিবার। স্ত্রী ও সন্তানরা শুরু থেকেই তার উদ্যোগে পাশে ছিলেন। এছাড়া স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, কৃষি অফিস, প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকেও পেয়েছেন সহযোগিতা। তার এই পরিকল্পনা স্থানীয় বেকার যুবকদেরও উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রাণিত করেছেন।

প্রতিটি সফলতার পেছনে লুকিয়ে থাকে সংগ্রামের গল্প। জুয়েল আহমেদের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। খামার শুরু করার পর প্রথম দিকে লোকসানের মুখে পড়তে হয় তাকে। খাদ্য খরচ, রোগ প্রতিরোধ, বাজারের ওঠানামা সবকিছু মিলিয়ে কষ্টে চলেছে অনেক সময়। তবে তিনি বলেন, "আমি জানতাম আমার লক্ষ্য কোথায়। তাই যত কষ্টই হোক, হাল ছাড়িনি। আজ সেই পরিশ্রমের ফল পাচ্ছি। জুয়েল আহমেদের খামার আজ শুধু একটি পরিবারের আয়ের উৎস নয়, বরং স্থানীয় অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তার খামারে কাজ করছেন স্থানীয় ৫-৭ জন যুবক। তিনি অনেককেই প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। ফলে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি, একটি সমৃদ্ধ উদ্যোক্তার পরিবেশ তৈরি হয়েছে তার চারপাশে।

জুয়েল আহমেদ থেমে থাকতে চান না। তার লক্ষ্য খামারকে আরও সম্প্রসারণ করা। গরুর খামারের জন্য আরো আলাদা একটি শেড নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। মাছ চাষে বায়োফ্লক পদ্ধতি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে । আদা চাষকে বাণিজ্যিক পরিসরে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। এছাড়া দেশি হাঁস  এবং ছাগল পালনের দিকেও নজর দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমার স্বপ্ন হলো, আমার মত আরও ১০ জন যুবক যেন উদ্যোক্তা হতে পারে। আমি চাচ্ছি আমার অভিজ্ঞতা তাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে।” জুয়েল আহমেদের এই পথচলা অনেকের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে। নীলফামারীসহ আশেপাশের এলাকায় অনেকে তাকে অনুসরণ করে নিজেরাই উদ্যোগ গ্রহণ শুরু করছেন। 

জুয়েল আহমেদ আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন, ইচ্ছা শক্তি, পরিশ্রম আর পরিকল্পনা থাকলে নিজের অবস্থান নিজেই তৈরি করা যায়। সাংবাদিকতা পেশা থেকে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা তার এই গল্প শুধুমাত্র একটি জীবনের পরিবর্তন নয়, বরং একটি এলাকার অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি। একজন মানুষ যখন নিজের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং আত্মবিশ্বাস দিয়ে পরিবর্তনের পথে হাঁটে, তখন তার গল্প হয়ে ওঠে শত শত মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস। জুয়েল আহমেদ ঠিক সেই উদাহরণ—যিনি কেবল নিজে বদলাননি, বদলে দিয়েছেন চারপাশের অনেক কিছুই। নিজের পরিশ্রম, মেধা ও উদ্যম দিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি স্বনির্ভর জীবনের পথ। এক সময়ের পেশাদার সাংবাদিক জুয়েল আজ একজন সফল উদ্যোক্তা।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com